‘তিস্তা হামাকগুলাক নিঃস্ব করি দ্যাইল’

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশ্যাম গ্রামের তিস্তার ভাঙন। ২৭ জুন ২০২২। ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

আকস্মিক বন্যার পর কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে তিস্তার ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে বসতভিটা, আবাদি জমি ও বিভিন্ন স্থাপনা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, কুড়িগ্রামের রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার ৮টি স্থানে তিস্তার ভাঙন চলছে।

গত ২৪ জুন থেকে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত সেখানে ২৬টি বসতভিটা ও ১৬০ বিঘা আবাদি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী ও হাতীবান্ধা ১৫টি স্থানে তিস্তার ভাঙন দেখা দিয়েছে। একই সময়ে নদীগর্ভে চলে গেছে ২৯টি বসতভিটা ও ১৪০ বিঘা আবাদি জমি।

সেসব স্থানে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

তিস্তার ভাঙনে গৃহহারা কৃষক আব্দুল গফুর (৬০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তা হামাকগুলাক বাস্তুভিটা কারি ছাড়িল। এ্যালা হামরা খোলা আকাশের নিচোত বাস কইরবার নাগছি।'

'তিস্তা মোর সোকগুলা জমিজমা খাইছে। ১৫ শতকের বাস্তুভিটাটাও গিলি খাইল,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'মোর ম্যালা মাটি আছিলো। এ্যাকনা ঘর তুইলবার জাগাও নাই।'

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়নের গতিয়াশ্যাম গ্রামের এই কৃষকের বসতভিটা গত রোববার বিকেলে তিস্তার উদরে বিলীন হয়। স্থানীয়দের সহায়তায় তিনি ৩টি ঘর সরিয়ে অন্যের জমিতে রেখেছেন।

একই এলাকার কৃষক আমিনুল ইসলাম (৫৮) ডেইলি স্টারকে জানান, তার প্রায় ২০ বিঘা জমি তিস্তায় হারিয়েছে। ১০ শতাংশ জমির বসতভিটা গত রোববার বিকেলে চলে নদীতে চলে যায়। তিনি বলেন, 'তিস্তা হামাকগুলাক নিঃস্ব করি দ্যাইল। ঘর তোলার মতো এ্যাকনা জাগাও আর নাই। এ্যালা হামরা কোনটে যামো তার কোন ঠিকানা নাই।'

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটের ২২ থেকে ২৫টি স্থানে তিস্তার ভাঙন দেখা দিয়েছে। কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশ্যাম এবং লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা গ্রামে ভাঙন তীব্র হয়েছে।

প্রতিদিন তিস্তার উদরে চলে যাচ্ছে বসতভিটা, আবাদি জমি, ফলের বাগান ও নানা স্থাপনা। গত ৫ দিনে নদীগর্ভে ৫৫টি বসতভিটা ও ৩০০ শতাধিক বিঘা আবাদি জমি বিলীন হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে।

ছবি: এস দিলীপ রায়/স্টার

লালমনিরহাট সদর উপজেলার গোকুন্ডা গ্রামের ভাঙনকবলিত কৃষক আফছার আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তিস্তার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করছে। প্রতিদিন নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে বসতভিটা ও আবাদি জমি। নদীভাঙন থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিরাপদ স্থানে যাচ্ছেন। অনেকে রাস্তার পাশে ঘর ফেলে রেখেছেন।'

কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার গতিয়াশ্যাম গ্রামের ভাঙনকবলিত কৃষক আব্দুস সামাদ (৫৬) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। ঘর সরিয়ে অন্যের জমিতে রেখেছি। গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকটি ভাঙন-হুমকিতে আছে।'

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মাহমুদ হাসান ডেইলি স্টারকে জানান, গতিয়াশ্যাম গ্রামে ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ক্লিনিকটি ভাঙনের ঝুঁকিমুক্ত করা হয়েছে। এই গ্রামে ভাঙন ঠেকাতে সব প্রস্তুতি আছে।

Comments

The Daily Star  | English

BNP rally begins at Nayapaltan

The rally will conclude at Manik Mia Avenue, where the closing speech will be delivered by Tarique Rahman

44m ago