সরকারি চাকরি দেওয়ার নামে এমপির মামাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর মামাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
রাজশাহী
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর মামাতো ভাইয়ের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।

এমপি ওমর ফারুকের মালিকানাধীন নগরীর শপিং কমপ্লেক্স 'থিম ওমর প্লাজা'র প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন তার মামাতো ভাই নাহিদুজ্জামান পাপ্পু। তার বিরুদ্ধে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিয়ে কমপক্ষে ৩০ জনের কাছ থেকে কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহীর বিসিক এলাকায় ৩০-৪০ জনের একটি দল পাপ্পুর বাড়ির সামনে জড়ো হয়ে টাকা ফেরতের দাবিতে বিক্ষোভ করলে বিষয়টি সামনে আসে। পরে জনরোষের মধ্য থেকে পাপ্পুকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।

ভুক্তভোগীদের দাবি, পাপ্পু এমপির সঙ্গে তার সম্পর্ককে ব্যবহার করে চাকরির প্রলোভন দিয়ে তাদের প্রতারিত করেছেন। অনেকেই বলছেন, পাপ্পু তাদের ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছিলেন, পরে সেটি নিয়ে অফিসে যোগদান করতে গিয়ে তারা হয়রানির শিকার হয়েছেন। অনেকে আবার চাকরি না পেয়ে টাকা ফেরত চেয়েও পাননি, উল্টো তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করা হবে বলে হুমকি দিয়েছেন পাপ্পু।

প্রতারণার শিকার আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাপ্পু আমাকে রাজশাহী সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্য সহকারী হিসেবে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২ লাখ টাকা নেয়। চাকরি পাওয়ার পর তাকে আরও ৩ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। আমি চাকরি পাইনি, কিন্তু পাপ্পু আমার টাকাটাও আর ফেরত দেয়নি।'

আরেক চাকরিপ্রার্থী ইমন আলী বলেন, 'বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরি দেওয়ার কথা বলে পাপ্পু আমার কাছ থেকে ১১ লাখ টাকা নিয়েছে। আমার মতো আরও ১০ জনের কাছ থেকে প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়েছে সে।'

'সে আমাদেরকে ভুয়া নিয়োগপত্র দিয়েছিল। পরে সেটি নিয়ে যোগদান করতে গেলে আমরা হয়রানির মধ্যে পড়ি,' বলেন তিনি।

আরেক ভুক্তভোগী ফয়সাল হোসেন বলেন, 'পুলিশে চাকরির জন্য ১৬ লাখ টাকা পাপ্পুকে দিয়েছি। চাকরি পাওয়ার পর আরও ৪ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। পরে আমি যখন আমার টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য চাপ দিই। তখন তিনি আমাকে টাকা ফেরত নেওয়ার জন্য এমপির কাছে যেতে বলেন।'

এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাপ্পুকে জনগণের ক্ষোভ থেকে রক্ষা করে হেফাজতে নিয়েছে। ভুক্তভোগীদের কেউ অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

মঙ্গলবার মধ্যরাতে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভুক্তভোগীদের অনেকেই থানার সামনে অপেক্ষা করছিলেন এবং মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

জানতে চাইলে সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাপ্পু শুধু আমার মামাতো ভাই নয়, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনেরও সে চাচাতো ভাই। কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় প্রায় ১ মাস আগে পাপ্পুকে বরখাস্ত করেছি।'

'১ মাস আগে পাপ্পুর ঘুষ নেওয়ার কথা জানতে পেরেছিলাম এবং বিষয়টি তার বাবা-মাকে জানিয়েছি। এরপর থেকে পাপ্পু কাজে অনুপস্থিত থাকতে শুরু করে,' বলেন তিনি।

Comments