কর্মকর্তাকে ‘কমিশন’ দিয়ে নদীর বালু ও নিম্নমানের ইট দিয়ে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ

ঠিকাদারের ভাষ্য, উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে কাজের মোট মূল্যের ১০ শতাংশ কমিশন দিয়ে তিনি এ কাজের অনুমতি নিয়েছেন। 
আলীকদমে এক কিলোমিটার এই সড়কটি নির্মাণে নদীর বালু ও নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ছবি: মংসিং হাই মারমা/স্টার

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় একটি সড়ক নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

আলীকদম-কুরুপপাতা সড়ক থেকে মেরিনচর পাড়া পর্যন্ত ইটের রাস্তা নির্মাণে মাতামুহুরি নদীর বালু ও নিম্নমানের ইট ব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ঠিকাদার বলছেন, উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে কাজের মোট মূল্যের ১০ শতাংশ কমিশন দিয়ে কাজের অনুমতি নিয়েছেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় প্রায় ৯৪ লাখ টাকা খরচে এক কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের কাজটি পেয়েছেন মো. রিটন।

কিন্তু, সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে জানা গেছে কাজ করছেন স্থানীয় ঠিকাদার আবু বক্কর।

পুরো রাস্তাজুড়ে নদীর বালু ব্যবহার করা হয়েছে। রাস্তার পাশেও রাখা আছে বালু।

রাস্তায় ৬ ইঞ্চি বালু ব্যবহারের কথা থাকলেও, তা মানা হচ্ছে না। ছবি: মংসিং হাই মারমা/স্টার

মেরিনচর পাড়ার বাসিন্দারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ওই গ্রামের পাশের মাতামুহুরি নদীর পাড় থেকে প্রতিরাতে বালু তুলে সড়কের কাজে ব্যবহার করছে ঠিকাদার আবু বক্কর।

কাজ পাওয়া ঠিকাদার মো. রিটন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'প্রকল্পের কাজ কাগজে-কলমে আমার নামে। কিন্তু, কাজ করছেন স্থানীয় ঠিকাদার আবু বক্কর।'

নদীর বালু ও নিম্নমানের ইট ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কাজের শিডিউল আমার নামে থাকলেও, আমি আবু বক্করকে বিক্রি করে দিয়েছি। তিনি কোনো শিডিউল মানছেন না।'

স্থানীয় বাসিন্দা মংএখ্যাই মার্মা অভিযোগ করে বলেন, 'আমরা ৩৩ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। এখন পর্যন্ত কোনো রাস্তা হয়নি। এত বছর পর রাস্তা হচ্ছে, তাও কাজের মান খুব নিম্ন। ইটগুলো সব ভাঙা।'

মেরিনচর মার্মা পাড়ার কারবারি মংসাচিং মার্মা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাত ১২টার দিকে পাড়াবাসীরা সবাই ঘুমিয়ে গেলেই নদীর পাড় থেকে বালু তুলে রাস্তায় ঢালা শুরু করে দেয়। ভোর হওয়ার আগেই বালু উত্তোলন বন্ধ। বাধা দিয়েও না মানায়, আমরা বন বিভাগকে জানিয়েছি।'

'বন বিভাগের কর্মকর্তারা আসার পর ২-৩ দিন কাজ বন্ধ থাকে। পরে আবার বালু তোলা শুরু হয়', যোগ করেন তিনি।

অভিযোগ পেয়ে ইউএনও রাস্তায় ব্যবহার করা নিম্নমানের ইট তুলে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন। ছবি: মংসিং হাই মারমা/স্টার

তিনি আরও বলেন, 'ইউএনও এবং প্রকল্প কর্মকর্তাকে অভিযোগ দেওয়ার পর কয়েকজন অফিসার রাস্তার নির্মাণকাজ পরিদর্শনে এসে ঠিকাদার আবু বক্করকে নিম্নমানের ইট তুলে ফেলতে নির্দেশ দেন এবং রাস্তার কাজ বন্ধ রাখতে বলেন। কিন্তু আজ প্রায় এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও এখনো কোনো ইট তোলেনি।'

সংশ্লিষ্ট কাজের শিডিউলে দেখা গেছে, প্রকল্পের রাস্তা নির্মাণে মাটি ভরাট, বেড প্রস্তুতকরণ, বক্স কাটিং, ক্যাম্বারিং, বালু ভরাটকরণ, এজিং, ব্রিক ফ্লাট সলিং, হেরিং বোন বন্ড, প্যালাসাইডিং করার কথা থাকলেও কিছুই মানা হচ্ছে না।

এছাড়া, নির্মাণসামগ্রীর গুণগতমান পরীক্ষা করে রাস্তার কাজে ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলা ছিল। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নথিতে সংরক্ষণ করার কথা থাকলেও, তা করা হয়নি।

রাস্তায় ছয় ইঞ্চি বালু দেওয়ার কথা থাকলেও, দেওয়া হয়েছে এক ইঞ্চি। শিডিউল অনুযায়ী, গাইড ওয়াল, এল ড্রেন ও ড্রাম সিড দেওয়ার কথা থাকলে, কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ড্রেন ছাড়াই।

নদীর বালু ব্যবহারের অনুমতি আছে কি না, জানতে চাইলে ঠিকাদার আবু বক্কর বলেন, 'উপজেলা প্রকল্প অফিসের কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশের অনুমতিতেই এই ইট ও নদীর বালু ব্যবহার করেছি।' 

তিনি আরও বলেন, 'এই কাজের জন্য প্রথমে অফিস খরচ বাবদ কাজের মোট মূল্যের ২ শতাংশ এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশকে আলাদা করে ১০ শতাংশ দিয়ে কাজের অনুমতি পেয়েছি। তাহলে আর ভালো কাজ হবে কী করে।'

'কাজটি আমি ছাড়াও উপজেলার ৩ নম্বর নয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কফিল উদ্দিন, আলীকদম উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি জামাল উদ্দিনসহ আমরা মোট ৩ জন মিলে করছে,' বলেন আবু বক্কর।

অভিযোগের জানতে চাইলে আলীকদম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সৌভ্রাত দাশ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শিডিউল অনুযায়ী কাজ না করলে বিল দেওয়া হবে না।'

ঠিকাদারের কাছ থেকে ১০ শতাংশ টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন, 'আমি কোনো টাকা নিইনি। ব্রিক সলিং রাস্তায় ৬ ইঞ্চি বালু দেওয়ার কথা। বালু কোথা থেকে দেবে সেটা ঠিকাদার জানেন।'

যোগাযোগ করা হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আতাউল গণি ওসমানি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অভিযোগের সত্যতা পেয়ে মেরিনচর পাড়ায় ইটের রাস্তার কাজ বন্ধ করে ইট তুলে নতুন করে কাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago