ধর্মঘট প্রত্যাহারে নেতাদের সিদ্ধান্ত না মেনে আন্দোলনে অধিকাংশ চা-শ্রমিক

ধর্মঘট প্রত্যাহারে ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত না মেনে আজ সোমবার আন্দোলনে সামিল হন বহু সিলেট, মৌলভীবাজার ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন বাগানে কর্মরত হাজারো চা-শ্রমিক। আজ দুপুরে তোলা ছবি। ছবি: স্টার

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি 'আস্থা'রেখে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে চলমান ধর্মঘট 'প্রত্যাহার' করার ঘোষণা দিলেও তা মানছেন না বিভিন্ন চা বাগানে কর্মরত অধিকাংশ শ্রমিক।

ইউনিয়নের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে এসব শ্রমিকদের অনেকে আজও আন্দোলনে সামিল হয়েছেন।

ছবি: স্টার

আজ সকালে কুলাউড়ার কালিটি চা বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার শ্রমিকরা কাজে যোগ দেননি। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা যায়, হবিগঞ্জের সবগুলো ও সিলেটের অনেকগুলো বাগানের কার্যক্রমও বন্ধ আছে।

তবে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভাড়াউড়া ও ভুড়ভুড়িয়া চা বাগানে শ্রমিকদের কাজ করতে দেখা গেছে। কাজ চলছে সিলেটের লাক্কাতুরা চা বাগানেও।

এদিকে ৩০০ টাকা মজুরির দাবিতে কুলাউড়ার লুহাউনি চা বাগানের শ্রমিকরা মৌলভীবাজার-বড়লেখা আঞ্চলিক সড়কের লুহাউনি নামের জায়গা অবরোধ করে রেখেছেন।

ছবি: স্টার

সেখানে উপস্থিত চা-শ্রমিক আদলছমি অলমিক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইউনিয়নের নেতারা কাউকে কিছু জিজ্ঞেস না করে কীভাবে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন? আমরা শ্রমিকেরা চাঁদা দেই। সেই চাঁদায় তারা নেতাগিরি করেন। আমাদের যৌক্তিক আন্দোলন তারা প্রত্যাহার করতে পারেন না। আমরা সেটা মেনে নেব না।'

চা-শ্রমিক অধিকার আন্দোলনের আহব্বায়ক রিদেশ মুদি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর বিভিন্ন চা-বাগান থেকে পঞ্চায়েত কমিটি ও ভ্যালি কমিটির নেতারা আমাদের ফোন দিয়ে জানিয়েছেন যে, তারা বৈঠকের সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তাই আমরা শ্রমিকদের কথা চিন্তা করে ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছি।'

লস্করপুর ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক অনিরুদ্ধ বাড়াইক বলেন, 'আমাদের লস্করপুর ভ্যালির ২৩টি চা-বাগানের বাগান পঞ্চায়েত নিয়ে আমরা বসেছিলাম। পঞ্চায়েতের সবাই ধর্মঘট প্রত্যাহারে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।'

ছবি: স্টার

মনু ধলাই ভ্যালির সভাপতি ধনা বাউরি এ ব্যাপারে বলেন, 'আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলে দিতে চাই, যদি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে থাকে তাহলে আমরাও স্বাধীন হয়ে বাঁচতে চাই। আমাদের কেন মানসিকভাবে নির্যাতন করছেন সবাই মিলে?'

এর আগে গতকাল রোববার গভীর রাতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসনের সঙ্গে চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের এক বৈঠকের পর যৌথ বিবৃতির মাধ্যমে ধর্মঘট প্রত্যাহোরের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়।

যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি বিশ্বাস ও আস্থা রেখে তার সম্মানে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন তাদের ধর্মঘট প্রত্যাহার করে সোমবার কাজে দেবে। আপাতত চলমান মজুরি ১২০ টাকা হারেই শ্রমিকরা কাজে যোগ দেবেন। চা-শ্রমিকদের অন্যান্য দাবিগুলো লিখিত আকারে জেলা প্রশাসকের কাছে দাখিল করা হবে। জেলা প্রশাসক দাবিসমূহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রেরণ করবেন এবং বাগান মালিকরা চা-বাগানের প্রচলিত প্রথা অনুসারে ধর্মঘটকালীন মজুরি শ্রমিকদের পরিশোধ করবেন।

ছবি: স্টার

এতে আরও বলা হয়, শ্রমিকরা দুর্গাপূজার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলবেন, যা আয়োজনের উদ্যোগ নেবে জেলা প্রশাসন।

অনেক শ্রমিক যে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত মানছেন না—সে ব্যাপারে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা কেন্দ্রীয় কমিটি প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছি। এখন শ্রমিকরা যদি সেটা মেনে না নেন, তাহলে আমরা কী করতে পারি? চা-শ্রমিকরা আমাদের প্রাণ। তারা আমাদের নেতা বানিয়েছেন। হবিগঞ্জ জেলার সব চা বাগান এখনো বন্ধ আছে। সবাই কর্মবিরতি পালন করছেন।'

ছবি: স্টার

দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবিতে গত ৯ অগাস্ট থেকে আন্দোলন চালিয়ে আসছিলেন দেশের ২৪১টি চা বাগানের প্রায় সোয়া লাখ শ্রমিক। প্রথম ৪ দিন শ্রমিকরা প্রতিদিন ২ ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করেন। ১৩ আগস্ট থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেন শ্রমিকরা।

১১ দিন পর গত ২০ অগাস্ট শ্রম অধিদপ্তরের সঙ্গে বৈঠকে দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকায় রাজি হয়ে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। কিন্তু আন্দোলনকারী শ্রমিকদের একটি অংশ তা প্রত্যাখ্যান করে রোববার আবার রাজপথে নামেন।

এই প্রেক্ষাপটে রোববার রাতেই আবার চা-শ্রমিক ইউনিয়নের নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন।

 

Comments

The Daily Star  | English
rally demanding ban on awami league in Dhaka

Blockade at Shahbagh demanding AL ban

The demonstration follows a sit-in that began around 10:00pm last night in front of the Chief Adviser's residence

5h ago