আপনার সঙ্গী কি গেমার?

গেমার
ছবি: সংগৃহীত

গেমিং মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দেয়। শুধু তাই নয়, মানসিক স্বাস্থ্য ও ব্যক্তিগত সম্পর্কগুলোরও উন্নয়ন ঘটায়। গেমিংয়ে সময় দেওয়ার আরেক অর্থ নিজেকে সময় দেওয়া, নিজের যত্ন নেওয়া। আবার জড়িয়ে থাকা সম্পর্কগুলোর সঙ্গেও বন্ধন দৃঢ় হয়। যারা গেম খেলেন বা গেম খেলতে ভালোবাসেন তাদের অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা সহজ হয়, পারস্পরিক বোঝাপড়াও ভালো হয়।

ভিডিও গেমের একটা নিজস্ব জগত আছে। ইচ্ছা করলেই যে জগতে গেমাররা ডুব দিতে পারেন। আর এই ডুব দেওয়ার মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য হলেও রোজকার জীবনের চাপ থেকে মুক্ত থাকা যায়। ভুলে থাকা যায় বাস্তব জীবনের নানা ঝড়-ঝঞ্ঝা।

একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গেমিংয়ের মাধ্যমে কিছু সময়ের জন্য বাস্তব জীবন থেকে দূরে থাকার বা হারিয়ে যাওয়ার এই সুযোগ একজন মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যে দারুণ প্রভাব রাখে। উদাহরণ হিসেবে যদি ওপেন ওয়ার্ল্ড গেমসগুলোর কথা বলি তাহলে এগুলো বেশ বিস্তৃত। এসব গেমের ভেতর খেলোয়াড়রা বিভিন্ন ধরনের অনুসন্ধান চালাতে পারেন। খেলার ছলে হলেও সেখানে তাদের অনেক জটিল মিথস্ক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, যে অভিজ্ঞতা পরবর্তীতে তাদের ব্যক্তিগত জীবনেও ভীষণ কাজে লাগে।

গেমার যখন গেমিংয়ের জগতে ঢুকে পড়েন তখন তার মস্তিষ্কে গুরুত্বপূর্ণ কিছু রাসায়নিক সক্রিয় হয়। এই রাসায়নিকগুলো তাকে সামাজিক সংযোগ বা যোগাযোগ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। একইসঙ্গে তার মানসিক সুস্থতায় এবং সৃজনশীলতায়ও ইতিবাচক প্রভাব রাখে। বলা হয়, ভিডিও গেম একজন মানুষের ভেতরের শিশু সত্ত্বাকে বের করে আনে। অতিরিক্ত আবেগ নিয়ন্ত্রণেও বেশ ভূমিকা রাখে।

ব্যক্তিগত সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য

একজন গেমারকে ভালোবাসলে কিছু জিনিস মেনে নিতেই হবে। এটা ঠিক যে, সঙ্গী আপনার চেয়ে কোনো যন্ত্রকে প্রাধান্য দিচ্ছে, বিষয়টি মেনে নেওয়া যথেষ্ট কঠিন। এক্ষেত্রে দুজনে মিলে একটা সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে। যেমন- দিনের নির্দিষ্ট সময় গেমিংয়ের জন্য বরাদ্দ রাখা যায়। গেমার সঙ্গী শুধু নির্দিষ্ট সময়ে মেনেই গেম খেলবেন, বাকি সময় বরাদ্দ থাকবে সঙ্গীর জন্য।

এক্ষেত্রে এটা ধরে নিন যে, গেম খেলার সময়টুকু গেমার সঙ্গীর নিজের যত্ন নেওয়ার বা সেলফ কেয়ারের সময়। সম্পর্কে একে অন্যকে এটুকু সময় তো দেওয়া যেতেই পারে।

সেলফ কেয়ার একজন মানুষকে তার নিজের সেরা ভার্সন হতে সাহায্য করে। তাই গেমার যখন গেম খেলছেন বা আরেক কথায় সেলফ কেয়ার করছেন তখন তাকে শান্তিমতো সেই কাজটুকু করতে দেওয়া উচিত। প্রত্যেক গেমারেরই একান্ত কিছু সময় প্রয়োজন। এটা অনেকটা 'লেট দেম' তত্ত্বের মতো।

এখন জেনে নিই, 'লেট দেম' তত্ত্বটা কী?

