স্ত্রীর আয় যখন বেশি

ছবি: সংগৃহীত

স্বামীর মতো স্ত্রীও চাকরি বা ব্যবসা করে অর্থ উপার্জন করবেন- এ বিষয়টি এক সময় আমাদের সমাজের সব জায়গায় গ্রহণযোগ্য ছিল না। এখন এই যুগে এসে সমাজ দুজনের আয়ের বিষয়টি বেশ স্বাভাবিকভাবে নিলেও, স্ত্রীর আয় স্বামীর চেয়ে বেশি অথবা স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর চাকরির পদমর্যাদা উন্নত হলে অনেকেই সেটি সহজভাবে নিতে পারেন না।

অনেক দম্পতির ক্ষেত্রে এটি সমস্যার কোনো বিষয় মনে না হলেও, অনেক দম্পতির জীবনে আবার সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। দেখা যায়, স্বামী নিজেই স্ত্রীর বেশি আয়ের বিষয়টি ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারছেন না, হীনমন্যতা গ্রাস করছে তাকে। আবার অনেক ক্ষেত্রে স্বামী স্বাভাবিকভাবে নিয়ে স্ত্রীকে উৎসাহ দিচ্ছেন, কিন্তু পরিবার বা আশপাশের মানুষ ঠিকই বাঁকা চোখে দেখছে এটি। স্বামীর আয়ই বেশি হওয়া উচিত, এই চিন্তা থেকে স্বামীকে হয়তো পরিবারের সদস্যরা ছোট করছেন বিভিন্নভাবে। আবার বেশি আয় করায় স্ত্রী স্বামীকে উপহাস করছেন, এমন দৃশ্যও বিরল নয় কিন্তু আমাদের সমাজে।

এসব ব্যাপার নিয়ে কথা বলেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের উপ-পরিচালক (মনোবিজ্ঞান) ইফরাত জাহান।

ইফরাত জাহান বলেন, 'স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর আয় বেশি হতে পারে এবং এটি বর্তমানে বেশ সাধারণ একটি ঘটনা। তবে অনেকেই এই বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে নিতে পারেন না। কারণ তারা মনে করেন এতে পরিবারে তাদের কর্তৃত্ব কমে যাবে, স্ত্রীকে শাসনের মধ্যে রাখা সহজ হবে না। এমন মানসিকতা থেকে তাদের মধ্যে একধরনের হতাশা ও হীনমন্যতার জন্ম হয়, যা পরবর্তীতে অশান্তি সৃষ্টি করে পরিবারে।'

 অনেক সময় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে এ ব্যাপারে কোনো সমস্যা না হলেও আত্মীয়স্বজন বা সমাজ বিষয়টিকে সহজভাবে গ্রহণ পারে না।

মনোবিদ ইফরাত জাহান বলেন, 'স্বামীর রোজগার স্ত্রী থেকে কম, এটি তাদের ব্যক্তিগত জীবনে কোনো প্রভাব না ফেললেও আশেপাশের মানুষ বিষয়টি অন্যভাবে দেখে অনেক সময়। তবে সমাজ কী বলল তা নিয়ে মাথা না ঘামানোই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ দিনশেষে পরিবারের কাছেই আপনি ফিরবেন, সমাজের কাছে না।'

এই সমস্যা কেন ঘটে জানতে চাইলে মনোবিদ ইফরাত জাহান বলেন, 'আমাদের পুরুষতান্ত্রিক সমাজে আশা করা হয়, সবচেয়ে ভালো বেতনের চাকরি করবে পরিবারের পুরুষ সদস্য, নারীরা নয়। এই মানসিকতা থেকে আমরা বের হতে পারছি না। এটি সব সমস্যার প্রধান কারণ।'

এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। এগুলো হলো-

মানসিকতা পরিবর্তন

স্বামীর চেয়ে স্ত্রীর বেতন বেশি হলে আত্মসম্মান থাকল না, পরিবারের কর্তৃত্ব হাতছাড়া হয়ে গেল এমন মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে। যদিও এই ভাবনাগুলো যুগ যুগ ধরে আমাদের মাথায় সমাজ গেঁথে দিয়েছে। সবার আগে এই ভাবনাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে।

কথা বলুন 

কথা বলে অনেক সমস্যার সমাধান সম্ভব। অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী হয়তো বুঝতেও পারছেন না এই বিষয়টি নিয়ে স্বামী বিব্রত বোধ করছেন কিংবা স্ত্রীর কোনো আচরণের জন্য স্বামী ভাবছেন তিনি বদলে গেছেন, এগুলো নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করুন। এতে ভুল বোঝাবুঝি কম হবে।

পরের কথায় কান দেবেন না

সমাজ বা আত্মীয়স্বজন কী বললো তা নিয়ে কেউ কাউকে বিচার করবেন না। অনেক সময় স্ত্রী স্বামীর চেয়ে বেশি আয় করলে পরিবারের মানুষ সেই স্বামীকে নিয়ে উপহাস করেন, নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এসব কথা যারা বলে তাদের থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন। পরের কথায় ঘরের মানুষকে কষ্ট দেওয়া উচিত নয়।

যখন যেখানে যেমন

স্বামী বা স্ত্রী অফিসে যে ভূমিকায় ছিলেন তা বাড়ি এসে না দেখালেই ভালো হয়। স্ত্রী বেতন বেশি পাচ্ছেন বলেই যে সংসারের পুরো কর্তৃত্ব তার এটি যেমন সত্যি নয়, তেমনি স্বামী বেতন কম পেলে সংসারে তার গুরুত্ব কমে গেল- এমন ভাবনাও সঠিক নয়। সংসার চলে ভারসাম্যের ওপর। ভারসাম্য ঠিক না থাকলে বেতন যারই বেশি হোক, সংসারে অশান্তি হবেই।

স্বপ্নের পথে বাধা হবেন না

কারো স্বপ্ন জয়ের পেছনে বাধা হবেন না। স্বামীর বেতন কম হলেও এটি যদি তার 'ড্রিম জব' হয়, তবে স্ত্রী বা পরিবারের লোকজনের উচিত নয় এটি নিয়ে তাকে কথা শোনানো। তেমনি স্ত্রীর আয় বেশি বলেই তিনি বদলে গেছেন এমন মনোভাব বাদ দিন। হয়তো এই দিনের জন্যই আপনার স্ত্রী এতদিন অপেক্ষা করেছেন। অনুপ্রেরণা পেলে হয়ত স্বপ্নের পাখায় ভর করে আপনার সঙ্গী আরও অনেক দূর যেতে পারেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Air purifiers for Dhaka: hope or hype?

DNCC to set up 25-30 such industrial devices in public places to curb pollution; experts skeptical

19h ago