ব্যাংক একীভূত করে আরেকটা দুর্নীতির ব্যবস্থা হচ্ছে: মির্জা ফখরুল

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে বক্তব্য দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল। ছবি: সংগৃহীত

ব্যাংক লোপাট করে দিয়ে এখন ব্যাংক একীভূত করে আরেকটা দুর্নীতির ব্যবস্থা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ সোমবার দুপুরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, 'ফকির আলমগীরের (প্রয়াত গণসঙ্গীত শিল্পী) একটা গান আছে—দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারও দানে নয়। আমরা রক্তের দাম দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। কারও দয়ায় বাংলাদেশ স্বাধীন হয় নাই।'

সমাবেশে উপস্থিত জনতার উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আজ সেই বোধ নিয়ে রুখে দাঁড়ান। আন্তর্জাতিক বিশ্ব নিশ্চয়ই সেই বিষয়গুলো তারা দেখবে, দেখেছে অতীতে। আর কোনো দেশ যদি আমাদের মনে করে যে, আমাদের ওপর প্রভুত্ব করবে, বাংলাদেশের মানুষ কোনোদিন সেই প্রভুত্ব স্বীকার করে নাই—মুঘল আমলেও করেনি, ব্রিটিশ আমলেও করেনি, পাকিস্তান আমলেও করেনি, এখনো করবে না।'

তরুণ সমাজকে জেগে ওঠার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমি বৃদ্ধ মানুষ হয়ে গেছি। হাফিজ (হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম) ভাই আমার চেয়েও বড়। আমরা এখনো লড়ছি, কথা বলছি, লড়ে যাচ্ছি। কিন্তু আমরা এখনো বিশ্বাস করি, এই দেশকে পরাধীন করে রাখার ক্ষমতা কারও নেই। আমরা বিশ্বাস করি এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী একটা রেজিম একটা শাসকগোষ্ঠী যারা আজ জোর করে, কলা-কৌশল করে, বিভিন্ন নাটক করে ক্ষমতা দখল করে আছে তাদের একদিন চলে যেতেই হবে।'

'সেজন্য বলি, মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নামতে হবে। মানুষকে সঙ্গে নিয়ে না নামলে আপনারা জয়ী হতে পারবেন না। সেই মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কিছুক্ষণ আগে এখান দিয়ে রিকশা শ্রমিক ভাইয়েরা গেলেন। এরকম শ্রমিক ভাইদেরকে নামাতে হবে। এরকম সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ভাইদের আনতে হবে। সব জায়গা থেকে মানুষ উঠে আসবে যেদিন, সেদিন হবে সত্যিকার অর্থেই সফল গণঅভ্যুত্থান, সফল বিস্ফোরণ—বিজয়।'

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিএনপির স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কমিটির উদ্যোগে এ মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ হয়। সমাবেশের ব্যানারে 'ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন' লেখা ছিল।

সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা শেষে শনিবার দেশে ফিরে আসার পর এটি মির্জা ফখরুলের প্রথম রাজনৈতিক কর্মসূচি।

'ব্যাংক একীভূত আরেকটা দুর্নীতির কৌশল'

সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন, 'সরকার বলে, দারিদ্র্যের সংখ্যা নাকি কমে এসেছে ১৯ শতাংশ। নিরাপত্তা বেষ্টনীর কর্মসূচির আওতায় সরকার যে ভাতা দেয়, দুঃস্থ ভাতা, বিধবা ভাতা, দরিদ্র ভাতা সেটা ৩৮ শতাংশে নিয়ে যায়। পত্রিকা বলছে, ওখানেও (দরিদ্র ভাতা) এরা ভাগ বসায়, তাদের জন্য বরাদ্দের টাকা নিয়ে যায়। এভাবে হাজার হাজার কোটি টাকা তারা বিদেশে পাচার করেছে। টাকার কোনো হিসাব নাই।'

'ব্যাংক লোপাট করে দিয়ে এখন ব্যাংক একীভূত হচ্ছে। এটা আবার আরেকটা দুর্নীতির ব্যবস্থা তৈরি করছে,' যোগ করেন তিনি।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যৌন হয়রানির প্রসঙ্গ তুলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকরা ছাত্রীদের শ্লীলতাহানি করেছে। আপনারা কী করছেন? উত্তর দিতে পারবেন না। একটা প্রতিবাদ পর্যন্ত করেন নাই। এই যে মেয়েরা বসে আছে আপনারা প্রতিবাদ করেন নাই। আমি কিছুক্ষণ আগে ফজলুর রহমান সাহেবের সঙ্গে কথা বলছিলাম। কোথায় গেলো সেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, কোথায় গেলো ছাত্ররা যারা স্বাধীনতা যুদ্ধ করেছে, বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন করেছে, ৬৯ এর আন্দোলন করেছে, ৯০ এর আন্দোলন করেছে কোথায় গেছে তারা।'

