ট্রেকিংয়ের প্রস্তুতি

ট্রেকিংয়ের প্রস্তুতি
ছবি: মাসুদ সুজন

কেউ ভ্রমণ করেন শুধু ভ্রমণকারী বা ট্র্যাভেলার হিসেবে, কেউ আবার ট্রেকার, কেউবা হাইকার হিসেবে। ট্রেকিং হলো দীর্ঘ-দূরত্বে, কয়েক দিন বা সপ্তাহ ধরে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে প্রধানত রুক্ষ- পাহাড়ি অঞ্চলে বা দুর্গম স্থানে হাঁটা।

সন্ধ্যায় ক্লান্তিতে শরীর নেয়ে আসলে কোনো এক অজানা জুম ঘরে শরীর এলিয়ে নেওয়া, অফুরন্ত সময় তারার দিকে তাকিয়ে থাকা এবং প্রতিদিন নতুন ল্যান্ডস্কেপ আবিষ্কার করাই ট্রেকিংয়ের কর্মশক্তি। পাহাড়ে ট্রেকিং সমতলের মানুষদের জন্য বেশ কঠিন একটি কাজ। পাহাড়ি মানুষ যেই পথ খুব দ্রুত পাড়ি দেবে সেই পথই সমতলবাসীদের পাড়ি দিতে যাবে অনেকটা শ্রম ও সময়।

পায়ে হেঁটে কঠিন এই গহীন প্রকৃতি জুড়ে দীর্ঘ যাত্রা কখনো মনের খোরাক, কখনো চোখের শান্তি, কখনো নিজেকে একটু সময় দেওয়া, কখনো ক্যাসকেড পাড়ি দিয়ে জীবনের দুঃখকেই ছুটি দেওয়া। এছাড়াও অফুরন্ত রত্নভাণ্ডারের দৃশ্যাবলী অন্বেষণ ও উপভোগ করার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য থাকে। তবে ট্রেকিংয়ের ক্ষেত্রে থাকে- অজানাকে জানার প্রতিশ্রুতি, একনিষ্ঠ লক্ষ্য, জীবনের ছুঁড়ে দেওয়া কোনো উদ্দেশ্য বা একটি মিশন। চলে ট্রিপমেট বা ট্যুরমেটদের সঙ্গে আড্ডা।

ছবি: মাসুদ সুজন

বাংলাদেশে ট্রেকিংয়ের জন্য জনপ্রিয় গন্তব্য কেওক্রাডং, বগালেক, তাজিংডং, চিম্বুক রেঞ্জের ক্রিসতং, রুংরাং, থানচির রেমাক্রি, তিন্দু, নাফাখুমসহ বহু স্থান। যেখানে ভ্রমণকারীরা দলবেঁধে ট্রেকিং ও ক্যাম্পিং করতে যান। রেমাক্রি খালের তীরে অনেক স্থানে ক্যাম্পিং করা যায়। পুকুরপাড়া বা রাইক্ষ্যং লেক, তিনমাথা, রোয়াংছরির সিপ্পি আরসুয়াংসহ আরও অনেক জনপ্রিয় স্থান রয়েছে।

আলীকদমের মিরিঞ্জা রেঞ্জের চূড়ায় অবস্থিত মারায়ন তং-এর গাছের নিচের তাবুতে বসে দূরের মেঘ দেখতে দেখতে দিন কাটিয়ে দেওয়া যায়। হবিগঞ্জের চুরুনঘাট উপজেলায় অবস্থিত রেমা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য দেশের সবচেয়ে সমৃদ্ধ অভয়ারণ্যগুলোর অন্যতম। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে এখানেও বনের ধারে ক্যাম্পিং করার সুযোগ আছে। কক্সবাজারের শাহপরীর দ্বীপ- বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের অবিচ্ছিন্ন স্থলভাগেও প্রতি বছর শীতকালে দলবেঁধে ক্যাম্পাররা যান ক্যাম্পিং করতে। শাহপরীর দ্বীপের জেটির আশেপাশে ও পশ্চিম সৈকত ক্যাম্পিং করার জন্য উপযুক্ত স্থান। এসব জায়গায় চাইলেই যেকোনো সময় ট্রেকিং করা যায়।

ছবি: মাসুদ সুজন

আরামদায়ক ও প্রফেশনাল ট্রেকিংয়ে ক্যাম্পিং ব্যাকপ্যাক, ওডোমস ক্রিম, সানব্লক, শুকনো খাবার, (চানাচুর, মুড়ি, চকোলেট, বাদাম, কাপ নুডলস, খেজুর) পানির বোতল, লাইটার, চাকু, সানগ্লাস, ক্যাপ, কম্পাস, টর্চ, ম্যাচ বা অন্যান্য আগুন জ্বালানোর উৎস, তাঁবু, একটিভ জিপিএস সিস্টেম, নাইলনের দড়ি, প্লাস্টিক ব্যাগ, পরিচয় পত্র, টয়লেট টিস্যু ইত্যাদি রাখতে হয়। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ-

• একটি ফ্লিস স্যুট, রাতের ঘুমের জন্য এবং সন্ধ্যায় আরামে সময় কাটানোর জন্য।

• অন্তত ২ জোড়া টি-শার্ট,মোজা

• হালকা ট্রাউজার্স- সাধারণত মাইক্রোফাইবার দিয়ে তৈরি, দিনের বেলা তাপ চলাচলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

• হালকা জ্যাকেট-উইন্ডব্রেকার। সকালের শীতল বাতাসে প্রয়োজন হয়।

• রেইনকোট বা পঞ্চ

• হেড-ল্যাম্প থাকলে ভালো হয়। কারণ, এতে হাত সম্পূর্ণ ফ্রি থাকে তাই ট্রেকিং এর সময় অন্ধকারে চলাচল অনেক বেশি সুবিধাজনক।

• স্লিপিং ব্যাগ

• ঠান্ডায় প্রয়োজনীয় ডাউন জ্যাকেট

নিবিড় প্রকৃতি, সহজ জীবনযাপন, একটানা কোনো অজানা পোকার সমবেত কোলাহল, পাপিয়ার ডাক, কখনো নিশ্ছিদ্র নীরবতা ভেদ করে কোকিলের 'কুহু', আরোহণ করে আনা জীবনের এসব রসদের লোভে নিজের সঙ্গেই যেন চলে এক প্রতিযোগিতা। আর যে একবার পাহাড়ে ওঠার স্বাদ পায়, তাকে পেয়ে যায় পাহাড়ের মোহনীয় নেশায়।

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

5h ago