আলোয় ঝলমলে রাতের জাম্বুরি পার্ক

জাম্বুরি পার্কের ফোয়ারা। ছবি: অরুণ বিকাশ দে

শীতের বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা হলো দ্রুত। চারপাশে ঠাণ্ডা বাতাস। কিন্তু দর্শনার্থীদের মধ্যে ঘরে ফেরার তাড়া নেই। বরং সন্ধ্যায় বন্দরনগরীর জাম্বুরি পার্কের সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য—আলোকসজ্জা প্রদর্শনী—যা দেখার অপেক্ষাতেই ছিলেন দর্শনার্থীরা।

জাম্বুরি পার্কের সৌন্দর্য যেমন দিনে যেমন দৃষ্টিনন্দন, তেমনি রাতেও বেশ ঝলমলে। প্রতি সন্ধ্যায় পার্কের সৌন্দর্য অবলোকন করতে আসেন কয়েকশ দর্শনার্থী। বিশেষ করে আলোকসজ্জা প্রদর্শনী সবচেয়ে বেশি উপভোগ করতে দেখা যায় শিশু ও তরুণদের।  

আগ্রাবাদ এলাকায় অবস্থিত পার্কটি ইতোমধ্যে বন্দরনগরীর বিনোদন প্রত্যাশীদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। 

জাম্বুরি পার্কের লেক। ছবি: অরুণ বিকাশ দে

পার্কের ৫০ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে একটি অ্যামিবা আকৃতির জলাধার রয়েছে। জলাশয়ের পাড়ে বসে সময় কাটানোর জন্য রয়েছে দুই ধাপের তিনটি গ্যালারি।

জলাশয়ে দুটি জলের ফোয়ারা রয়েছে। সন্ধ্যায় উভয় ফোয়ারায় আলোকসজ্জা প্রদর্শন করা হয়। আলোকসজ্জা উপভোগ করতে আসা দর্শনার্থীদের বিকেলে গড়িয়ে সন্ধ্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে  ফোয়ারার চারপাশে ভিড় করতে দেখা যায়। 

পার্কের ভেতরে প্রায় ৮ হাজার ফুট চলাচলের রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। স্বাস্থ্য সচেতন মানুষরা ভোরে ও সন্ধ্যায় পার্কে হাঁটতে আসেন। 

পার্কটিতে ৬৫ প্রজাতির প্রায় ১০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে যা পুরো জায়গাটিকে সবুজ চেহারা দিয়েছে। অনেকে পরিবার নিয়ে গাছের নিচে ঘাসে বসে থাকেন।

জাম্বুরি পার্কের ওয়াকওয়ে। ছবি: অরুণ বিকাশ দে

কয়েকবছর আগেও জায়গাটা এমন ছিল না। প্রায় সাড়ে ৮ একর জমিতে এই মাঠটিতে স্কাউটদের জাম্বুরি অনুষ্ঠিত হতো। 

স্থানীয়রা জানায়, রাতে মাদকসেবীদের আড্ডা বসত এখানে।

২০১৮ সালে গণপূর্ত বিভাগ ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মাঠটিকে পার্কে রূপান্তর করে। তৎকালীন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী পার্কটি নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে কর্মকর্তা ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

গত সপ্তাহে সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে পার্কে গিয়েছিলেন শুভেচ্ছা ঘোষ। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, পার্কটি এত সুন্দর করে তৈরি হয়েছে সেটি তার জানা ছিল না। 

তিনি বলেন, 'এখানে না এলে পার্কের প্রাকৃতিক ও নান্দনিক স্থাপত্যের মিশেলে দৃষ্টিনন্দন সৌন্দর্য দেখা হতো না। আমার বাচ্চাটা আলোকসজ্জা বেশ উপভোগ করছে। আমারও ভালো লাগছে লেকের পাশ দিয়ে হাঁটতে।'

জাম্বুরি পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। ছবি: অরুণ বিকাশ দে

পার্কের আকর্ষণের বিষয়ে আগ্রাবাদ এলাকার বাসিন্দা শামসুন্নাহার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আগে বৃহত্তর আগ্রাবাদ এলাকায় এমন কোনো পার্ক ছিল না যেখানে দর্শনার্থীরা অবাধে প্রবেশ করতে পারে। এমন আধুনিক পার্কে আমরা বিনামূল্যে প্রবেশ করতে পারি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারি।'

হালিশহর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হালিম তার ছেলেকে নিয়ে পার্কে এসেছিলেন। তিনি বলেন, 'আমি সাত বছর পর ইউরোপ থেকে দেশে এসেছি। আমার ছেলে আমাকে পার্কে আসতে উৎসাহ দিয়েছে। পার্কের সৌন্দর্য দেখে আমি আশ্চর্য হয়েছি।'

'তবে কিছু দর্শনার্থী লেকে প্লাস্টিকের বোতল ফেলে পরিবেশ দূষণ করছে। এই পার্ক পরিষ্কার ও দূষণমুক্ত রাখা আমাদের দায়িত্ব,' বলেন তিনি।

পার্কের কর্মীরা জানান, পার্কটি ভোরে সাড়ে ৫টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত এবং বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

সকাল ও সন্ধ্যায় হাঁটার সুবিধার কথা বিবেচনা করে পার্কের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে বলে জানান তারা। 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh asks India to halt border push-ins, cites security concerns

The move follows reports that BSF pushed in around 300 people into Bangladesh between May 7 and May 9

51m ago