কেন ইরান বলছে—‘মার্কিন হামলায় বড় ক্ষতি হয়নি’

ম্যাক্সার স্যাটেলাইটের ছবিতে গত ১৯ জুন ফোরদো পরমাণু স্থাপনার কাছে ট্রাক ও বুলডোজারের সারি দেখা যায়। ছবি: রয়টার্স

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ইরানে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। হামলায় ব্যবহার করা হয়েছে বি-টু বোমারু বিমান। বহন করা হয়েছে বাঙ্কার-বিধ্বংসী ভয়ঙ্কর বোমা।

আজ রোববার ভোরে যুক্তরাষ্ট্র আচমকা ইরানের ফোরদো, নাতাঞ্জ ও ইস্পাহানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ফোরদো তেহরানের দক্ষিণে পাহাড়ের গভীরে। এটি ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তবে হামলায় ওই স্থাপনার ক্ষতির মাত্রা এখনো জানা যায়নি।

ধারণা করা হয়—ফোরদো যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সকে সংযুক্তকারী চ্যানেল টানেলের চেয়েও গভীরে অবস্থিত। এই স্থাপনাটি এতটাই গভীরে যে, একে ধ্বংস করতে কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের কাছে থাকা 'জিবিইউ-৫৭ ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনিট্রেটর (এমওপি)' নামের বিশেষ বাঙ্কার-বিস্ফোরক ব্যবহার করেছে। বোমার ওজন প্রায় ১৩ হাজার কেজি। বিশেষজ্ঞদের মতে এটি ৬০ ফুট কংক্রিট বা ২০০ ফুট মাটি ভেদ করে বিস্ফোরণ ঘটাতে সক্ষম।

ম্যাক্সার স্যাটেলাইটের ছবিতে ২০ জুন দেখা যায় ফোরদো পরমাণু স্থাপনা থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে ট্রাকের সারি। ছবি: রয়টার্স

ফোরদোর টানেলগুলো অনেক গভীরে থাকায়, এমওপি বোমা দিয়ে সফলতার শতভাগ নিশ্চয়তা না থাকলেও এটিই একমাত্র বোমা যা এর কাছাকাছি আঘাত হানতে পারে। মার্কিন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামলায় এমওপি বোমা ব্যবহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

হামলায় ক্ষতি কতটা?

মার্কিন হামলার প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত এখনো স্পষ্ট না হলেও, পরমাণু স্থাপনায় হামলার কারণে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে ইরানের পারমাণবিক শক্তি সংস্থা।

এ হামলাকে আন্তর্জাতিক আইনের 'বর্বরোচিত লঙ্ঘন' হিসেবে উল্লেখ করে সংস্থাটি বলছে, 'পারমাণবিক স্থাপনায় অবৈধ মার্কিন হামলার পর, মাঠের ও বিকিরণের তথ্যে দেখা যাচ্ছে—কোনো দূষণের তথ্য রেকর্ড করা হয়নি। এই স্থাপনাগুলোর আশেপাশের বাসিন্দাদের কোনো বিপদ নেই। নিরাপত্তা ব্যবস্থা স্থিতিশীল অবস্থায় আছে।'

সৌদি আরব ও জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা বলছে, হামলার পর রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বাড়েনি।

ইরানের রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেলের ডেপুটি পলিটিক্যাল ডিরেক্টর হাসান আবেদিনি বলেছেন, ইরান 'কিছু সময় আগেই' এই তিন পারমাণবিক স্থাপনা খালি করে ফেলেছিল।'

রাষ্ট্রীয় টিভিকে তিনি বলেন, 'গুরুত্বপূর্ণ উপাদানও আগেই সরিয়ে নেওয়ায়' ইরানের বড় কোনো ক্ষতি হয়নি।

তার এ কথার কথার সঙ্গে মিলে যায় রয়টার্স প্রকাশিত ম্যাক্সার স্যাটেলাইটের তিনটি ছবি। ছবিতে দেখা যায়, গত ১৯ জুন ফোরদো পরমাণু স্থাপনার বাইরে ট্রাক ও বুলডোজারের সারি। ২০ জুনের ছবিতে ওই পরমাণু স্থাপনা থেকে ট্রাকগুলোকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায়।  

পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলায় কোনো হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি বলে জানিয়েছে ইরানের রেড ক্রিসেন্ট।

ইরান রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান পীর হোসেন কোলিভান্দ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন, 'গত রাতে পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলায় কেউ হতাহত হয়নি।'

তবে এক টেলিভিশন ভাষণে ট্রাম্প দাবি করেছেন, 'পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনাগুলো সম্পূর্ণরূপে ও পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে।'

সাবেক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক কিমিট কিছুটা সতর্ক মন্তব্য করে বলেছেন, 'এটি চিরতরে ধ্বংস হয়ে গেছে এমনটা বলার উপায় নেই।'

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি বলেছেন, এই হামলার 'চিরস্থায়ী পরিণতি' হবে এবং ইরান 'সব বিকল্প খোলা রেখেছে'।

Comments

The Daily Star  | English
Domestic violence killing women in Bangladesh

Domestic violence in Bangladesh: When numbers speak of the silence

When we are informed that 133 women have been killed by their husbands in seven months, it is no longer just a number.

7h ago