রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ব্যবহারের অনুপযোগী ৬৪২ কোটি টাকার ইভিএম

জাতীয় বাজেট ২৩-২৪
ছবি: সংগৃহীত

প্রায় ৬৪২ কোটি টাকা মূল্যের কমপক্ষে ২৭ হাজার ৯০০টি ইভিএম যথাযথ স্টোরেজ সুবিধা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এই মুহূর্তে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

নির্বাচন কমিশন (ইসি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ইসির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, মাঠ-স্তরের নির্বাচনী অফিস বা স্কুলরুমগুলোতে অযত্নে থাকায় এই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনগুলির বেশিরভাগের নিয়ন্ত্রণ ইউনিট, মনিটর, ব্যাটারি এবং তারগুলো এখন অকার্যকর হয়ে পড়েছে।

ইসি বিভিন্ন নির্বাচনে ব্যবহারের জন্য ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে দেড় লাখ ইভিএম কিনেছে। প্রতিটি ইভিএমের দাম ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকা, যা ভারতে মেশিনের দামের প্রায় ১১ গুণ বেশি।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন স্থানে কার্ডবোর্ডের বাক্সে সংরক্ষণ করা আরও ৪৫ হাজার ৫০০টি ইভিএম স্যাঁতসেঁতে ভাব থেকে ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে। যা আসন্ন নির্বাচনে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে উঠতে পারে।

চলতি মাসের শুরুর দিকে ইসির অভ্যন্তরীণ এক কর্মশালায় দেওয়া এক প্রেজেন্টেশনে দেখা যায়, সারা দেশে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ইসির মাঠ কার্যালয় ও স্কুলরুমে ৯৩ হাজার ইভিএম রাখা আছে।

এতে বলা হয়, 'ইসি অফিসগুলো থেকে পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, এই মুহূর্তে ৩০ শতাংশ মেশিন ব্যবহারের অযোগ্য।'

প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, 'রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ইভিএমের মেয়াদ বা আয়ু কমে যাচ্ছে। এতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মেশিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি কিছু মেশিনের কিছু অংশ হারিয়েও গেছে।'

প্রেজেন্টেশনের একটি অনুলিপি দ্য ডেইলি স্টারের হাতে এসেছে।

একই অনুষ্ঠানে আরেকটি প্রেজেন্টেশনে বলা হয়, দেড় লাখ মেশিনের মধ্যে ইসির ফিল্ড অফিস ও স্কুলগুলোতে ৯৩ হাজার, বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরিতে (বিএমটিএফ) ৫৪ হাজার ৫০০টি এবং রাজধানীর আগারগাঁওয়ে ইসি অফিসের বেসমেন্টে আড়াই হাজার মেশিন সংরক্ষণ করা হয়।

জানতে চাইলে ইভিএমের প্রকল্প পরিচালক সৈয়দ রাকিবুল হাসান স্বীকার করেন, ইভিএম সংরক্ষণের জন্য যথাযথ স্টোরেজ সুবিধা নেই।

তিনি বলেন, 'অনেক ক্ষেত্রে মনিটর ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং তার, আঙ্গুলের সঙ্গে মিলে যাওয়া উপাদান ও ব্যালট ইউনিটের বোতাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মেশিনগুলি স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রাখা হয়েছিল।'

তবে তিনি দাবি করেন, এই সব মেশিন মেরামতযোগ্য। মেশিনগুলো ৫ বছরের সার্ভিস ওয়ারেন্টি এবং এক বছরের পার্টস ওয়ারেন্টিসহ কেনা হয়েছে।

'আমরা ইতোমধ্যে বিএমটিএফের কাছে ১০ হাজার ইভিএম চেকিংয়ের জন্য পাঠিয়েছি,' তিনি যোগ করেন।

রাকিবুল আরও বলেন, এসব মেশিন যদি ঠিক করা যায়, তাহলে আগামী নির্বাচনে ব্যবহার করা হবে।

ইসির অনেক কর্মকর্তা মেশিনের ক্ষতির জন্য ইভিএম স্টোরেজ গাইডলাইন না থাকাকে দায়ী করেছেন।

ভারতে, ইভিএম স্টোরেজের উপর একটি ম্যানুয়াল আছে। এতে বলা হয়েছে, স্টোরেজের জায়গা স্যাঁতসেঁতেভাব, কীটপতঙ্গ, ইঁদুর, জলাবদ্ধতা এবং ছিদ্র মুক্ত হওয়া উচিত। সঠিক বায়ুচলাচল ব্যবস্থা থাকা উচিত।

ভারতীয় নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট মতে, যখন নির্বাচন থাকে না তখন ইভিএমের স্টোরেজ ট্রেজারি, জেলা সদর বা স্থানীয় পর্যায়ে থাকা উচিত। এর মধ্যে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ও অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকা উচিত।

রাকিবুল জানান, ৮ হাজার ৭১১ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় ইভিএমের যথাযথ সংরক্ষণের জন্য তারা ইতিমধ্যে ১০টি অঞ্চলে ১০টি গুদাম স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন। যেখানে সব ধরনের নিরাপত্তা থাকবে।

প্রতিটি গুদামে প্রায় ৪৫ হাজার ইভিএমের জায়গা থাকবে।

ইসি আরো ২ লাখ ইভিএম কেনার প্রকল্প প্রস্তাবের খসড়া তৈরি করে তা অনুমোদনের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে।

প্রধান বিরোধী দলগুলোর আপত্তি সত্ত্বেও আগামী জাতীয় নির্বাচনে ১৫০টি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএম ব্যবহার করার জন্য ইসির ২৩ আগস্টের সিদ্ধান্তের পর অতিরিক্ত ইভিএম কেনার এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।

গত ২৩ আগস্ট নির্বাচন কমিশনারদের বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুযায়ী, কমিশনের কাছে ১ লাখ ৩ হাজার ব্যবহারযোগ্য ইভিএম ছিল। যা ৭০ থেকে ৮০টি আসনের নির্বাচনে ব্যবহার করা যেতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

Freedom fighter’s definition: Confusion, debate over ordinance

Liberation War adviser clarifies that Sheikh Mujib, Tajuddin, others in Mujibnagar govt are freedom fighters

13h ago