এক মাসে বিএনপি-জামায়াতের ৬১০ নেতাকর্মীর কারাদণ্ড

এত কম সময়ের মধ্যে পুরোনো মামলায় বিপুল সংখ্যক লোককে সাজা দেওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা।
নেতাকর্মী কারাগারে
ছেলে আরিফ হোসেনের ছবি নিয়ে কাঁদছেন বাবা মঞ্জু মিয়া। গত ৫ নভেম্বর ভোরে ডেমরা থানা পুলিশ আরিফকে গ্রেপ্তার করে। ছবি: আনিসুর রহমান/স্টার

নাশকতা মামলায় রাজধানীতে কয়েক বছর আগে দায়ের করা মামলায় গত এক মাসে বিএনপি-জামায়াত ও এদের অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ৬১০ নেতাকর্মীকে নানান মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

এর মধ্যে ২০১২ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের নভেম্বরের মধ্যে দায়ের করা ৩০টি মামলায়ও অনেককে দোষী সাব্যস্ত করেছেন আদালত। বিনা অনুমতিতে রাস্তায় জমায়েত, নাশকতা, সম্পদের ক্ষতি করা, যানবাহনে আগুন দেওয়া ও ভাঙচুর এবং পুলিশের ওপর হামলা ও পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলাগুলো দায়ের করা হয়।

এত কম সময়ের মধ্যে পুরোনো মামলায় বিপুল সংখ্যক লোককে সাজা দেওয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মীরা।

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মানবাধিকারকর্মী জেড আই খান পান্না দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এত তাড়াহুড়ো করে এতজনকে দোষী সাব্যস্ত করা ও সাজা দেওয়া আইনের শাসনের পরিপন্থি। দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের কি আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছিল? সাক্ষ্য দেওয়ার আগে সাক্ষীদের জবানবন্দিগুলো ক্রস-চেক করা হয়েছিল?'

'এমনকি মৃত ব্যক্তিদেরও মামলায় আসামি এবং দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে বলে জানা গেছে' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'আমি জানি না আলাদিনের চেরাগ দিয়ে এই মামলাগুলোর সমাধান করা হয়েছে কি না।'

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির নেতাকর্মীদের সাজা ও কারাদণ্ডের ঘটনায় বিচার বিভাগ বিশেষ করে নিম্ন আদালত সম্পর্কে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে। আইন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট আদালতের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করছে কি না তা খতিয়ে দেখার জন্য আমি প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ করছি।'

গত মাসে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছিলেন, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার বিচার প্রক্রিয়ায় সরকার হস্তক্ষেপ করে না।

'বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ দিকে, গত এক মাসে দোষী সাব্যস্ত হওয়া ৬১০ জনের মধ্যে গতকাল রোববার ৭৩ জনকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। ২০১৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার বংশাল, কলাবাগান ও কোতোয়ালি এলাকায় নাশকতার মামলায় তাদের কারাগারে রাখা হয়েছিল।

এর মধ্যে ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকার বংশাল থানায় দায়ের করা এক মামলায় বিএনপির ২৫ নেতাকর্মীকে পৃথক দুই ধারায় তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শেখ সাদী এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় কোনো আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের চার জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

মামলার নথি অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ৬ সেপ্টেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বংশাল থানা এলাকায় মিছিল বের করে বিএনপি। বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অনুমতি ছাড়াই আহমদ বাওয়ানী স্কুলের সামনে জড়ো হন। তারা যানবাহন ও দোকানপাট ভাঙচুর করেন।

২০১৩ সালের নভেম্বরে কলাবাগানে নাশকতার দায়ে ঢাকার আরেকটি আদালত ৪০ বিএনপি নেতাকর্মীকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেন। এ মামলায় ২৬ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলী হায়দার। মামলার বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের ছয় জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ৫০ থেকে ৬০ বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মী ১৮ দলীয় জোটের কর্মসূচি চলাকালে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও তিন থেকে চারটি ককটেল নিক্ষেপ করে। তারা সেখানে কর্তব্যরত পুলিশকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেন।

এ ছাড়াও, অবরোধে নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর কোতোয়ালি থানার আরেক মামলায় বিএনপির আট নেতাকর্মীকে দেড় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন। এ মামলায় ১২ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের খালাস দেওয়া হয়। মামলার বিচার চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষের চার জন আদালতে সাক্ষ্য দেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২০১৫ সালের ১০ জানুয়ারি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা অবরোধের সময় আসামিরা কোতোয়ালির বাবুবাজার মাজার এলাকায় বিনা অনুমতিতে জড়ো হয়ে একটি কাভার্ড ভ্যানে আগুন দেন।

Comments