বাজেট ২০২৩-২৪: কৃষি, খাদ্য ও বিদ্যুত খাতে ভর্তুকি বাড়বে

জনগণের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে আসন্ন বাজেটে কৃষি, খাদ্য ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি বরাদ্দ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, এই ভর্তুকির মাধ্যমে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলে বিশ্ব বাজারে জ্বালানি, সার ও খাদ্যের উচ্চমূল্যের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আগামী অর্থবছরে মোট ভর্তুকি বরাদ্দ থাকবে এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকার ওপরে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে যা ছিল ৮১ হাজার কোটি টাকা এবং সংশোধিত হয়ে ৯৪ হাজার কোটি টাকা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

কৃষকদের সহায়তার জন্য গত কয়েক অর্থবছরে ধীরে ধীরে সারে ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে কৃষি উপকরণের দাম বেড়েছে ও ডলারের বিপরীতে টাকার মান কম থাকায় পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়েছে।

একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামী বাজেটে সারে ভর্তুকি প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। যা চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের ১৬ হাজার কোটি টাকা থেকে বেশি।

অবশ্য সরকার পরবর্তীতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ভর্তুকি বাড়িয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকা করে।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, আগামী বাজেটে খাদ্যে ভর্তুকি ৮০০ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৬ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা করা হতে পারে। আর বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি হতে পারে প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা। যা বিদায়ী অর্থবছরে ছিল ১৭ হাজার কোটি টাকা।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, সরকার বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু এখনো বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জ দিচ্ছে। তাই বরাদ্দ যথেষ্ট নাও হতে পারে।

তিনি বলেন, 'লোডশেডিং অব্যাহত থাকলে অর্থনীতির কোনো লাভ হবে না।'

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, 'দুই ধরনের ভর্তুকি আছে- একটি খারাপ, অন্যটি ভালো।'

তিনি বলেন, 'যারা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে থাকবেন ও গাড়িতে ভ্রমণ করবেন তাদের আমরা ভর্তুকি দেব না। আমরা ধীরে ধীরে খারাপ ভর্তুকি কমাব এবং কৃষি ও খাদ্যে ভর্তুকি অব্যাহত রাখব।'

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গতকাল বলেছেন, 'আগামী বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত থেকে সব ভর্তুকি প্রত্যাহার করবে না সরকার।'

বিদ্যুৎ ভবনে ফোরাম ফর এনার্জি রিপোর্টার্স বাংলাদেশ আয়োজিত প্রাক-বাজেট সংলাপে তিনি বলেন, 'নির্বাচনের বছরে হঠাৎ ভর্তুকি তুলে নিলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে।'

আগামী অর্থবছরে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি জন্য প্রণোদনা (ভর্তুকি হিসেবে বিবেচিত) বাড়ানো হবে না। কারণ এই দুই খাতে প্রবৃদ্ধি মন্থর।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি প্রণোদনার বরাদ্দ বিদায়ী অর্থবছরের মতোই রাখা হবে।

সরকার চলতি অর্থবছরে রপ্তানির জন্য প্রণোদনা হিসেবে ৯ হাজার ২৫ কোটি টাকা আলাদা করে রেখেছিল, কারণ আগের অর্থবছরে রপ্তানিতে ৩৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ছিল।

কিন্তু, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী- গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে রপ্তানি কমেছে ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, রপ্তানি বাড়লে আগামী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে রপ্তানি প্রণোদনার জন্য আরও বরাদ্দ রাখা যেতে পারে।

আরেক কর্মকর্তা বলেন, যারা নতুন ও বৈচিত্র্যময় পণ্য রপ্তানি করছেন এবং নতুন বাজার খুঁজছেন তাদের প্রণোদনা দেওয়া উচিত।

আগামী অর্থবছরে রেমিট্যান্সে প্রণোদনার জন্য সম্ভাব্য বরাদ্দ থাকতে পারে ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

জনশক্তি রপ্তানি বাড়লেও গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের এপ্রিলের মধ্যে রেমিট্যান্স বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৩৭ শতাংশ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি বছরের এপ্রিলে রেমিট্যান্স কমেছে ১৬ দশমিক ২৮ শতাংশ।

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিলে শেষ হওয়া গত ১৬ মাসে বিদেশে ১৫ লাখ কর্মী পাঠিয়েছে বাংলাদেশ।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধি কম হওয়ার অন্যতম কারণ সরকারের বিনিময় হার নীতি।

তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ চ্যানেলের তুলনায় অবৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে ভালো বিনিময় হার পাচ্ছেন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকার বিনিময় হার নীতি পরিবর্তন না করলে রেমিট্যান্স প্রবাহ একই থাকবে।'

বাণিজ্যিক গ্রাহকদের জন্য গ্যাসের দাম বাড়ানোর পরও আগামী বাজেটে গ্যাস ব্যবহারকারীদের জন্য ভর্তুকি হিসেবে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা আলাদা রাখা হবে।

জানুয়ারিতে সরকার বাণিজ্যিক ব্যবহারকারীদের ভর্তুকির বোঝা কমাতে গ্যাসের দাম ১৪ শতাংশ থেকে ১৭৯ শতাংশের মধ্যে বাড়িয়েছে।

তবে, জানুয়ারিতে পাইপলাইনের মাধ্যমে বাড়িতে সরবরাহ করা রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি।

কর্মকর্তারা বলেছেন, পেট্রোলিয়াম পণ্যতে কোনো ভর্তুকি থাকবে না। কারণ সরকার আইএমএফের ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণ কর্মসূচির সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে একটি নতুন মূল্য ব্যবস্থা চালু করার পরিকল্পনা করছে।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

5h ago