ছোট বোনকে বাঁচাতে গিয়ে একে একে চলে গেল ৩ বোন

(বাঁ থেকে) সারথী, সাকোশি ও হ্যাপি। ছবি: সংগৃহীত

গ্যাসের চুলা থেকে ঘরে লাগা আগুন থেকে ছোট বোনকে বাঁচাতে একসঙ্গে চেষ্টা করেছিল বড় ৩ বোন। তাদের সেই চেষ্টা বৃথা যায়নি। তারা তাদের আড়াই বছরের বোনকে রক্ষা করতে পারলেও নিজেরা দগ্ধ হয়। হাসপাতালে ১৮ দিনের ব্যবধানে একে একে তারা সবাই মারা গেল।

হৃদয় বিদারক ঘটনার সূত্রপাত হয় গত ২০ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বান্ডেল রোডে অবস্থিত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের কলোনির একটি বাড়িতে। মিঠুন দাস ও আরতি দাস দম্পতি তাদের ৪ কন্যাসহ সেবক কলোনির ওই বাড়িতে থাকতেন।

মিঠুন ও আরতি প্রতিদিনের মতো সেদিন সকালে মেয়েদেরকে বাড়িতে রেখে কাজে গিয়েছিলেন। বোনদের মধ্যে সারথী দাস (১৩) সপ্তম শ্রেণির, সাকোশি দাস (১১) পঞ্চম শ্রেণির, হ্যাপি দাস (৬), নার্সারি ক্লাসের শিক্ষার্থী ছিল। সবচেয়ে ছোট বোন সুইটি দাসের সঙ্গে তারা সবাই তখন বাড়িতেই ছিল।

সেদিন গ্যাসের চুলা থেকে কীভাবে ঘরে আগুন লাগে তার বর্ণনা পাওয়া যায় ওই শিশুদের মামা উত্তম লালের বয়ানে। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, কাজের কারণে মা সকালে সুইটিকে ঠিকমতো খাওয়াতে না পারায় বড় বোন সারথী তাকে বোতলের দুধ খাওয়ানোর দায়িত্ব নেয়। কিন্তু চুলায় দুধ গরম করার পর সে চুলার গ্যাস ঠিকমতো বন্ধ করতে পারেনি।

তিনি বলেন, 'সুইটিকে খাওয়ানোর পর, তিন বোন তার সঙ্গে খেলছিল। প্রায় দুই ঘণ্টা পর সারথী আবার সুইটিকে খাওয়ানোর জন্য বাকি দুধ গরম করতে গেলে চুলায় দেশলাই জ্বালানোর সঙ্গে সঙ্গে ঘরে আগুন ধরে যায়। সুইটিকে আগুন থেকে বাঁচানোর জন্য ৩ বোন তখন একসঙ্গে তার ওপর শুয়ে পড়ে। প্রতিবেশীরা চিৎকার শুনে বাড়িতে ছুটে এসে আগুন নেভায়।'

মিঠুনের বড় ভাই অনিকেশ দাস জানান, ওই দিন সকাল ১০টার দিকে তারা ঘর থেকে একটি শব্দ শুনতে পান। শব্দ শুনে আমরা ছুটে গিয়ে মেয়েদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি করি।'

উত্তম জানান, সুইটির আঘাত সামান্য ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে বড় ৩ বোন গুরুতর দগ্ধ হয়। এদের মধ্যে সাকোশি ২৪ জুন চট্টগ্রাম মেডিকেলে মারা যায় এবং অন্য ২ বোনকে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়। সেখানে ৩০ জুন সারথীর মৃত্যু হয় এবং অবশেষে বুধবার হ্যাপি মারা যায়।

বুধবার গভীর রাতে হ্যাপির মরদেহ ঢাকা থেকে সেবক কলোনিতে নিয়ে আসা হলে সেখানে হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। সেখানে উপস্থিত কেউই চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। একে একে ৩ মেয়েকে হারিয়ে নিজেদের বুকে-কপালে চাপড়ে হাহাকার করছিলেন তাদের মা-বাবা। তাদের বৃথা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন প্রতিবেশী ও স্বজনরা।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

4h ago