একদিন মাছ না ধরলে উপোষ থাকতে হয় তাদের

একদিন মাছ না ধরলে উপোষ থাকতে হয় তাদের
তীব্র শীত উপেক্ষা করে রোবিবার সকালে ঠেলা জাল নিয়ে মাছ ধরতে বের হয়েছেন কামাল হোসেন। ছবি: এস দিলীপ রায়

লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার বালাপুকুর গ্রামের বাসিন্দা কামাল হোসেন। সম্পত্তি বলতে বসতভিটার ৪ শতাংশ জমি ছাড়া আর কিছু নেই। বৃদ্ধ মা, স্ত্রী ও ১ সন্তানকে নিয়ে সংসার তার।

কামাল হোসেন ছোটবেলা থেকে ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে গিয়ে মাছ ধরতে হয় তাকে। একদিন মাছ না ধরলে পরিবারের সবাইকে উপোষ থাকতে হয়। এই শীতেও হাড়-কাঁপানো ঠান্ডা, ঘনকুয়াশা উপেক্ষা করে জলাশয়ে নামতে হয় কামালকে। তবে, নিজে মাছ ধরলেও তাদের কপালে মাছ জোটে না। আর মাংস তো তাদের কাছে অধরা।

কামাল হোসেন বলেন, 'মুই ঠ্যালা জাল দিয়া মাছ ধরোং। কিন্তু হামারগুলার কপালোত আর মাছ খাওয়া জোটে না। বউ ছওয়া মাছ খাবার চায় কিন্তু মুই নিরুপায়।'

রোববারর সকালে ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'খালে-বিলে ঠ্যালা জাল দিয়া যেইকনা মাছ ধরোং তাকে বেচিয়া চাইল ডাইল আনাজ, তরকারি আর লবণ ত্যাল কিনি আনোং। প্রতিদিন কামাই করা টাকা থাকি ২০-২৫ টাকা জমাং। জমা টাকা দিয়া কাপড়চোপড় কেনা নাগে ঘরবাড়ি ঠিক করা নাগে।'

'মুই যদি বউ ছওয়াক মাছ খাওয়াং তাক হইলে চাইল ডাইল আর কেনা হবার নয়। দিনে মাছ ধরিয়া ২০০-২৫০ টাকা কামাই করোং,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'মোকও খুব জার নাগে। বাড়িত থাকি বেরবার মন চায় না কিন্তু বাড়িত থাকি না বেরাইলে মোর কামাইতো আর হবার নয়। মুই যদি কামাই না করোং তাক হইলে বউ ছওয়া না খ্যায় থাইকবে।'

'হামারগুলার কাছে জারের চ্যায়া প্যাটের ভোগ বেশি কষ্ট দ্যায়। প্যাটের ভোগ মেটার জইন্যে জারের কষ্ট বাদ দ্যাওয়া নাগে।'

শুধু কামাল হোসেন নয় ওই গ্রামের এমন অনেকেই ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন। কয়েক বছর আগে জলাশয়ে অনেক মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে তেমন মাছ পাওয়া যায় না। এ পেশার সঙ্গে ছোটবেলা থেকে জড়িত কারণে ছাড়তেও পারছেন না।

'জারের সময় পানি বরফ হয়া যায়। তারপরও পনিত নামিয়া থাকা নাগে। বেশিক্ষণ পানিত থাইকলে গাও বরফ হয়া যায়। হামারগুলার অভ্যাসও হয়া গেইছে। ফির এ্যাকনা পর আগুন পোহাই,' তিনি বলেন।

কামাল হোসেনের স্ত্রী কুলসুম বেগম জানান, তার স্বামী খালে-বিলে মাছ ধরেন। কিন্তু, তাদের কপালে মাছ দিয়ে ভাত খাওয়া জোটে না। আর মাংস! সেতো তাদের কাছে অধরা।

কুলসুম বেগম বলেন, 'হামাকগুলাক ছেড়া কাপড় পিন্দি থাকা নাগে। ঘর দরজাও ঠিকঠাক কইরবার পাইনা। হামারগুলার কষ্টের শ্যাষ নাই। বাড়িত এ্যাকনা গুর-ছাগল চড়াই, না পুষলে তো হামরাগুলার বাঁচিরে পাইলোং না হয়।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

5h ago