আওয়ামী লীগ-বিএনপির নজর মিত্রদের দিকে
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) তাদের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের দিকে টানার চেষ্টা করছে।
এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগ তাদের জোটের পরিধি বাড়াতে স্বাধীনতার স্বপক্ষের রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে দলে টানার চেষ্টা করছে। দলটি একই সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটকে আরও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে দলীয় সূত্ররা জানান।
অপরদিকে বিএনপি বাকি সব বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে একই ধরনের সমঝোতায় পৌঁছানোর বিষয়ে নজর দিয়েছে। বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, তারা সমমনা দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন, যাতে সবাই এক হয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্দলীয় সরকারের দাবি বাস্তবায়ন করা যায়।
২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল ও বামপন্থী দলের সমন্বয়ে একটি ১৪ দলীয় জোট গঠন করে। একই সময় তারা জাতীয় পার্টিসহ মহাজোট তৈরি করে এবং নির্বাচনে অংশ নেয়।
সরকারে ছোট দলগুলোর প্রতিনিধিত্ব কম থাকায় ২০১৮ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে ১৪ দলীয় জোটের শরীক দলগুলোর মধ্যে সম্পর্কের অবনতি হয়। কয়েকটি শরীক দল বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠে।
জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অংশীদার ছিল।
তবে সম্প্রতি আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন দেখা দিয়েছে। কারণ ক্ষমতাসীন দল মনে করছে, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বিএনপির নেতাদের সঙ্গে যুগপৎ সরকার বিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে।
গত মাসে জিএম কাদের জানান, তার দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটে নেই।
ক্ষমতাসীন দল এখন ১৪ দলীয় জোটের সদস্য দলগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করছে। ইতোমধ্যে দলগুলোর সঙ্গে একাধিক বৈঠকে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১৫ মার্চ তার 'আদর্শগত জোটের' অংশীদারদের সঙ্গে এক বৈঠকে অংশ নেন। এর আগের ২ নির্বাচনের মতো, ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ ১৪ দলীয় জোটের ব্যানারে অংশগ্রহণ করবে। ২০২৪ সালের শুরুর দিকে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।
জোটের সমন্বয়কারী ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তিদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে জোট সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।
দলের অভ্যন্তরীণ সূত্ররা জানান, আওয়ামী লীগ একইসঙ্গে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিকে মাথায় রেখে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির কলেবর বৃদ্ধির পরিকল্পনা করছে।
তবে ক্ষমতাসীন দল কোনো পাল্টা কর্মসূচী দিতে চাইছে না, কারণ দলের নেতারা মনে করেন এতে সংঘর্ষের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।
এ মুহূর্তে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল পর্যায়ে সম্মেলনের আয়োজন করছে। তাদের বিশ্বাস, এসব সম্মেলন ও নতুন নেতৃত্ব দেশজুড়ে তাদের রাজনৈতিক কর্মসূচিকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
দলের নেতারা জানান, বিএনপির সরকারবিরোধী কর্মসূচি মাত্রা ছাড়িয়ে গেলে তা প্রতিরোধ করা হবে।
ইতোমধ্যে বিএনপি জোটের সদস্য ও সমমনা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা শুরু করেছে। গতকাল রোববার দলটি বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি এবং আজ জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) সঙ্গে আলোচনা করেছে। আলোচনায় তারা নির্বাচনের সময় নির্দলীয় সরকারের দাবিতে আন্দোলন করার বিষয়ে একমত হয়েছে।
প্রথম দফায় বিএনপি নেতারা জাসদ (রব), নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ও গণসংহতি আন্দোলনসহ ২৩টি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
প্রথম দফার আলোচনার পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, দলগুলো যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয়েছে। সর্বশেষ আলোচনায় দলগুলো এই আন্দোলনে যেসব বিষয় ও দাবিদাওয়ার কথা বলা হবে, সেগুলো চূড়ান্ত করছে।
ফখরুল জানান, দ্বিতীয় দফা আলোচনায় বিএনপি আওয়ামী লীগ ছাড়া বাকি সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবে।
বিএনপি যুগপৎ আন্দোলনের সময় ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্য ফ্রন্টকে নিষ্ক্রিয় রাখবে।
সূত্ররা জানান, আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মহলে এই জোটের অন্যতম প্রধান শরীক জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের বিষয়ে আপত্তি থাকায় বিএনপি এই কৌশল অবলম্বন করেছে।
বিএনপির সূত্ররা জানান, দলটি দেশে ও দেশের বাইরে জামায়াতের সঙ্গে তাদের যোগসূত্রের কারণে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছে।
বিএনপির ভেতর থেকেই জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার চাপ রয়েছে। এ ছাড়া, জামায়াতের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে বিএনপির সঙ্গে একই জোটে শরীক হওয়ার ক্ষেত্রেও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো অনীহা দেখিয়েছে।
সংক্ষেপিত: পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে AL, BNP in overdrive to woo allies লিংকে ক্লিক করুন।
অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান
Comments