এই তত্ত্ব বলে, একজন মানুষকে তার ইচ্ছা অনুযায়ী কাজ করতে দিলে তা মানসিক শান্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে প্রভাব রাখে। এই পদ্ধতি একে অন্যের সীমা নির্ধারণে এবং পরস্পরের প্রতি আস্থা বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ, আপনি আপনাদের দুজনের জীবনে একে অন্যের সীমানা কতটুকু জানবেন এবং আপনার সঙ্গী যে নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নিতে পারেন সেটিও বিশ্বাস করবেন। এই বিশ্বাস আপনাদের দুজনের সম্পর্ক উন্নয়নে সাহায্য করবে।  

গেমিংয়ের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগির মাধ্যমে সম্পর্কোন্নয়ন

গেমারকে ব্যক্তিগত সময় দেওয়া যেমন জরুরি, তেমনি সঙ্গীর গেমিংয়ের আগ্রহের সঙ্গে নিজের আগ্রহ ভাগ করে নেওয়াও সম্পর্ককে শক্তিশালী করে।

আমরা যদি কো-অপারেটিভ ভিডিও গেমগুলোর দিকে তাকাই, তাহলে দেখব সেখানে একদল গেমার একই লক্ষ্য অর্জনে একসঙ্গে কাজ করে। যেহেতু তাদের লক্ষ্য এক, তাই নিজেদের মধ্যে বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। দলে কাজ করতেও তারা অভিজ্ঞ হয়ে ওঠেন।

দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের জন্য এই বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক তৈরি করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

'ইট টেকস টু' এবং 'আনরভেল টু'র মতো গেমগুলো এমনভাবে তৈরি করা হয়, যেন একজন তার সঙ্গীর সঙ্গে এটি খেললে দুজনের মধ্যে একে অন্যকে সহায়তা করার মানসিকতা তৈরি হয়। একসময় তা আর শুধু খেলার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, বাস্তব জীবনেও এর প্রতিফলন দেখা যায়।

ভালোবাসার সম্পর্কে থাকা দুজন মানুষ যদি একসঙ্গে ভিডিও গেম খেলতে বসেন তাহলে সম্পর্কে এক ধরনের তৃপ্তি আসে। দেখা গেছে, বিবাহিত যারা একসঙ্গে ভিডিও গেম খেলেন তাদের মধ্যে সুখী হওয়ার প্রবণতা অন্যদের চাইতে বেশি। এর কারণ হতে পারে যে তারা একটি সাধারণ লক্ষ্য নিয়ে খেলেন এবং একই চ্যালেঞ্জ ভাগাভাগি করে নেন।

গেমিংয়ের জন্য আলাদা সময়ের কথা জানানো

গেমারদের উচিত গেমিংয়ের জন্য আলাদা সময় যে কত গুরুত্বপূর্ণ সে বিষয়টি সঙ্গীকে জানানো। এ বিষয়ে রেডিটে একজন তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছেন। সেখানে তিনি বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।

তিনি বলেন, ভিডিও গেম তাদের জন্য বাস্তব জীবনের নানা সংকটের মধ্যে থেকে হারিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়। সঙ্গীর সঙ্গে ভিডিও গেম খেললে দুজনেরই মন শান্ত হয়, মানসিক চাপ কমে যায়।

গেমিংকে সেলফ কেয়ারের একটি বিশেষ পদ্ধতি হিসেবে বর্ণনা করেছেন ওই গেমার। তার মতে, এটা অন্যসব কর্মকাণ্ডের মতোই স্বাভাবিক যেগুলো অন্য মানুষেরা নিজেদের যত্নের জন্য করে।

আমাদের পরামর্শ

আপনি যদি একজন গেমার হয়ে থাকেন তাহলে সব সংকোচ ভুলে নিজের প্রয়োজনের কথা সঙ্গীকে বলুন। মনের কথা বলার জন্য যেকোনো ওয়েবসাইট থেকে পাওয়া অপরিচিত মানুষ বেছে না নিয়ে সঙ্গীর সঙ্গে ভাগ করে নিন।

গেমারদের সঙ্গীদের বলব, আপনারা মন দিয়ে শুনুন। গেমার সঙ্গী তার নিজের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনাকে সরাসরি বলছেন, এর অর্থ তিনি আপনাকে যথেষ্ট সম্মান করেন। ফলে আপনিও তার সিদ্ধান্তকেও সম্মান করুন।

গেমিং হলো এমন একটি জগত যেখানে আপনাদের দুজনের জন্যই যথেষ্ট জায়গা আছে। চাইলে জীবনের সঙ্গী হওয়ার পাশাপাশি গেমিং জগতেরও সঙ্গী হতে পারেন।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English

Tribute to July uprising: Drone show lights up Dhaka's sky

In 12 vivid motifs, the July uprising came alive, tracing the heroism of Abu Sayed and the stirring role of women in the movement

8h ago