ই-অরেঞ্জের সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ হাইকোর্টের

ই-অরেঞ্জ
সোহেল রানা। ছবি: সংগৃহীত

আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বনানী থানার বরখাস্তকৃত পরিদর্শক শেখ সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। 

একই সঙ্গে বিতর্কিত এই ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ভ্যাট আদায় সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এক রুলের শুনানিকালে আজ রোববার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি খিজির হায়াত লিজুর হাইকোর্ট বেঞ্চ এসব আদেশ দেন।

আদেশে ভারতে আটক শেখ সোহেল রানাকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার কী ব্যবস্থা নিয়েছে, সে বিষয়ে আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিবকে  প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই তারিখের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে ই-অরেঞ্জের লেনদেন থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স ও শুল্ক আদায়ের বিষয়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকাণ্ডের বিষয়ে আদালতের আগের আদেশ অনুযায়ী কোনো প্রতিবেদন না পাওয়ায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের প্রতি অসন্তোষও প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।

গ্রাহকদের ১১০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আছে ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে। আর বনানী থানার সাবেক পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা প্রতিষ্ঠানটির সাবেক মালিক সোনিয়া মেহজাবিনের ভাই ও পৃষ্ঠপোষক। 

ভোক্তারা ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে মামলা করার পর সোহেল বিনা অনুমতিতে কর্মক্ষেত্র ছেড়ে যান এবং ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে ভারতের কুচবিহারে বিএসএফ তাকে আটক করে।

আজ শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ বলেন, 'আমরা দেশ ও জনগণের ভালোর জন্য বিভিন্ন আদেশ প্রদান করি। আদেশ না মানলে ফল ভালো হবে না। আমরা এর আগে স্বরাষ্ট্র সচিব এবং এনবিআরের কাছ থেকে ই-অরেঞ্জ সম্পর্কে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট চেয়েছি। সংবিধানের ১১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তারা তা আদালতে জমা দিতে বাধ্য। কিন্তু তারা কোনো প্রতিবেদন জমা দেয়নি, যা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও অপ্রত্যাশিত।'

বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার বলেন, 'নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্বরাষ্ট্রসচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছ থেকে কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট না পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

বেঞ্চ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিককে স্বরাষ্ট্রসচিব ও এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে এ আদেশের বিষয়ে জানাতে বলেছেন এবং এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশ দেওয়ার জন্য ১৯ ফেব্রুয়ারি তারিখ নির্ধারণ করেছেন।

ই-অরেঞ্জের গ্রাহকদের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে একটি রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৭ এপ্রিল জারি করা একটি রুলের শুনানিকালে হাইকোর্ট আজ এসব আদেশ দেন।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল (ডিএজি) আমিন উদ্দিন মানিক বেঞ্চে পুলিশ মহাপরিদর্শকের একটি কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট জমা দেন। রিপোর্টে বলা হয়, শেখ সোহেল রানাকে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করেছে এবং সেখানকার আদালত তাকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে ডিএজি বলেন, সোহেল রানাকে ভারতের আলিপুরের প্রেসিডেন্সি কারেকশনাল হোমে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি জামিনে মুক্তি পান এবং পরে পালিয়ে যান।

বাংলাদেশ সরকার সোহেলের বিরুদ্ধে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সোহেল রানাকে গ্রেপ্তার না করলে, তাকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা যাবে না।

গত বছরের ২ নভেম্বর বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) ই-অরেঞ্জের বিষয়ে হাইকোর্টে একটি কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট পেশ করে। এতে বলা হয়, ই-অরেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা সোনিয়া মেহজাবিন মোটা ডিসকাউন্টের লোভ দেখিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম টাকা নিয়ে ৯ কোটি টাকা দিয়ে একটি প্লট ও ফ্ল্যাট কেনেন। তার আত্মীয়-স্বজনরাও গ্রাহকদের টাকা দিয়ে সম্পদ গড়েছে। তারা গ্রাহকদের অর্থ পাচারও করেছেন

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পেমেন্ট গেটওয়ে SSLCOMMERZ এর মাধ্যমে ই-অরেঞ্জ শপ ও ই-অরেঞ্জ বাংলাদেশ ৩ লাখ টাকার অর্ডারের বিপরীতে গ্রাহকদের কাছ থেকে ৯০০ কোটি টাকা নিয়েছে। তবে, গ্রাহকদের পণ্য দেওয়া হয়েছে কি না, তা নিশ্চিত না।

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

4h ago