বিএনপি-জামায়াত থেকে সাবধান থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী

‘আপনাদের উন্নয়নের জন্য আমি যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত। শুধু আপনাদের কল্যাণ করাটাই আমার একমাত্র কাম্য।’
বিএনপি-জামায়াত থেকে সাবধান থাকতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

বিএনপি-জামায়াত থেকে সাবধান থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা উন্নয়ন করি, আমরা সৃষ্টি করি—ওরা ভাঙে, ওরা নস্যাৎ করে। ওরা ধ্বংস করতে জানে, মানুষের কল্যাণ করতে জানে না।

আজ শনিবার বিকেলে কক্সবাজারের মহেশখালীর টাউনশিপ মাঠে আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আপনাদের বেঁচে থাকতে হয় সমুদ্রের সঙ্গে যুদ্ধ করে। কাজেই আপনাদের জীবন মান যাতে উন্নত হয়, নিরাপদ হয় তার ব্যবস্থাটাই আমরা করে দিচ্ছি। আমাদের বিশেষ করে এই দ্বীপ অঞ্চলগুলো, এক সময় তো অনেকে ভেবেছিল এখানে আর কিছুই হবে না কিন্তু আজকে আর সেই অন্ধকার দ্বীপ না। আলোকিত দ্বীপ, আলোকিত মহেশখালী, আলোকিত কুতুবদিয়া, আলোকিত এই মাতারবাড়ী-বদরখালী সব। সব জায়গায় আমরা সেই ব্যবস্থা করে দিচ্ছি, কাজেই আমরা চাই আমাদের এই দেশ আরও উন্নত হোক, আরও সুন্দর হোক।

'একটা কথা মনে রাখতে হবে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। মানুষের জন্য আমরা কাজ করি। আর অন্য একটি দল আছে, এরা মানুষের সম্পদ লুটে খায়। এরা খুন, হত্যা, বোমাবাজি, গ্রেনেড হামলা, চোরাকারবারি, অস্ত্র চোরাকারবারি এগুলো তারা জানে। মানুষের কল্যাণে তারা কাজ করতে পারে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, '১৫ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশ, যে পরিবর্তন আমরা করেছি, আজকে যার বয়স ১৫ বছর; সে মনে করবে এটা তো সে রকমই ছিল কিন্তু তা না। এমনকি ২০ বছরের যে ছেলে, ২৫ বছর হয়েছে, সে একবার চিন্তা করে দেখুক! বাংলাদেশ এখন বদলে গেছে। কারণটা হলো আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে কীভাবে? নৌকা মার্কায় ভোট দিয়েছেন বলেই, আপনারা সংসদ নির্বাচিত করেছেন বলেই আমরা সরকার গঠন করতে পেরেছি।

'আজকে আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত করে দিয়েছেন। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। আগামীতে নির্বাচন, সেই নির্বাচনেও আমি আপনাদের কাছে চাইবো যে, আপনারা ওই নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে; যেন আপনাদের সেবা করতে পারি আর যে কাজগুলো এখনো বাকি, সে কাজগুলো যেন এসে করতে পারি, তার জন্য আমি আপনাদের কাছে নৌকা মার্কা ভোট চাই,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।

এ সময় তিনি প্রশ্ন রাখেন, আপনারা কি নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন? এ সময় নেতাকর্মীরা স্লোগান 'নৌকা', 'নৌকা' দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, 'আমার বাবা এ দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। আপনাদের ভাগ্য গড়া আমাদের কাজ। আপনারা জানেন, আমি কয়েক দিন আগে সৌদি আরব গিয়েছিলাম। আমি মদিনা শরীফ নবী করিম (সা.) এর রওজা জিয়ারত করেছি। মক্কায় আমি ওমরা পালন করেছি। আমি বাংলাদেশের জনগণের জন্য, যেভাবে আমি আমার নিজের সন্তানের জন্য দোয়া চাই, সেইভাবে বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমি দোয়া চেয়েছি যে, এই বাংলাদেশের মানুষের যেন আর কষ্ট করতে না হয়। তারা যেন সুন্দর জীবন পায়, সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে।'

তিনি আরও বলেন, 'আপনাদের জন্য আমার বাবা সারা জীবন কষ্ট করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের জনগণের কল্যাণ চেয়েছেন। আমি তার কন্যা, আমার একটাই দায়িত্ব; বাংলাদেশের প্রতি মানুষ ঘর পাবে, রোগের চিকিৎসা পাবে, প্রতিটি ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখবে, মানুষের মতো মানুষ হবে, বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ হবে। বাংলাদেশ বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।

'বাংলাদেশকে জাতির পিতা স্বল্পোন্নত দেশে রেখে গিয়েছিলেন। তার আদর্শ বুকে নিয়ে, তারই পদাঙ্ক অনুসরণ করে আজকে বাংলাদেশকে আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় উন্নীত করেছি। সেটা আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এটা বাস্তবায়ন করতে হলে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকেই জয়ী করতে হবে। আওয়ামী লীগই পারবে অন্য কেউ পারবে না। কারণ তাদের কোনো দেশপ্রেমও নাই, মানুষের প্রতিও তাদের কোনো দায়িত্ববোধ নাই,' বলেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরও বলেন, 'কোনো মানুষের মধ্যে যদি মনুষ্যত্ববোধ থাকে তাহলে জীবন্ত মানুষকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে পারে না। ওই ঢাকা শহর যান, বিভিন্ন জায়গায় যান, জীবন্ত মানুষগুলোকে ওই বিএনপি-জামায়াত পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করছে, গাড়ি-ঘোড়া সব পুড়িয়ে দিচ্ছে। মানুষকে পুড়িয়ে মারা, সম্পদ পুড়িয়ে নষ্ট করা, এটাই তাদের কাজ। আমরা উন্নয়ন করি, আমরা সৃষ্টি করি—ওরা ভাঙে, ওরা নস্যাৎ করে। ওরা ধ্বংস করতে জানে, মানুষের কল্যাণ করতে জানে না। কাজেই এদের থেকে জনগণকে সাবধান থাকতে হবে।'

'আমি এটুকুই বলবো, আজকে বাবা-মা, ভাই সব হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। শুধু একটাই কাজ যে, বাংলাদেশের মানুষ যেন ভালো থাকে। বাংলাদেশের মানুষ যেন উন্নত থাকে। যেভাবে আমার বাবা স্বপ্ন দেখেছিলেন ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা, সেই বাংলাদেশই আমি গড়তে চাই। আমার বাবার স্বপ্নটাই আমি পূরণ করতে চাই,' যোগ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, 'আমি যেদিন বাংলাদেশে ফিরে এসেছি, আমার কেউ ছিল না। যাদেরকে রেখে গেছি, এয়ারপোর্টে এসেছিল আমার ভাইয়েরা, আমি তাদের পাইনি। পেয়েছিলাম সারি সারি শুধু কবর। আর এই বাংলাদেশের মানুষকেই আমি আমার পরিবার হিসেবে নিয়েছি। আপনাদের মাঝেই আমি ফিরে পেয়েছি আমার বাবার স্নেহ, মায়ের স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ। কাজেই আপনাদের কল্যাণের জন্য, আপনাদের উন্নয়নের জন্য আমি যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। প্রয়োজনে বাবার মতো বুকের রক্ত দিতেও আমি প্রস্তুত। শুধু আপনাদের কল্যাণ করাটাই আমার একমাত্র কাম্য।'

Comments