ফিরে আসতে চাওয়ায় বান্দরবানে জহিরকে হত্যা করে জঙ্গিরা, দাবি বাবার

নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর বিজয় নগর মহল্লার বাড়িতে নিহত জহিরের বাবা মো. রফিক উল্যা (সর্ব ডানে)। ছবি: স্টার

জঙ্গিবাদে জড়িয়ে বান্দরবানে দুর্গম পাহাড়ে নিহত হয়েছেন নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীর জোহায়ের মোহাম্মদ আবদুর রহমান ওরফে জহির। তার বাবার দাবি, বাড়ি ফিরে আসতে চাওয়ায় জঙ্গিরা তার ছেলেকে হত্যা করেছে।

তবে এর আগে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়ার গ্রেপ্তারকৃত জঙ্গিরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের জানিয়েছিলেন, গত বছর ৬ জুন পাহাড়ি একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের সঙ্গে কেএনএফ ও জঙ্গিদের গোলাগুলি হয়। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান জহির। পরে তার মরদেহ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের কাছেই দাফন করা হয়। ওই ক্যাম্পের নাম দেওয়া হয় শহীদ ডাক্তার আহমেদ ক্যাম্প। জহিরের সাংগঠনিক নাম ছিল ডাক্তার আহমেদ।

গত ১২ জানুয়ারি র‍্যাব কার্যালয়ে ছবি দেখে পরিবারের সদস্যরা জহিরের মরদেহ শনাক্ত করেন। বিদেশে যাওয়ার কথা বলে ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট তিনি বাড়ি ছেড়েছিলেন। তিনি নতুন জঙ্গি সংগঠন 'জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া'য় যোগ দিয়েছিলেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে সোনাইমুড়ী পৌরসভার বিজয় নগর মহল্লার বাড়িতে জহিরের বাবা মো. রফিক উল্যার সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয়। তিনি বলেন, জহির যে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েছিল তা পরিবারের কেউ আঁচ করতে পারেনি। পরে সে ভুল বুঝতে পারে। সে পরিবারের মাঝে ফিরে আসতে চাইলে জঙ্গিরা তাকে গুলি করে হত্যা করে।

পল্লী চিকিৎসক রফিক উল্যা জানান, জহির এসএসসি পাস করে সোনাইমুড়ী বাজারে তার সঙ্গে ওষুধের দোকানে কিছুদিন কাজ করে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ২০০৫ সালে বাহরাইন চলে যান। ২০০৮ সালে দেশে ফিরে লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বাইরা গ্রামের হাজেরা আক্তারকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ২০১২ সালে দুবাই যান। এক মাসের মধ্যে তিনি ফিরে আসেন। এর পর কিছুদিন পর বাড়ির সামনে ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন।

জহিরের স্ত্রী হাজেরা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, ওষুধের ব্যবসায় তাদের সংসার চলছিল। কিন্তু তিনি তুরস্কে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। আমি তাকে বিদেশ যেতে বারন করি। তিনি কথা শোনেননি।

তিনি বলেন, জহির তুরস্ক যাওয়ার কথা বলে ২০২১ সালের ৩০ আগস্ট সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। সেদিন রাত থেকে তার মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। তিন মাস পর তিনি ইমো অ্যাপে কল করে আমার সঙ্গে কথা বলেন। এভাবে প্রায় তিন মাস কথা হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একবার ভিডিও কলে কথা হয়েছে। সে তুরস্কে আছে বলে জানিয়েছিল। ২০২২ সালের ২২ মে বিকেলে তার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয়। তার অবস্থান জানতে চাইলেও কোনো উত্তর দেননি।

তিনি জানান, এরপর গত ২০২২ সালের ১০ অক্টোবর র‌্যাবের পরিচয়ে দুই জন বাড়িতে এসে জহিরের বাবা ও আমার সঙ্গে কথা বলেন। তারা বলেন, জহির জঙ্গিবাদে জড়িত।

জহিরের বাবা বলেন, জহির দিনের বেশিরভাগ সময় মোবাইল ফোনে কথা বলত। সে কার সঙ্গে কথা বলত আমি জানতে চেয়েছিলাম। পরে আমাকে দেখলেই সে ফোন রেখে দিত। তিনি আরও বলেন, সোনাইমুড়ীর বারগাঁও ইউনিয়নের মুকিল্লা গ্রামের নিজাম উদ্দিন হিরনের (৩৫) সঙ্গে জহিরের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। হিরন যে জঙ্গিবাদে জড়িত তা আমরা জানতাম না। হিরন গত ১১ জানুয়ারি বান্দরবানে র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন। তার দাবি, হিরনই তার ছেলেকে জঙ্গিবাদের দীক্ষা দিয়েছে।

তিনি বলেন, ফোনে জহির তার স্ত্রীকে বলেছিল খুব শিগগিরই সে ফিরে আসবে। এ থেকে বোঝা যায় সে বাড়ি ফিরে আসতে চেয়েছিল।

জহিরের বাবা রফিক বলেন, গত ১২ জানুয়ারি র‌্যাব-১৫ থেকে ফোন দিয়ে আমাকে ও জহিরের স্ত্রীকে বান্দরবানে র‌্যাব কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে লাশের ছবি দেখে আমরা জহিরের লাশ শনাক্ত করি। জহিরের বুকের বাম পাশে গুলির চিহ্ন ছিল। গত বছর ৬ জুন জহিরকে বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ে হত্যা করা হয় বলে জানায় র‌্যাব। তার কবরের সন্ধান পাওয়া যায়নি।

জহিরের স্ত্রী বলেন আমার দুই সন্তান ও আমার ভবিষ্যৎ কী হবে? যারা আমার স্বামীকে বিপথগামী করে আমাকে বিধবা এবং আমার সন্তানদের এতিম করেছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

সোনাইমুড়ী থানার ওসি জিয়াউল হক বলেন, গণমাধ্যমে জঙ্গি জহিরের ছবি ও সংবাদ প্রকাশের পর তার বাড়িতে মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছি। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ কাজ করছে।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

4h ago