ইউক্রেন একদিন রাশিয়ার অংশ হতে পারে: জেলেনস্কিকে ট্রাম্পের হুমকি

ইউক্রেনে শান্তি ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এখন যুদ্ধে সহযোগিতার জন্য কিয়েভের কাছে মূল্যবান খনিজ সম্পদ দাবি করেছেন। এতে রাজি না হলে 'ইউক্রেন একদিন রাশিয়ার অংশ হয়ে যেতে পারে' বলে হুমকি দিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে ট্রাম্পের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারের বরাত দিয়ে এ খবর জানায় সিএনএন।
সিএনএনের মতে, ট্রাম্পের এই মন্তব্যে মস্কোর আক্রমণের বিরুদ্ধে পশ্চিমা সমর্থনে প্রায় তিন বছর ধরে আত্মরক্ষা করে যাওয়া ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।
সোমবার ফক্স নিউজে প্রচারিত সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প তার প্রশাসনের যুদ্ধ বন্ধের প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেন। সেখানে তিনি এই যুদ্ধে ইউক্রেনকে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সামরিক সহায়তার বিনিময়ে কিয়েভকেও পাল্টা সম্পদ বা অর্থ দেওয়ার দাবি জানান।
ট্রাম্প বলেন, 'তাদের (জেলেনস্কি প্রশাসনকে) বলেছি, ৫০০ বিলিয়ন ডলারের সমমূল্যের বিরল খনিজ চাই আমি। তারা এতে একরকম সম্মতি দিয়েছে, যাতে আমাদের গর্দভের মতো না দেখায়। না হলে (কোনো প্রতিদান না নিলে) আমরা তো গর্দভ। আমি বলেছি আমাদের (বিনিময়ে) কিছু দিতেই হবে। আমরা আজীবন এভাবে অর্থ দিয়ে যেতে পারি না।'
'ওই অঞ্চলের জমি অনেক মূল্যবান। অনেক বিরল খনিজ, তেল ও গ্যাস আছে সেখানে। আমাদের অর্থের প্রতিদান হিসেবে কিছু চাই আমি,' যোগ করেন ট্রাম্প।
প্রতিদান হিসেবে কিছু না দিলে কী হতে পারে, তা নিয়েও অশনি সংকেত দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। বলেছেন, 'তারা (ইউক্রেন) কোনো সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে, আবার নাও পৌঁছাতে পারে। এভাবে তারা একদিন রাশিয়ার অংশ হয়ে যেতে পারে, বা নাও পারে।'
সিএনএনের মতে, ট্রাম্পের এই মন্তব্য ক্রেমলিনের মনোবল আরও বাড়াবে। রাশিয়া ইতোমধ্যে ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলের দখল নিয়েছে এবং ইউক্রেনকে পূর্ণ আত্মসমর্পণ করানোর চেষ্টা করছে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মঙ্গলবার সাংবাদিকদের বলেন, 'ইউক্রেনের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে চায় এবং তারা ইতোমধ্যে রাশিয়ার অংশ হয়ে গেছে।'
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন আক্রমণ শুরু করার পর রাশিয়া এখন দেশটির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে। ২০২৩ সালে চার অধিকৃত অঞ্চল—দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিজঝিয়া ও খেরসনে একটি প্রশ্নবিদ্ধ গণভোটের আয়োজন করে মস্কো। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা একে ক্রেমলিনের 'প্রোপাগান্ডা' বলে আখ্যায়িত করলেও পেসকভের দাবি, এই গণভোটে 'অনেক বিপদের মাঝেও মানুষ সারিবদ্ধ হয়ে ভোট দিয়েছে'।
এই গণভোট 'প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মন্তব্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ' বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর আগে 'রুশ ও ইউক্রেনীয়রা একই জাতি—একটি অবিচ্ছেদ্য সত্তা' বলে মন্তব্য করা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ট্রাম্পের এই মন্তব্য আরও উৎসাহ দিতে পারে।
বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, 'একটি জাতিগোষ্ঠীর নিজ ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার রক্ষা করতে' এবং 'বলপ্রয়োগের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত পরিবর্তনের চেষ্টা প্রতিরোধ করতে' ইউক্রেনকে সহায়তা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের লেনদেনকেন্দ্রিক ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ইউক্রেনের জন্য নতুন।
এদিকে সোমবার ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির জানিয়েছেন, ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সসহ 'ট্রাম্প প্রশাসনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি' এ সপ্তাহে ইউক্রেন সফর করবেন।
Comments