পথে পথে বাধা পেরিয়ে রাজশাহী আসছেন বিএনপি কর্মীরা

বিভাগের আট জেলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কার্যকর হওয়ায় পথে পথে বাধার মুখেই রাজশাহী শহরে আসছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।
রাজশাহী বিএনপি
রাজশাহীতে শাহ মখদুম ঈদগাহ ময়দানে ত্রিপল ও তাঁবুতে আশ্রয় নিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ছবি: আনোয়ার আলী/ স্টার

রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট কার্যকর হওয়ায় পথে পথে বাধার মুখে রাজশাহী শহরে আসছেন বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

আগামী ৩ ডিসেম্বর নগরীর মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বিভাগীয় সমাবেশে যোগ দিতে তাদের কেউ কেউ ১০ থেকে ৩০ কিলোমিটার হেঁটে রাজশাহী শহরে পৌঁছান বলে জানিয়েছেন।

শুরুতে বিএনপি কর্মীরা খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করলেও পরে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের উদ্যোগে শাহ মখদুম ঈদগাহ ময়দানে ত্রিপল ও তাঁবুর ব্যবস্থা করা হয়।

বিএনপি কর্মীরা জানান, অনেকে শহরে তাদের সহকর্মীদের বাড়িসহ বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন।

শাহ মখদুম ঈদগাহ ময়দানে গিয়ে দেখা যায়, বিএনপির অনেকে তাঁবুর ভেতরে বিশ্রাম নিচ্ছেন, অনেকে রান্নায় ব্যস্ত।

দরগাপাড়ার পদ্মা গার্ডেন কমিউনিটি সেন্টারে এই প্রতিবেদক দেখেন, বিএনপির লোকজন লাইনে দাঁড়িয়ে দুপুরের খাবার সংগ্রহ করছেন।

পরিবহন ধর্মঘটের কারণে বুধবার দুপুর থেকে সমাবেশের তিন দিন আগে বিএনপি নেতা-কর্মীরা রাজশাহী আসতে শুরু করেন।

সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে বিএনপির প্রায় পাঁচ হাজার লোক রাজশাহীতে পৌঁছেছেন।

তাদের অনেককেই পুঠিয়া থেকে হেঁটে আসতে হয়েছে বলে জানান তিনি।

রাত ২টায় রাজশাহীর মোহনপুর উপজেলার কামারপাড়া এলাকায় বগুড়া থেকে বিএনপির প্রায় ৩৫০ জনকে পুলিশ ট্রাক থেকে নামিয়ে দেয় বলে অভিযোগ বিএনপি কর্মীদের।

পুলিশ তাদের ট্রাকগুলোকে ফিরিয়ে দিলে বিএনপির অনেককে প্রায় ৩০ কিলোমিটার হেঁটে শহরে আসতে হয় বলে জানিয়েছেন বগুরা পৌরসভা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম মোর্শেদুল মিঠুন।

বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় সিরাজগঞ্জ থেকে আসা বিএনপির একটি বাস বানেশ্বরে আটকে দেওয়া হয়। বাসে থাকা বিএনপির ৮০ জনের মধ্যে অনেকেই ১৮ কিলোমিটার হেঁটে রাজশাহীতে আসেন বলে জানান বিএনপির কর্মী রফিকুল ইসলাম।

রাজশাহী জেলা কৃষক দলের আহবায়ক শফিকুল আলম সমাপ্ত বলেন, 'মহাসড়কে বাধা পেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিএনপির অনেক লোক তানোর উপজেলা হয়ে বিভিন্ন গ্রামীণ সড়ক দিয়ে রাজশাহীতে আসছিল।

'কিন্তু ওই সব গ্রামীণ রাস্তাও গাছ কেটে অবরোধ করে রাখা হয়,' বলেন তিনি।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ৬০ বছর বয়সী ওয়ার্ড বিএনপি সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম জানান, রাজশাহী যাওয়ার পথে পুলিশ তাকে একাধিক পয়েন্টে থামিয়েছে।

শহরে এসে তিনি দেখতে পান থাকার কোনো জায়গা নেই, খাওয়ার জন্য রেস্তোরাঁ নেই, ওষুধ কেনার মতো ওষুধের দোকান নেই।

তিনি বলেন, 'পরে স্থানীয় বিএনপির লোকজন আমাকে ঈদগাহ ময়দানে নিয়ে এসেছে, যেখানে আমি কিছুটা বিশ্রাম নিতে পারছি।'

সিরাজগঞ্জের ফরিদুল ইসলাম খন্দকার একটি ট্রাকে ত্রিপলের নিচে লুকিয়ে রাজশাহীতে আসেন। কিন্তু পুঠিয়ায় পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং তাদের ফিরিয়ে দেয়।

তিনি বলেন, 'আমরা প্রায় পাঁচ কিলোমিটার পেছনে চলে যাই এবং তারপর অন্য রাস্তা দিয়ে রাজশাহীতে আসি।'

অবসরপ্রাপ্ত স্কুলশিক্ষক মুজিবুল হক জানান, নওগাঁর পোরশা উপজেলা থেকে সাত বার গাড়ি পরিবর্তন করে রাজশাহীতে এসেছেন তিনি।

তিনি বলেন, 'চিকিৎসার জন্য রাজশাহী যাচ্ছি বলে পুলিশের কাছে বলতে হয়েছে।

বিএনপি কর্মীরা জানান, রাজশাহীর সব প্রবেশ পথে বাধা দেয়া হচ্ছে। তারা জানান, বানেশ্বর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার রাস্তা আসতে পুলিশ অন্তত তিন জায়গায় মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার থামিয়ে চেক করছে।

এ বিষয়ে মোহনপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সেলিম বাদশার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কিছু ট্রাকের কোনো কাগজপত্র না থাকায় পুলিশ অনুমতি দেয়নি।

তিনি বলেন, গাড়ির সঙ্গে কোনো কাগজপত্র পাওয়ায় পুলিশ মামলাও করতে পারেনি।

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার রফিকুল আলম বলেন, সমাবেশগামীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে পুলিশ।

এদিকে, সমাবেশের জন্য বিএনপির লোকজন মাদ্রাসা ময়দান সাজাতে শুরু করেছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু বলেন, বিএনপির যেসব ব্যক্তি নগরীর বিভিন্ন মাঠে আশ্রয় নিয়েছেন, পুলিশ অনুমতি দিলে তাদের শুক্রবার সকাল থেকে মাদ্রাসা ময়দানে স্থানান্তর করা হবে।

তিনি প্রায় ১৫ লাখ মানুষের জমায়েতের আশা করে বলেন, 'সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ জনগণকে এই শহর জায়গা দিতে পারবে না। সমাবেশ উপলক্ষে রাজশাহীতে জনতার ঢল নামবে।'

রাজশাহী বিভাগের বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, পরিবহন ধর্মঘটকে বিএনপি ভয় পায় না।

'আমরা উদ্বিগ্ন যে পুলিশ জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে,' তিনি বলেন।

দুলু বলেন, বিভিন্ন বিস্ফোরক মামলায় এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনে বিএনপির অন্তত দেড় হাজার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কয়েকজন নেতা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন বলে জানান তিনি।

এদিকে, পাবনা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনিসুল হক বাবুকে বুধবার রাতে নিজ বাসভবন থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। জেলার বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে বোমা বিস্ফোরণের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Don’t stop till the dream comes true

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus yesterday urged key organisers of the student-led mass uprising to continue their efforts to make students’ and the people’s dream of a new Bangladesh come true.

1h ago