খাবার অপচয় এড়িয়ে চলবেন যেভাবে

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান বিশ্বে খাদ্য অপচয় একটি বড় সংকট। খাদ্য অপচয়ের প্রভাব একদম সরাসরি আমাদের উপর না পড়লেও, এর সুদূরপ্রসারী পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক ক্ষতিকর প্রভাবের বাইরে আমরা কেউই নেই।

ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রামের ২০২০ সালের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর মোট উৎপাদিত খাদ্যের এক-তৃতীয়াংশই নষ্ট হয়। যার পরিমাণ প্রায় ১৩০ কোটি টন। এই অপচয়ে একদিকে কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ পানি ও জ্বালানির অপচয় হচ্ছে। সেইসঙ্গে নষ্ট হওয়া খাবার থেকে পরিবেশে বাড়ছে গ্রিন হাউজ গ্যাস। এর অর্থনৈতিক ক্ষতির পাল্লাটাও অনেক ভারি।  

খাদ্য অপচয়ের বড় কারণ

উৎপাদন থেকে খুচরা বাজারে বিক্রির মাঝেই অনেক খাদ্য অপচয় হয়। তবে অপচয়ের আরেকটি বড় ভূমিকা রয়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। সেটি হলো এক বেলার বেঁচে যাওয়া খাবার আর না খাওয়া। জনসংখ্যার অনুপাতে খাবার অপচয়ে উপরের দিকে থাকা দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সে দেশেরই দুই সংস্থা ওয়ানপোল এবং হ্যালোফ্রেশের একটি জরিপে দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ৩৮ শতাংশ ভোক্তাই বেঁচে যাওয়া খাবার না খেয়েই কয়েকদিন পর ফেলে দেয়। এছাড়া ১৯ শতাংশ ভোক্তা জানিয়েছে, বাজার করার সময় তারা প্রয়োজনের চেয়েও বেশি বাজার করে, যা কি না রান্নার আগেই নষ্ট হয়ে যায়।  

আর রান্নার সময় দরকারের চেয়েও বেশি খাবার তৈরির কথা বলেছে জরিপে অংশ নেওয়া ২৫ শতাংশ মানুষ। যাদের অধিকাংশই পরে খাওয়ার জন্য খাবার সংরক্ষণ করে রেখেছিল। কিন্তু পরে আর খাওয়া হয়নি বলে নষ্ট হয়েছে।

কোন খাবারগুলো সবচেয়ে বেশি অপচয় হয়

যে খাবারগুলো রান্নায় যতটুকু লাগে তার চেয়েও অনেক বেশি পরিমাণে কেনা হয়, সেগুলোরই অপচয়ের আশঙ্কা বেশি থাকে। ওই জরিপে কিছু খাবারের নাম বারবার উঠে এসেছে, যা কি না বেশি করে কেনার ফলে দীর্ঘদিন থেকে নষ্ট হয়ে যায়। অপচয় হওয়া খাবার হিসেবে সবচেয়ে বেশিবার যে ১০ খাদ্যের নাম এসেছে সেগুলো হলো-

লেটুস (২৭ শতাংশ)

কলা (২৩ শতাংশ)

দুধ (২১ শতাংশ)

আপেল (২১ শতাংশ)

রুটি (২১ শতাংশ)

অ্যাভোকাডো (১৭ শতাংশ)

টিন/প্যাকেটজাত আইটেম, যেমন মাংস, পনির এবং প্রসেসড ফুড (১৬ শতাংশ)

ডিম (১৬ শতাংশ)

মাংস (১৫ শতাংশ)

গাজর (১৪ শতাংশ)

কীভাবে খাবার অপচয় কমাবেন

নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেছেন যে, খাবারের অপচয় কমাতে আমাদের অর্থাৎ ভোক্তারও বেশ ভূমিকা থাকতে পারে। চলুন খাবার অপচয় কমানোর কিছু টিপস দেখে আসি।