'আজ ছাত্রদলের নেতারা এখানে যারা আছেন এভাবে শুধু শ্লোগান দিলে হবে না, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংগঠন গড়ে তুলতে হবে। কিছুক্ষণ আগেই আমাদের পুরোনো মুক্তিযোদ্ধা ভালো সংগঠক বলছিলেন, ইনফ্যান্ট্রি যদি শক্তিশালী না হয় তাহলে যুদ্ধ কে করবে? ইনফ্যান্ট্রিকে শক্তিশালী করতে হবে, যারা পুলিশের হুইসেল শুনলে দৌড়াবে না, যারা সাউন্ড গ্রেনেডের শব্দ শুনলে পালাবে না, যারা রাস্তায় অনড় হয়ে প্রাণ দেবে, দাঁড়িয়ে থাকবে এই মানুষগুলো তৈরি করতে হবে, সেই সাহস বুকে তৈরি করে দাঁড়াতে হবে।'

একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, 'যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। আমি জানি আমার বহু ছেলেরা সেভাবে কষ্ট করছে, তারা কেউ বাড়িতে থাকতে পারে না, তাদের চাকরি-বাকরি নাই, টাকা-পয়সা নাই, তাদের কোনো ভবিষ্যৎ নাই। তারা লড়াই করছে দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য।'

'এই গণতন্ত্র ফেরানোর বিষয়টি ছড়িয়ে দিতে হবে সারাদেশে তরুণ সমাজের মধ্যে। সেই সাহস ও বোধ তৈরি করতে হবে যে আমি যা করছি তা আমার দেশের জন্য করছি, আমি যা করছি তা আমার গণতন্ত্রকে রক্ষা করার জন্য করছি, আমি যা করছি তা আমার দেশমাতৃকাকে রক্ষা করার জন্য করছি,' বলেন তিনি।

'ইমরান খানের দিকে তাকান'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'পাকিস্তানের দিকে তাকিয়ে দেখেন। ইমরান খান দেখিয়ে দিয়েছেন যে কীভাবে তরুণদের মাঠে নিয়ে আসতে হয়। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে নারীদের মাঠে আনতে হয়। আমাদের চেয়ে কম অত্যাচার তাদের ওপর হয়নি। তারা সেনানিবাস আক্রমণ করেছিল, তারা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। পাকিস্তানে এই অবস্থান নিয়ে কেউ কোনোদিন রাজনীতিতে টিকতে পারে নাই।'

তিনি বলেন, 'ইমরান খান জেলে গেছে, ৩৪ বছর সাজা হয়েছে, তার ২ হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, জোর করে দল বদল করা হয়েছে। তারপরেও জেলে বসে যখন তার দলের মার্কা নিয়ে গেছে, তখন তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচনে যাও। এই সেই নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে কারা—এই তরুণেরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আপনারা সবাই ব্যবহার করেন। সেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে হবে।'

একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, 'আজ ২৫ মার্চের কালো রাত। আওয়ামী লীগ অস্বীকার করতে পারে, সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ চেষ্টা করেছে পাকিস্তানের সঙ্গে একটা দফা-রফা করার জন্য। যখন ব্যর্থ হয়েছে, যখন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টসহ জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা ছেড়ে চলে গেছে তখন আমাদের তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ তারা কেউ দেশে থাকেননি, পালিয়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। আর মূল নেতাকে পাকিস্তানিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে তিনি পাকিস্তান চলে গেছেন।'

'তারপর শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার মধ্য দিয়ে সব মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ে যুদ্ধ করেছিল বলেই ১৯৭১ সালে আমরা দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি,' বলেন তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজের সভাপতিত্বে ও মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক আহমেদ খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য জয়নুল আবদিন ফারুক, ফজলুর রহমান, ফরহাদ হালিম ডোনার, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, জয়নাল আবেদীন প্রমুখ বক্তব্য দেন।

 

Comments

The Daily Star  | English
India’s stance on Sheikh Hasina's extradition

NIDs of Hasina, 9 family members 'locked'

The NIDs of the 10 listed individuals were locked through an official letter on April 16

21m ago