শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন

শিশুর যত্ন বলতে আমরা সাধারণত শিশুর শারীরিক যত্নকেই বুঝে থাকি। বাচ্চা ঠিকমত খাচ্ছে কিনা, ঘুমাচ্ছে কিনা, বয়সের স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে যেন চিন্তার শেষ নেই অভিভাবকদের। সে তুলনায় শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে তেমন একটা মনোযোগ দেওয়া হয় না। কিন্তু শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন
ছবি: ইউনিসেফ

শিশুর যত্ন বলতে আমরা সাধারণত শিশুর শারীরিক যত্নকেই বুঝে থাকি। বাচ্চা ঠিকমত খাচ্ছে কিনা, ঘুমাচ্ছে কিনা, বয়সের স্বাভাবিক বিকাশ হচ্ছে কিনা তা নিয়ে যেন চিন্তার শেষ নেই অভিভাবকদের। সে তুলনায় শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে তেমন একটা মনোযোগ দেওয়া হয় না। কিন্তু শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও যত্নবান হওয়া প্রয়োজন।

কীভাবে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া যায় তা নিয়েই আজকের আলোচনা।

গুরুত্ব দেওয়া

মনোবিদরা বলেন, শিশুর মনোজগৎ এবং বড়দের জগতের মধ্যে একটা বিপরীতমুখী চিন্তার প্রাচীর থাকে। এই প্রাচীর ভাঙার কাজ শিশুর নয়, বড়দেরই। বড়দের কাছে যে বিষয় 'অমূলক' বা 'কাল্পনিক' বলে মনে হয়, কোনো শিশুর কাছে সেটিই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে মনে হতে পারে। একই ভাবে বড়রা শিশুর যে অনিচ্ছা বা ভয়কে 'অমূলক' বা 'হালকা' বলে ভাবেন তা হয়তো শিশুর কাছে ভীতিকর হতে পারে। তাই ছোট্ট শিশুর কোনো ইচ্ছা, ভীতি অথবা আগ্রহকে যথাসম্ভব গুরুত্ব দিতে হবে।

নিজের ইচ্ছা শিশুর ওপর চাপিয়ে না দেওয়া

শিশুদের সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাগুলোর একটা হচ্ছে শিশুরা খালি কলসির মতো। যাকে শিক্ষাদীক্ষায়, জ্ঞানে ও বুদ্ধিতে 'পূর্ণ' করে তোলার দায়িত্ব বড়দের উপর অর্পিত। যে কারণে শিশুর মাঝে নিজেদের ইচ্ছাকে চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতা অভিভাবকদের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু মনে রাখতে হবে শিশুদের মানসিক বিকাশ শুরু হয়ে যায় খুব ছোটবেলা থেকেই। শিশুর স্বাভাবিক মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। নিজেদের আবেগ, চাওয়া পাওয়া কোনোভাবেই তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। তারা যেমন সেভাবেই বিকশিত হতে দিতে হবে তাদের।

অন্যের সঙ্গে তুলনা না করা

প্রতিটি মানুষ যেমন আলাদা, শিশুর বেলায়ও তাই। সব শিশুকে একই ছাঁচে ফেলে তার সঙ্গে অন্য শিশুর তুলনা করা যাবে না। কারণ এতে করে ছোট থেকেই তার ভেতর হীনমন্যতা জন্ম নেবে। তাকে যেমন ভালো কাজের জন্য উৎসাহিত করতে হবে, তেমনি দুষ্টুমি করলেও অতিরিক্ত শাসন করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, দুষ্টুমি, চঞ্চলতা শিশুর সুস্থ বিকাশেরই অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

শিশুর ইচ্ছা ও স্বাধীনতা মূল্যায়ন

কোনো কিছু শেখার পেছনে প্রত্যেক শিশুর সহজাত প্রবৃত্তি ও প্রবল আগ্রহ কাজ করে। সেই আগ্রহের প্রতি কোনোরকম অনাগ্রহ দেখানো যাবে না। আপনার শিশুটি যদি বলে, সে আঁকতে চায় তাকে আঁকতে দেন। আপনি পড়াতে চাইছেন বলে তার এখন পড়তে বসতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। তার ইচ্ছা ও স্বাধীনতা মূল্যায়ন করলে শিশুর মন ভালো থাকবে। মানসিক বিকাশ সুস্থ ও স্বাভাবিক হবে।

ভুল করতে দেওয়া

শিশুদের ভুল করতে দিতে হবে। সবসময় তাকে সংশোধনের দিকে যাবেন না। শিশুরা যদি ভুল না করে তবে ভবিষ্যতে তারা জীবন, সময়, টাকা ও কঠোর পরিশ্রমের গুরুত্ব বুঝতে সক্ষম হবে না। ভুলের মাধ্যমে তারা বুঝতে শিখবে কোন কাজ করা উচিত, কোনটি উচিত নয়। তাদের নিজের কাজ ও দায়িত্বের ভার নিজের কাঁধে নিতে শিক্ষা দিতে হবে। এতে তাদের শুরুতে কিছুটা সমস্যা হলেও তারা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেককিছু বুঝতে শিখবে।

প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা

'তোমাকে বিকেল বেলা পার্কে নিয়ে যাবো'- কোনোকিছু না ভেবেই আপনি শিশুকে এই কথা বলে ফেললেন। শিশুটি সারাদিন অপেক্ষা করে আছে কখন আপনি আপনার কথা রাখবেন। কিন্তু আপনি তাকে পার্কে নিয়ে গেলেন না। 'আরেকদিন নিয়ে যাবো' বলে শিশুকে আবারও মিথ্যে আশ্বাস দিলেন। আপনি দেখছেন, আপনার সন্তান কিছুক্ষণ মন খারাপ করে অন্য কোনো খেলায় ডুবে যাচ্ছে। ভাবছেন সে আপনার এই 'প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের' ঘটনা ভুলে গেছে। কিন্তু সত্যটা হলো, বাচ্চাদের মনে এসব ঘটনা খুবই প্রভাব ফেলে। যার প্রতিফলন শৈশবে প্রতীয়মান না হলেও পরে দেখতে পাওয়া যায়। শিশুকে কোনো প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে ভেবেচিন্তে দিন। তা নাহলে আস্তে আস্তে শিশুটি আপনার কথার ওপর ভরসা হারাতে আরম্ভ করবে।

শিশুর শারীরিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতিও যত্নবান হওয়া জরুরি। এতে করে ভবিষ্যৎ জীবনের চলার পথ সুগম হবে, দেশ ও দশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে।

তথ্যসূত্র: ব্রিটানিকা, মানসিক স্বাস্থ্য ফাউন্ডেশন, ইউনিসেফ

 

Comments