এনএলডিসির কথা না মানাই গ্রিড বিপর্যয়ের মূল কারণ: তদন্ত কমিটি

বিদ্যুৎ বিপর্যয়
গত ৪ অক্টোবর জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকা ৪-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

গত ৪ অক্টোবর জাতীয় গ্রিড বিপর্যয়ের প্রধান কারণ হিসেবে ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টারের (এনএলডিসি) নির্দেশনা না মানার কথা উল্লেখ করেছে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) তদন্ত কমিটি।

এটিসহ গ্রিড বিপর্যয়ের পেছনে ৩ কারণের কথা জানিয়েছে কমিটি।

তাদের মতে, এনএলডিসির নির্দেশনা অনুযায়ী বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো লোড না কমানোই সেদিনের গ্রিড বিপর্যয়ের মূল কারণ।

ন্যাশনাল লোড ডেসপ্যাচ সেন্টার বা এনএলডিসি হলো দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন ও বিতরণের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে সমন্বয়কারী সংস্থা।

অন্যান্য কারণের মধ্যে তারা বলেছেন, ঘোড়াশাল গ্রিড সাবস্টেশনের সক্ষমতার বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা ও চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি স্টিল কারখানা সরাসরি জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করায় চাহিদা বেড়ে যাওয়া।

কমিটির একাধিক সদস্য দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত রোববার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।

কমিটির এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এনএলডিসি সেদিন ডিপিডিসি, ডেসকো, পিডিবি ও পল্লী বিদ্যুৎসহ বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে তাৎক্ষণিকভাবে লোডশেডিং করে চাহিদা কমাতে বলেছিল। কিন্তু লোডশেডিং না দেওয়ায় দুপুর ২টা ৫ মিনিটে লোড নিতে না পেরে গ্রিড বিপর্যয় হয়।'

তদন্ত কমিটির প্রধান ও পিজিসিবির নির্বাহী পরিচালক ইয়াকুব এলাহী চৌধুরী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিতরণ কোম্পানিগুলো নির্ধারিত সময়ে লোড না কমানোয় গ্রিড বিপর্যয় হয়।'

'সেদিন ৩টি ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু, সবকিছুর পেছনে মূল কারণ হলো এনএলডিসির নির্দেশ না মানা,' যোগ করেন তিনি।

তবে এ বক্তব্য মানতে নারাজ বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো। পিজিসিবির এ দাবি যাচাই করতে ও ৪ অক্টোবরের গ্রিড বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে ৪ সংস্থা পৃথক কমিটি গঠন করেছে।

এনএলডিসি ও বিতরণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে গ্রিড বিপর্যয় হয়েছিল। পিজিসিবির তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তাও ডেইলি স্টারকে এ কথা জানান।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, 'ঘোড়াশাল গ্রিড সাবস্টেশনের সরবরাহের সক্ষমতা প্রায় ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। ৪ অক্টোবর তারা জাতীয় গ্রিডে প্রায় ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছিল। এর ফলে ট্রিপ করেছে।'

তিনি জানান, জাতীয় গ্রিডের পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার পর, উদ্বৃত্ত চাহিদা তো ছিলই, বেসরকারি স্টিল মিলের কারণে চাহিদা আরও বেড়ে যায়। তখন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোকে দিয়ে লোডশেডিং করাতে পারেনি এনএলডিসি। ফলে গ্রিড বিপর্যয় হয়ে একে একে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো 'ট্রিপ' করতে থাকে।

গ্রিড বিপর্যয়ের ফলে সেদিন দেশের অর্ধেকের বেশি অংশ ৪-৮ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল।

এ ঘটনায় গঠিত পিজিসিবির তদন্ত কমিটি গত রোববার কর্তব্যে অবহেলার কারণে ২ প্রকৌশলীকে বরখাস্ত করে।

এ দিকে বিতরণ সংস্থাগুলোর দাবি, এনএলডিসির পক্ষেও সেদিন লোড কমানো সম্ভব ছিল।

রাজধানীর বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থা ডিপিডিসি ও ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ডেইলি স্টারকে জানান, তারা সবসময় এনএলডিসির নির্দেশনা মেনে চলেন।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লোডশেডিং না করার কারণে এমন ব্ল্যাকআউটের ঘটনা ঘটেছে বলে শুনিনি।'

ডেসকোর এমডি মো. কাউসার আমীর আলী বলেন, 'এনএলডিসির নির্দেশনা না মানার ঘটনা আগে ঘটেনি। কমিটি আরও বিস্তারিত খতিয়ে দেখবে।'

পিজিসিবির তদন্ত কমিটি ছাড়াও বিদ্যুৎ বিভাগ আরেকটি কমিটি গঠন করেছিল। তবে ওই কমিটি এখনো তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়নি।

Comments

The Daily Star  | English

Early US intel assessment suggests strikes on Iran did not destroy nuclear sites: CNN

Israeli Prime Minister Benjamin Netanyahu said Israel had agreed to Trump's ceasefire proposal

2d ago