নির্বাচন কঠিন কাজ: সিইসি

নির্বাচনকে ‘কঠিন কাজ’ উল্লেখ করে সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তা মোকাবিলা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।
সিইসি
সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। ফাইল ছবি

নির্বাচনকে 'কঠিন কাজ' উল্লেখ করে সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে তা মোকাবিলা করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।

আজ সোমবার বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সঙ্গে সংলাপের সমাপনী বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি।

সিইসি বলেন, 'নির্বাচনের সময় যেটা হবে, তখন সরকার থাকবে। যে সরকারই হোক, একটা সরকার তো থাকবে। সরকার আমাদের সহযোগিতা করবে। আমরা সরকারের ওপর প্রাধান্য বিস্তার করতে পারব। আমরা বলব, এই এই সহযোগিতাগুলো আমাদেরকে দিতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, সরকার তখন না করতে পারবেন না, তাহলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে।'

তিনি আরও বলেন, 'আইনের আলোকেই আমরা সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা চাইব এবং সে বিষয়েও আমাদের ভূমিকাটা দেখবেন। আমাদের ওপরে আরোপিত ক্ষমতাটার কমান্ড আমার হাতে। কিন্তু, শক্তিটা পুলিশের হাতে, শক্তিটা বিজিবির হাতে, শক্তিটা সেনাবাহিনীর হাতে। শক্তিটা আমার হাতে নয়, কমান্ডটা আমার হাতে আছে। আমরা কমান্ড করলে যেন শক্তিটা রেসপন্স করে, সেই ধরনের অবস্থা আমাদেরকে সৃষ্টি করতে হবে। নির্বাচনের প্রয়োজনেই সেটি অপরিহার্যভাবে প্রয়োজন।'

'পরিশেষে আমি বলতে চাই, নির্বাচনের কাজটি খুব সহজ নয়, কঠিন। কঠিন হলেও এটাকে আমাদের চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিতে হবে এবং এই কঠিন কাজটা, চ্যালেঞ্জটা মোকাবিলা করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সবার মধ্যে যদি চিন্তায় ঐক্য থাকে, চেতনায় ঐক্য থাকে, আমাদের বিশ্বাসে যদি আন্তরিকতা-সততা থাকে, তাহলে আমরা যেকোনো কঠিন কাজ, যেকোনো কর্মযজ্ঞ যতই জটিল হোক না কেন, যতই অসাধ্য হোক না কেন, আমরা সেটিকে আমাদের সাধ্যে আনতে পারব', বলেন তিনি।

সংবিধান সংশোধনের বিষয়ে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, 'সংবিধান যদি কালকেই সংশোধন হয়, আমরা এর আওতায় পড়ে যাব। ১৮তম হলে তার আওতায় পড়ে যাব। ১৯তম হলেও আমরা তার আওতায় পড়ে যাব। এতে আমাদের কোনো অসুবিধা বা বিচলিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা অবশ্যই সংবিধান মান্য করব। রাজনৈতিক শক্তি বা দল কিংবা রাজনৈতিক শরীক দলগুলো যারা আছে, তাদের নিজেদের তরফে চেষ্টাগুলো করে যেতে হবে। যাতে নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক পরিবেশটা ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য অনুকূল হয়। নির্বাচনের সময় সব দল ও অংশীজনের আন্তরিক কমিটমেন্ট প্রয়োজন।'

'যে করেই হোক আমাকে জিততেই হবে, কোনোভাবেই আমি হারব না— এই মনস্তত্ত্ব যদি কারো মধ্যে থাকে, সেটি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে', যোগ করেন সিইসি।

আজকের সংলাপে ইভিএম ব্যবহার না করাসহ ১৯ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ।

তাদের ১৯টি সুপারিশের মধ্যে রয়েছে—তফসিল ঘোষণার দিন থেকে ফলাফল গেজেট আকারে প্রকাশ করা পর্যন্ত জনপ্রশাসন, তথ্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের অধীনে রাখার সুপারিশ করছি; নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রভাবমুক্ত করার স্বার্থে নির্বাচনের ৩ মাস আগে জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করার জন্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি; বর্তমান পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের অধীনে সংসদ নির্বাচন নিরপেক্ষ, অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না—একথা জনগণের। বড় একটি অংশ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, বিগত ১১টি সংসদ নির্বাচনে, সংসদে একাধিকবার প্রতিনিধিত্বকারী সক্রিয় ও নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রস্তাব-নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দেওয়ার সুপারিশ করছি; ভোটার ও ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিশেষ দায়িত্ব দিয়ে নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় একজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের পরামর্শ দেওয়া যাচ্ছে এবং ইভিএম ব্যবহার করে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য জাতি প্রস্তুত নয়। তা ছাড়া পদ্ধতিটি সারাবিশ্বের মতো আমাদের দেশেও বিতর্কিত ও এখন পর্যন্ত জনগণের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়নি বিধায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ইভিএম ব্যবহার সমর্থন করে না।

Comments