ইফতারে হালিম কি স্বাস্থ্যসম্মত?

রমজানে সারাদিন রোজা রাখার পর শরীর দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধারের জন্য পুষ্টিকর খাবার চায়। হালিম এমন একটি খাবার যা বহু বছর ধরে ইফতারের সময় জনপ্রিয়। ইফতারে হালিম খেতে পছন্দ করেন অনেকেই। কিন্তু ইফতারে হালিম খাওয়া স্বাস্থ্যসম্মত কি না সেটা নিয়ে অনেকের মনেই প্রশ্ন আছে।
চলুন এ প্রশ্নের উত্তর জেনে নিই এমএইচ শমরিতা মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের পুষ্টিবিদ আঞ্জুমান আরা শিমুলের কাছ থেকে।
তিনি জানান, হালিম ডাল, গম, মাংস, মসলা ও ঘি দিয়ে তৈরি হয়, যা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। তবে এটি স্বাস্থ্যসম্মত কি না তা নির্ভর করে কীভাবে এটি তৈরি করা হয়েছে এবং কতটুকু খাওয়া হচ্ছে তার ওপর। হালিম একটি পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যকর খাবার, বিশেষ করে যদি এটি ঘরে তৈরি হয় এবং তেলে-ঝালে ভারি না হয়। এটি দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করে, দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। তবে এটি ক্যালোরিযুক্ত খাবার হওয়ায় অতিরিক্ত পরিমাণে খেলে ওজন বৃদ্ধি, হজমের সমস্যা বা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই স্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করে পরিমাণমতো খেলে হালিম ইফতারের জন্য একটি চমৎকার খাবার হতে পারে। সাধারণভাবে, একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি ইফতারে ১ কাপ (প্রায় ১৫০-২০০ গ্রাম) হালিম খেতে পারেন, যা স্বাস্থ্যসম্মত পরিমাণ হিসেবে ধরা যায়।
হালিমের পুষ্টিগুণ
হালিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও খনিজ উপাদান থাকে, যা শরীরের জন্য উপকারী।
১. মাংস (গরু, খাসি বা মুরগি)
প্রোটিনের অন্যতম উৎস যা পেশি গঠনে সাহায্য করে। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। আয়রন সরবরাহ করে, যা রক্তস্বল্পতা রোধে সহায়ক।
২. ডাল (মসুর, মুগ)
ডালে উচ্চমাত্রার ফাইবার রয়েছে, যা হজমের জন্য ভালো। প্রোটিন ও খনিজ উপাদান (যেমন: ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস) সরবরাহ করে। রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
৩. গম ও চাল
শক্তি প্রদানকারী কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস। ফাইবার সরবরাহ করে, যা দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪. মসলা (জিরা, ধনে, গরম মসলা, আদা-রসুন, পেঁয়াজ)
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং হজমে সহায়তা করে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা দেহের কোষের ক্ষতি কমায়।
৫. ঘি ও তেল
ভালো ফ্যাটের উৎস হলেও বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হলে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে।
ইফতারে হালিমের উপকারিতা
ইফতারে হালিম খাওয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা রয়েছে।
দ্রুত শক্তি পুনরুদ্ধার করে
হালিমে গম, চাল ও ডালের মতো জটিল কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা শরীরকে দ্রুত শক্তি সরবরাহ করে এবং দীর্ঘক্ষণ স্থায়ী হয়।
দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে
প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘক্ষণ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ফলে রাতের খাবারে অতিরিক্ত খাওয়ার প্রবণতা কমে।
পেশি গঠনে সহায়ক
মাংস ও ডালে থাকা প্রোটিন শরীরের পেশি গঠনে সাহায্য করে, যা রোজার সময় শক্তিশালী ও কর্মক্ষম থাকতে সহায়তা করে।
ইমিউনিটি বুস্ট করে
হালিমে থাকা মসলা, বিশেষ করে আদা, রসুন, জিরা, ধনে ও হলুদ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং ঠান্ডা-কাশির মতো সমস্যা থেকে সুরক্ষা দেয়।
হালিম রান্নার ক্ষেত্রে সতর্কতা
হালিম যদি স্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করা হয়, তবে হালিম ইফতারের জন্য একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
কম তেল ও ঘি ব্যবহার করুন
অনেক দোকানের হালিম অতিরিক্ত ঘি ও তেলযুক্ত হয়, যা ওজন বৃদ্ধি ও কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে। তাই বাড়িতে তৈরি হালিমে কম পরিমাণে তেল ব্যবহার করা ভালো।
বেশি মসলা পরিহার করা
অতিরিক্ত ঝাল ও মসলা থাকা হালিম এসিডিটি ও হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তাই মশলা পরিমাণমতো ব্যবহার করা উচিত।
লবণের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করুন
বেশি লবণ উচ্চ রক্তচাপ ও পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ায়, তাই হালিমে অতিরিক্ত লবণ দেওয়া উচিত নয়।
স্বাস্থ্যকর শাকসবজি যোগ করুন
গাজর, ক্যাপসিকাম, পালং শাক বা অন্যান্য সবজি যোগ করলে হালিমের ফাইবার ও ভিটামিন বৃদ্ধি পাবে, যা শরীরের জন্য ভালো।
দোকানের পরিবর্তে ঘরে তৈরি করুন
বাইরের হালিমে অতিরিক্ত তেল, মসলা ও প্রিজারভেটিভ থাকতে পারে, যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। তাই ঘরে স্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি করা ভালো।
কারা বেশি পরিমাণে হালিম এড়িয়ে চলবেন?
হালিম সাধারণত স্বাস্থ্যকর, তবে কিছু মানুষের জন্য এটি কম পরিমাণে খাওয়া ভালো।
যারা ওজন কমানোর চেষ্টা করছেন
হালিম উচ্চ ক্যালরিযুক্ত খাবার, তাই ওজন কমানোর চেষ্টা করলে কম পরিমাণে খাওয়া উচিত।
উচ্চ রক্তচাপ রোগীরা
বেশি লবণযুক্ত বা তৈলাক্ত হালিম রক্তচাপ বাড়াতে পারে। তাই নিয়ন্ত্রিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
যাদের হজমজনিত সমস্যা আছে
অতিরিক্ত মসলা ও তেলযুক্ত হালিম গ্যাস্ট্রিক ও বদহজমের সমস্যা বাড়াতে পারে।
ডায়াবেটিস রোগীরা
হালিমে থাকা কার্বোহাইড্রেট রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়াতে পারে, তাই ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে খাওয়া উচিত।
Comments