১৩ বছরের মধ্যে প্রথমবার খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়াল

মূল্যস্ফীতি
স্টার ফাইল ফটো

বাংলাদেশে ১৩ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো এ বছরের জুলাইয়ে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৪ শতাংশ ছাড়িয়েছে। দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে এ তথ্য সামনে এলো।

খাদ্য মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর একটি কারণ হলো কয়েক সপ্তাহ ধরে চলা বিক্ষোভ। এসময় দেশব্যাপী সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে। ওই বিক্ষোভ গণঅভ্যুত্থানে রূপ নিলে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতন হয়।

গতকাল বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, জুলাইয়ে খাদ্য-বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতিসহ ভোক্তা মূল্য সূচক আগের মাসের তুলনায় ১ দশমিক ৯৪ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।

মূল্যস্ফীতি মধ্যম পর্যায়ে থাকলে মানুষ মানিয়ে চলতে পারে। কিন্তু উচ্চ মূল্যস্ফীতি নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে। কারণ তাদের ক্রয় ক্ষমতা কমে যায়। এতে তারা নিজেদের সঞ্চয় ভাঙাতে বাধ্য হন।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, 'জুলাই ছিল অস্থিতিশীল ও অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মাস। শাটডাউন, কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের কারণে সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। যার প্রভাব পড়েছে বিভিন্ন বাজারে।'

শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনামলের অবসানের পর সম্প্রতি বাংলাদেশ একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করেছে। এরপর মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশ করেছে বিবিএস।

দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি উচ্চ পর্যায়ে আছে। ২০২৩ সালের মার্চ থেকে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে।

যদিও অর্থনীতিবিদরা জুলাইয়ে পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য সরবরাহ ব্যবস্থাকে দায়ী করেছেন। তবে, তারা পরিসংখ্যান ব্যুরোর অতীতের অনেক অপ্রতুল তথ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে কম দেখানো হয়েছিল। অথচ প্রকৃত তথ্য আরও বেশি হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।

অর্থনীতিবিদরা এখন সরকারের কাছে প্রকৃত মূল্যস্ফীতির তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছেন।

মূলত গ্রাম ও শহর, দেশের সব ধরনের বাজারে পণ্যের দাম বেড়েছে। খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও বেড়েছে, তবে তা খাদ্য মূল্যস্ফীতির চেয়ে অনেক ধীর গতিতে।

জাহিদ হোসেন বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মূল্য বৃদ্ধিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের চাহিদার ব্যাপারে আগেই সতর্ক হতে হবে।

তার ভাষ্য, 'বাজার খোলা থাকলেও বাজারের কার্যকারিতা ও পণ্যের প্রাপ্যতা নিশ্চিত না হলে মানুষ মজুত করার চেষ্টা করবে, এটাই স্বাভাবিক। এতে দামের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি হতে পারে।'

তিনি মনে করেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির একটি কারণ হতে পারে 'নির্ভীকভাবে সত্য তথ্য প্রকাশ'। কারণ পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এই পরিসংখ্যান প্রকাশে বিবিএস হয়তো কোনো বাধার মুখে পড়েনি।

জাহিদ হোসেনের সঙ্গে একমত পোষণ করেন সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক সেলিম রায়হান। তিনিও শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে মূল্যস্ফীতির তথ্যে কারসাজির অভিযোগ করেন।

তিনি বলেন, 'পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করেনি। তারা সরকারকে রাজনৈতিক সুবিধা দিতে 'কম মূল্যস্ফীতি' দেখিয়েছে। আমরা সরকারের কাছেও বিষয়টি উত্থাপন করেছি।'

অধ্যাপক সেলিম রায়হান জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার বিষয়টিও সামনে আনেন।

তিনি মনে করেন, সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ায় সবার আগে উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপ পড়েছে নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের ওপর।

Comments

The Daily Star  | English
explosions at Jammu airport today

Explosions at Jammu airport in Indian Kashmir

Sirens ring out in Jammu, projectiles in night sky; Islamabad says Indian drones earlier entered its airspace

1h ago