গাজার ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ’ নেওয়ার অঙ্গীকার করলেন নেতানিয়াহু

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ছবি: এএফপি

ইসরায়েল সোমবার ঘোষণা দিয়েছে, তারা গাজার পুরো ভূখণ্ডের নিয়ন্ত্রণ নেবে। এদিন গাজার সম্পূর্ণ অঞ্চলজুড়ে হামলা আরও তীব্র হয়।

একইসঙ্গে গত দুই মাসেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো সীমিত পরিমাণে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হয়েছে। তবে জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় 'সাগরে এক ফোঁটা জল' মাত্র।

আজ মঙ্গলবার এএফপির প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে। 

প্রতিবেদন মতে, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েলের অবরোধের কারণে গাজায় কোনো রকম ত্রাণ প্রবেশ করতে পারছিল না।

গাজার জাবালিয়ায় একটি লঙ্গরখানা থেকে শরণার্থীদের খাবার দেওয়া হচ্ছে। ছবি: এএফপি
গাজার জাবালিয়ায় একটি লঙ্গরখানা থেকে শরণার্থীদের খাবার দেওয়া হচ্ছে। ছবি: এএফপি

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) সতর্ক করেছে, গাজার ২০ লাখ মানুষের এখন অনাহারের মুখে পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সংস্থাটির মহাপরিচালক তেদরোস আধানোম গেব্রিয়েসুস বলেন, 'টনের পর টন খাদ্যসামগ্রী গাজা থেকে মাত্র কয়েক মিনিট দূরে সীমান্তে আটকে আছে।'

সোমবার ইসরায়েল ঘোষণা দেয়, তারা সীমিত সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিয়েছে এবং পাঁচটি ট্রাক 'শিশু খাদ্যসহ কিছু ত্রাণসামগ্রী' নিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। তবে জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার জানান, নয়টি ট্রাককে প্রবেশের ছাড়পত্র দেওয়া হলেও 'এটি বিপর্যস্ত বাস্তবতার তুলনায় কিছুই না।'

জাতিসংঘের মুখপাত্র স্তেফান দুজারিক বলেন, গাজার ভেতরে কোনো ত্রাণ এখনও বিতরণ করা যায়নি। কারণ, সময়টা ছিল রাত এবং নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে সে সময় অভিযান চালানো সম্ভব হয়নি।

গাজার ভেতরে সংকট এমনই চরমে উঠেছে যে, আন্তর্জাতিক মহল সরাসরি ইসরায়েলকেই দায়ী করছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও কানাডার নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের যুদ্ধ পরিচালনার সমালোচনা করে বলেন, গাজায় ইসরায়েলের 'উগ্র কর্মকাণ্ড' এবং 'একেবারে অপ্রতুল' সহায়তা সরবরাহ মেনে নেওয়া যায় না। তারা হুঁশিয়ার করে বলেন, ইসরায়েল তার বর্তমান কৌশল পরিবর্তন না করলে 'কঠোর পদক্ষেপ' নেওয়া হবে।

নেতানিয়াহু তাদের এই বিবৃতিকে 'হামাসের জন্য বড় প্রাপ্তি' বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবু তিনি জানিয়েছেন, ইসরায়েল যুদ্ধ থেকে পিছু হটবে না।

ভিডিও বার্তায় নেতানিয়াহু বলেন, 'লড়াই চলছে, আমরা অগ্রসর হচ্ছি। গাজার প্রতিটি ইঞ্চি আমরা দখলে নেব। সফল হতে হলে আমাদের এমনভাবে লড়তে হবে, যাতে কেউ আমাদের থামাতে না পারে।'

এদিন গাজার খান ইউনিস শহরের আশপাশের এলাকাগুলো থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে যেতে নির্দেশ দেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। একে তারা 'অভূতপূর্ব হামলার প্রস্তুতি' বলেছে। গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগ জানায়, সোমবার সারাদিনে গাজার বিভিন্ন জায়গায় ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৯১ জন নিহত হয়েছেন। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী দাবি করেছে, তারা গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় ১৬০টি 'সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে' হামলা চালিয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর (ওএইচসিএইচআর) ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে 'আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন' এবং 'জাতিগত নির্মূলের শামিল' হিসেবে বর্ণনা করেছে।

একটি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবার। তারা জানে না তাদের পরবর্তী গন্তব্য কি হবে। ছবি: এএফপি
একটি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি পরিবার। তারা জানে না তাদের পরবর্তী গন্তব্য কি হবে। ছবি: এএফপি

এর আগেও ইসরায়েল বলেছে, গাজা অবরোধের উদ্দেশ্য ছিল হামাসকে চাপে ফেলা। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলার জেরে এই যুদ্ধ শুরু হয়। তবে জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থার মতে, গাজায় এখন খাবার, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও ওষুধের চরম সংকট চলছে।

অন্যদিকে ইসরায়েলের মন্ত্রীদের ভেতরেই ত্রাণ ইস্যুতে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কট্টর ডানপন্থী জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেনগভি বলেছেন, 'আমাদের জিম্মিদের তো কোনো সহায়তা দেওয়া হয় না। তাহলে কেন আমরা শত্রুদের খাবার দেব?" তবে আরেক মন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মৎরিচ বলেছেন, সীমিত সহায়তা দিয়ে 'সাধারণ মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে, যাতে আমাদের মিত্ররা কূটনৈতিকভাবে আমাদের পাশে থাকে।'

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, 'অনেক মানুষ না খেয়ে আছে।' যদিও তিনি এখনো নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে বিবেচিত।

এদিকে ফ্রান্স, ব্রিটেন, কানাডা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়াসহ ২২টি দেশ যৌথ বিবৃতিতে বলেছে, 'গাজার জনগণ অনাহারের মুখে। তাদের দ্রুত মানবিক সহায়তা দিতে হবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Consensus talks: Poor progress may delay July Charter

Political parties have failed to reach an agreement on any reform proposals for the fifth consecutive day of the consensus talks.

10h ago