শিবচরে বাস দুর্ঘটনা

দূরপাল্লার বাসে সিটবেল্ট বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ, তদন্ত প্রতিবেদন জমা

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা কমাতে ও হতাহতের সংখ্যা কমাতে তদন্ত প্রতিবেদনে ১৪টি সুপারিশ করা হয়েছে
ইমাদ
মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় গত রোববার ঢাকাগামী ইমাদ বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর এলাকায় ইমাদ পরিবহনের বাস দুর্ঘটনার তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে অতিরিক্ত গতি, ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ রেজিস্ট্রেশন, চালকের পেশাদার ভারি গাড়ি চালানোর লাইসেন্স না থাকাকে দায়ী করা হয়েছে।

মহাসড়কে দুর্ঘটনা এড়াতে ও হতাহতের সংখ্যা কমাতে দূরপাল্লার বাসে সিটবেল্ট বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

আজ বুধবার তদন্ত কমিটির প্রধান মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পল্লব কুমার হাজরা দ্য ডেইলি স্টারকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত ১৯ মার্চ সকালে শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় ঢাকাগামী ইমাদ পরিবহনের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে ১৯ জন নিহত হন।

এ ঘটনায় মাদারীপুর জেলা প্রশাসন একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটি গতকাল মঙ্গলবার তদন্তকাজ শেষ করে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। 

কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পল্লব কুমার হাজরা বলেন, 'আমরা সোমবার ও মঙ্গলবার বুয়েটের বিশেষজ্ঞ দল ও শিবচর হাইওয়ে পুলিশকে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। দুমড়েমুচড়ে যাওয়া গাড়ির বিভিন্ন অংশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করেছি।'

'প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের বক্তব্য, আহত যাত্রীদের বক্তব্য, বাসচালকের স্ত্রীর বক্তব্য, ইমাদ পরিবহন প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজারের বক্তব্য ও গাড়ির কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দুর্ঘটনার কিছু কারণ পেয়েছি,' বলেন তিনি।

'গাড়ির অতিরিক্ত গতি এই দুর্ঘটনার মূল কারণ' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'গাড়ির ফিটনেস মেয়াদোত্তীর্ণ ছিল, ২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর গাড়িটি গোপালগঞ্জে দুর্ঘটনা কবলিত হওয়ায় গাড়ির রেজিস্ট্রেশন স্থগিত করা হয়েছিল, তারপরেও গাড়িটি সড়কে চলছিল, চালকের ভারি গাড়ি চালানোর পেশাদার লাইসেন্স ছিল না, মধ্যম পেশাদার লাইসেন্স দিয়ে এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়ি চালানো আইনত দণ্ডনীয়। তাছাড়া বৃষ্টি হওয়ায় রাস্তা পিচ্ছিল ছিল।'

চাকা বিস্ফোরণের কারণে দুর্ঘটনা ঘটেছিল কি না, জানতে চাইলে পল্লব কুমার হাজরা বলেন, 'এ বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। যেহেতু এটা টেকনিক্যাল বিষয়, তাই বিশেষজ্ঞ দল আরও কিছুদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবেন। তারপর চাকা বিস্ফোরণের বিষয় জানা যাবে।'

এক্সপ্রেসওয়েতে দুর্ঘটনা কমাতে ও হতাহতের সংখ্যা কমাতে তদন্ত প্রতিবেদনে ১৪টি সুপারিশ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর মধ্যে এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী দ্রুতগতির গাড়ির যাত্রীদের সিটবেল্ট পড়া নিশ্চিত করা এবং দুর্ঘটনায় আঘাতের মাত্রা কম থাকলেও দ্রুত সেবা না পাওয়ায় মৃত্যুঝুঁকি থাকায় এক্সপ্রেসওয়ের নির্দিষ্ট দূরত্বে ট্রমা সেন্টার বা হাসপাতালের ব্যবস্থা রাখার সুপারিশের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

পল্লব কুমার হাজরা বলেন, 'আমরা প্রতিবেদনে ১৪টি প্রস্তাব উল্লেখ করেছি। বেশিরভাগ যাত্রী আহত হয়ে মারা গেছেন। যদি হাইওয়ের গাড়িগুলোতে সিটবেল্ট বাধ্যতামূলক করা হয়, তাহলে মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস পাবে।'

এছাড়া, মাওয়া-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন উল্লেখযোগ্য কোনো হাসপাতাল নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এটি দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকা এবং এর আশেপাশের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো বেশ দূরে। তাই আহতদের হাসপাতালে নিয়ে অনেক সময় লেগে যায়। তাই এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন এলাকায় ট্রমা সেন্টার বা হাসপাতালের ব্যবস্থা করলে নিহতের সংখ্যা কমবে বলে আশা করা যায়।'

অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে আছে লাইসেন্স ও গাড়ির সব বৈধ কাগজপত্র নিশ্চিত করা, গাড়ির ইন্টেরিয়র নরম বস্তু দিয়ে করা, এক্সপ্রেসওয়ের দুইপাশে গার্ড রেইল স্থাপন, এক্সপ্রেসওয়েতে একমুখী রাস্তায় কমপক্ষে ৩ লেন রাখা, মহাসড়কে চলাচলকারী গাড়ির হালনাগাদ তথ্য সম্বলিত ডেটাবেজ, এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলকারী গাড়ির গতিসীমা নিয়ন্ত্রণ, বাসের নিজস্ব চেকপয়েন্টে যাত্রীসংখ্যা চেক করা, যাত্রীদের তথ্য সংরক্ষণ করা, প্রতিটি গাড়িতে ও মহাসড়কে জিপিএস ট্র্যাকার রাখা, সিসি ক্যামেরা স্থাপন প্রভৃতি।

উল্লেখ্য, গত রোববার ইমাদ পরিবহনের দুর্ঘটনাকবলিত বাসটি ভোর ৪টায় খুলনার ফুলতলা বাস কাউন্টার থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছাড়ে। বাসটি শিবচরের কুতুবপুর এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। বাসটিতে চালক, হেলপার, সুপারভাইজার, যাত্রীসহ মোট ৪৬ জন ছিলেন। তাদের মধ্যে ১৯ জন মারা যান এবং বাকি যাত্রীরা আহত হন। 

এ ঘটনায় রোববার দিবাগত রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে সার্জেন্ট জয়ন্ত সরকার বাদী হয়ে সড়ক পরিবহন ২০১৮ আইনে শিবচর মামলা করেন এবং জেলা প্রশাসন ৪ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে। 

 

Comments