গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মতো গীতিকার আর আসবে না: খুরশীদ আলম

গাজী মাজহারুল আনোয়ার বাংলাদেশের কিংবদন্তী গীতিকার। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য এই গীতিকার মারা গেছেন রোববার সকালে।
গাজী মাজহারুল আনোয়ার
গীতিকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ফাইল ছবি

গাজী মাজহারুল আনোয়ার বাংলাদেশের কিংবদন্তী গীতিকার। স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য এই গীতিকার মারা গেছেন রোববার সকালে।

গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রসঙ্গে কথা হয় সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলমের সঙ্গে।

খুরশীদ আলম
সংগীতশিল্পী খুরশীদ আলম। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭০ সালে দুজনের পরিচয়। খুরশীদ আলম বলেন, 'ওই বছর সাধারণ মেয়ে নামের একটি সিনেমায় কণ্ঠ দিই। গানটি লিখেছিলেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ডিম মারো ডিম মারো গানটি নায়ক জাফর ইকবালের লিপে ব্যবহার হয়েছিল।'

'তার লেখা দ্বিতীয় গান করি মানুষের মন সিনেমায়। ছবি যেন শুধু ছবি নয়-রাজ্জাকের লিপে গানটি ব্যবহার হয়েছিল। অসম্ভব জনপ্রিয় হয়েছিল গানটি,' বলেন তিনি।

গাজী মাজহারুল আনোয়ারের লেখা 'ধীরে ধীরে চল ঘোড়া' সে সময় ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল বলে জানান খুরশীদ আলম। তিনি বলেন, 'শাপমুক্তি সিনেমায় গেয়েছিলাম গানটি। আমার ক্যারিয়ারের জন্য গানটির অনেক বড় অবদান আছে।'

'অন্যদিকে সমাধি সিনেমায় তার লেখা একটি গান করেছিলাম। গানটি হলো-মা গো মা ওগো মা। সমাধি সিনেমা সুপারহিট হওয়ার জন্য এই গানটির অনেক ভূমিকা ছিল। খুব দরদ দিয়ে গানটি গেয়েছিলাম,' বলেন খুরশীদ আলম।

'নায়ক রাজ্জাক পরিচালিত অনন্ত প্রেম সিনেমায় তার লেখা গানটির কথা আজও মনে পড়ে। 'ও চোখে চোখ পড়েছে যখনই' গানে আমি ও সাবিনা ইয়াসমিন কণ্ঠ
দিয়েছিলাম। অসাধারণ কথার এই গানটি এখনো শোনা যায় বিভিন্ন জায়গায়।'

খুরশীদ আলম বলেন, 'তার লেখা অনেক গান করেছি। গীতিকার হিসেবে জাদুকরী মেধা ছিল তার। নইলে এতগুলো ভালো গান লিখতে পারতেন না। বেশিরভাগ গানই ছিল শ্রোতাপ্রিয়।'

'শুধু কি সিনেমার গান লিখতেন? দেশের গানের ক্ষেত্রেও অতুলনীয় ছিলেন তিনি।
তার মতো করে এত সরল ভাষায় ও সুন্দর ভাষায় দেশের গান কয়জন লিখতে পেরেছেন। কালজয়ী গানের গীতিকারকে হারালাম। তার গান তাকে বাঁচিয়ে রাখবে যুগ যুগ ধরে।'

তিনি বলেন, 'পরিচয়ের পর থেকে আমার সঙ্গে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মধুর সম্পর্ক ছিল সারাজীবন। সিনেমার গানে এদেশে তিনি অপ্রতিদ্বন্দ্বী। এমন গীতিকার আর হবে না। এমন সৃষ্টিশীল মানুষ এই অঙ্গনে আর হবে না।'

'একটি উদাহরণ দিই। গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্টুডিওতে বসে আছেন। তার কাছে একজন এসে গান চাইলেন। পাঁচ মিনিটের মধ্যে গান লিখে দিলেন। একটু পর আরেকজন এসে আরেকটি গান চাইলেন। তিনি লিখে দিলেন। এরপর কেউ হয়ত সিনেমার কাহিনী চাইলেন। একটু বসিয়ে রেখে থিম দিয়ে দিলেন। এই হচ্ছেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার।'

'এদেশে গাজী মাজহারুল আনোয়ারের মতো গীতিকার আর আসবে না। গাজী মাজহারুল আনোয়ার একজনই। ভারতীয়দের মধ্যেও এমন মেধাবী গীতিকার পাওয়া যাবে না। হতে পারে বড় কথা বলছি। কিন্তু এটা সত্যি,' বলেন তিনি।

খুরশীদ আলম জানান, গত আগস্ট মাসেই গাজী মাজহারুল আনোয়ারের সঙ্গে তার শেষ দেখা হয়েছিল শিল্পকলা একাডেমিতে। আলম খানের স্মরণসভায়।

'সেদিন কি জানতাম ওটাই শেখ দেখা হবে?'

Comments