কিনে নয়, কেনার আগেই ভাবুন 

কাঁচা বাজার বা মুদি দোকানে দৈনন্দিন কেনাকাটায় শুধুমাত্র আপনার তালিকায় থাকা পণ্যই কিনুন। অযথা বেশি করে একই উপাদান কেনা এড়িয়ে চলুন। আর যেকোনো কিছু কেনার আগেই নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, এটা আপনি সত্যিই খাবেন কি না। আর সবচেয়ে ভালো হয়, আপনার যদি একটা ডায়েট প্ল্যান থাকে। সেক্ষেত্রে প্রয়োজনের বাইরে বাজার করার আশঙ্কা অনেকটাই কমে আসে। 

দেখতে 'অসুন্দর' ফল-সবজি কিনুন

অনেক ফল বা শাকসবজি কেউ না কেনায় দিনের পর দিন সুপারশপের শেলফে পড়ে থেকে থেকে এক সময় পচে যায়। এমনকি কেনার পরও অনেকে একটু দাগ থাকা বা দেবে যাওয়া ফল বা সবজি ফেলে দেন। অথচ স্বাভাবিক গন্ধ থাকা ফলমূল দেবে গেলেও সমান পুষ্টিকর। তাই বাজার করতে গেলে এখন থেকে এসব 'অসুন্দর' ফলমূল বা সবজি বেছে নিতেই পারেন।

সঠিকভাবে সংরক্ষণ করুন

আমরা অনেকেই সঠিকভাবে খাবার সংরক্ষণের উপায়গুলো জানি না। ফ্রেশ খাবারের জন্য আপনার ফ্রিজের নির্ধারিত স্থানে নির্দিষ্ট খাবার রাখুন। এই যেমন, শাক-সবজি রাখুন ড্রয়ারে অথবা ডিমের ট্রেতেই শুধু ডিম রাখুন। ফ্রিজে রাখার আগে যতটা সম্ভব 'এয়ার টাইট' করে প্যাকেটে বা কন্টেইনারে রাখতে পারলে সবচেয়ে ভালো। এতে করে খাবারে সহজে পচন ধরবে না।

ভাগ করলেই জিতবেন

যদি কোনো খাদ্য উপাদান বেশি করে কিনতেও হয়, তা কয়েক ভাগে ভাগ করে আলাদা আলাদা সংরক্ষণ করুন। ধরুন, অনেক বড় একটা কেক কিনলেন। যা কি না কয়েক সপ্তাহ ধরে খাওয়া হবে। তাহলে প্রতি সপ্তাহে যতটুকু কেক খাওয়া হবে, সেই অনুপাতে কেকটি ভাগ করে আলাদা বাটিতে সংরক্ষণ করুন। আর একটা বাটির খাবার শেষ হলেই পরের বাটিটা ফ্রিজ থেকে বের করুন। 

বেঁচে যাওয়া খাবার চোখের সামনে রাখুন

যেকোনো বেলায় বেঁচে যাওয়া খাবার সংরক্ষণ করুন ফ্রিজের একদম সামনের দিকে। যেন ফ্রিজ খুললেই সেগুলো সবার আগে চোখে পড়ে। এতে করে আপনিও ভুলে যাবেন না, আর খাবারগুলোও অপচয়ের হাত থেকে বেঁচে যাবে।

তৈরি করুন জৈব সার

এতকিছুর পরেও যদি কিছু ফেলে দেওয়ার মতো অবস্থা হয়ও (পচে যাওয়া বা উচ্ছিষ্ট), সেটি থেকেও ভালো কিছু করা সম্ভব। যেমন ধরুন, পচা কোনো ফল, সবজির খোসা, এক দুই টুকরো রুটি, বা খাবার অযোগ্য ডিমের খোসা। এমন পচনশীল উচ্ছিষ্টাংশ রাখতে কমপোস্ট বিন ব্যবহার করুন। সেখান থেকে জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব। যা দিয়ে আপনি ছাদ বা বারান্দায় নতুন করে ফলমূল, সবজি বা সুন্দর কোনো ফুল ফলাতে পারবেন।

তথ্যসূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

Comments

The Daily Star  | English
Saint Martin's Island tourism

Tourists welcome, but Saint Martin’s remains deserted

Saint Martin’s Island officially opened for tourism at the start of November. Yet, there is not a single holidaymaker in sight as tour operators await permission to ferry visitors between the island and the mainland.

16h ago