ব্যাংকের ১১ কোটি টাকা ছিনতাই

উদ্ধার করা ৩ ট্রাঙ্কে পাওয়া গেল ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা

মানি প্ল্যান্ট
বেসরকারি নিরাপত্তা সংস্থা মানি প্ল্যান্টের এই গাড়িতে করে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের টাকা পরিবহন করা হচ্ছিল। ছবি: সংগৃহীত

ছিনতাই হওয়া ডাচ-বাংলা ব্যাংকের ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ধারণা করেছিল। ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস জব্দ করে সেটি থেকে ৩টি ট্রাঙ্ক উদ্ধার করা হয়েছে এবং ওই ট্রাঙ্কগুলোতে এই টাকা ছিল বলে জানিয়েছিল ডিবি।

কিন্তু, উদ্ধার হওয়া ৩টি ট্রাঙ্কে থাকা টাকা গণনা শেষে মোট ৩ কোটি ৮৯ লাখ পাওয়া গেছে বলে তুরাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শরীফুল ইসলাম জানিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার রাতে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩টি ট্রাঙ্কের মধ্যে একটি ছিল ফাঁকা। বাকি দুটি থেকে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।'

এর আগে সন্ধ্যায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশিদ সাংবাদিকদের জানান যে ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। যদিও তারা ট্রাঙ্কগুলো খুলে দেখেননি বলেও জানান।

উদ্ধারকৃত টাকার সঠিক পরিমাণ জানতে রাতে হারুন অর রশিদকে ফোন দেওয়া হলেও, তিনি রিসিভ করেননি।

এ ব্যাপারে টাকা পরিবহনের দায়িত্বে থাকা মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক যশোদা জীবন দেবনাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডিবি মাত্র ৩ কোটি ৮৯ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে।' তিনি সে সময় তুরাগ থানায় ছিলেন বলে জানান।

গাড়িতে নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সকালে ৩টি গাড়ি ক্যাশ লোডের জন্য বেরিয়েছিল। দ্বিতীয় গাড়িটি দুর্ভাগ্যবশত পথে কারিগরি সমস্যায় পরে। তৃতীয় গাড়িতে ২টি অস্ত্র ছিল। সেটি ওই গাড়ির সঙ্গে দাঁড়ায়।'

'তখন প্রথম গাড়িটি এগিয়ে যায় এবং ছিনতাইয়ের শিকার হয়,' বলেন তিনি।

এর আগে, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাইক্রোবাসে ৪টি ট্রাঙ্কে ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা নিয়ে মানি প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা মিরপুরে ব্যাংকের অফিস থেকে টাকা নিয়ে সাভার এলাকার দিকে যাওয়ার সময় অস্ত্রসহ কয়েকজন গাড়িটি আটকে বন্দুকের মুখে টাকা ছিনতাই করে বলে পুলিশ জানায়।

পরে সন্ধ্যায় প্রেস ব্রিফিং করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ছিনতাই হওয়া টাকার মধ্যে ৯ কোটি টাকা উদ্ধারের দাবি করে।

এ ঘটনায় মানি প্ল্যান্টের ২ পরিচালকসহ ৭ জনকে ডিবি আটক করে এবং ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ি জব্দ করে।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় খিলক্ষেত এলাকায় সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখার প্রধান হারুন অর রশিদ বলেন, 'আমরা ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত একটি গাড়ি খিলক্ষেত থেকে জব্দ করেছি। বেশিরভাগ টাকাই আমরা উদ্ধার করেছি, প্রায় ৯ কোটির মতো হবে। যদিও আমরা ট্রাঙ্কগুলো খুলিনি। আশা করছি, চারটি ট্রাঙ্কের মধ্যে যেহেতু তিনটি ট্রাঙ্ক এখানে আছে, এখানে ৯ কোটি টাকা হবে। বাকি টাকা উদ্ধারে অভিযান চলছে।'

হারুন অর রশিদ বলেন, 'এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। আমরা দেখব কেন মানি প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা এত সহজে ডাকাতদের টাকা নিতে দিল।'

'আমরা কিছু নাম পেয়েছি। মানি প্ল্যান্টের ২ পরিচালকসহ আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের পর আমরা ঘটনার রহস্য উদঘাটন করতে পারব,' যোগ করেন তিনি।

ডিএমপির উত্তরা বিভাগের উপকমিশনার মোরশেদ আলম সাংবাদিকদের জানান, সকালে টাকা বহনকারী গাড়িটি মেট্রোরেল সেন্টার স্টেশনের কাছে পৌঁছালে একটি কালো মাইক্রোবাসে ৭-৮ জন লোক গাড়ির গতিরোধ করে। গাড়িতে মানি প্ল্যান্টের একজন ম্যানেজার, একজন সুপারভাইজার, দুজন গার্ড ও চালক ছিলেন।

টাকা ছিনতাইয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে এই কালো মাইক্রোবাসটি জব্দ করা হয়েছে। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

তিনি বলেন, 'গাড়ির দরজা এতটাই হালকা ছিল যে ডাকাতরা তা টেনে খুলে ফেলে এবং চালকসহ ৪ জনকে জোর করে নামিয়ে দেয়। পরে তারা ৪টি ট্রাঙ্ক কালো মাইক্রোবাসে তুলে নেয় এবং পালিয়ে যায়।'

পরে মানি প্ল্যান্টের কর্মকর্তারা ৯৯৯ এ ফোন করে পুলিশের সাহায্য চায়।

'ছিনতাইয়ে ব্যবহৃত মাইক্রোবাসটিতে ভুয়া নম্বরপ্লেট ছিল। অপর একটি প্রাইভেট কারের ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজে গাড়িটিকে শনাক্ত করা হয়েছে,' বলেন তিনি।

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, 'ডিএমপির নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিয়েই মানি প্ল্যান্ট বিপুল পরিমাণ অর্থ বহন করছিল।'

বিকেল পৌনে ৪টার দিকে ডিবির একটি দল প্রথমে খিলক্ষেত এলাকায় কালো গাড়িটি দেখতে পেয়ে চালকসহ দুজনকে আটক করে এবং গাড়ি ও ৩টি ট্রাঙ্ক জব্দ করে।

জিজ্ঞাসাবাদে চালক জানিয়েছে যে ছিনতাইকারীরা একটি ট্রাঙ্ক নিয়ে ৩০০ ফুট এলাকায় নেমে যায়। 

মিরপুর ডিবির এডিসি সাইফুল ইসলাম জানান, টঙ্গী এলাকা থেকে মাইক্রোবাসটি ভাড়া করা হয়েছিল।

ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের (ডিবিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কাশেম মো. শিরিন দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এটিএম বুথে টাকা রিফিলের জন্য নগদ টাকা বহনে তার ব্যাংক থার্ড পার্টি সংস্থাকে নিয়োগ দিয়েছে।

আবুল কাশেম আরও বলেন, এতে ব্যাংক এবং মানি প্ল্যান্ট কেউই আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হবে না। তার কারণ সেটা একটি বিমা কোম্পানি মাধ্যমে বিমা করা ছিল।

Comments

The Daily Star  | English

US cuts tariffs on Bangladesh to 20% after talks

The deal for Dhaka was secured just hours before a midnight deadline set by President Donald Trump

2h ago