মূল্যস্ফীতির দিনগুলোতে মানসিক চাপ থেকে দূরে থাকার উপায়

ছবি: সংগৃহীত

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি প্রতিদিনকার জীবনযাত্রায় সৃষ্টি করেছে এক টালমাটাল অবস্থা। আয়-ব্যয়ের সংযোগ ধরে রাখতে না পেরে অনেকেই ভুগছেন অশান্তিতে। অস্থিরতা আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ভয়। মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণও এখন বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ছে আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যেও।

আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের একটি জরিপে জানা গেছে, ৮৭ শতাংশ অংশগ্রহণকারী নিত্যকার জীবনের বেশিরভাগ মানসিক চাপের উৎসই হচ্ছে সাম্প্রতিক মূল্যস্ফীতি। এই মানসিক চাপ থেকে মুক্তি না পেলে দৈনন্দিন জীবন ক্রমশ হয়ে উঠবে আরও দুর্বিষহ।

চাপ থেকে কীভাবে নিজের মনকে কিছুটা হলেও দূরে সরিয়ে রাখা যায় তা নিয়েই আজকের এই লেখা।

ভ্যাসার কলেজের মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক মিশেল টুগাডে বলেন, 'মূল্যস্ফীতি সম্পর্কিত আতঙ্ক বা উদ্বিগ্নতা থেকে যেসব অস্থিরতা তৈরি হয়, কিছুটা বিরতি নিয়ে সেই অনুভূতিগুলোকে প্রথমে স্বীকার করতে হবে। নিজেকে বিভিন্ন প্রশ্ন করার মাধ্যমে এই অনুভূতিগুলোর মূলে পৌঁছাতে হবে।'

তিনি আরও নির্দিষ্ট করে প্রশ্ন রেখে বলেন, 'এই উদ্বেগটা শরীরের কোথায় সবচেয়ে বেশি তৈরি হচ্ছে, আপনার পেটে, বুকে? এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।'

এছাড়াও তিনি যে বিষয় বা ঘটনাগুলো এই উদ্বেগকে জাগিয়ে তোলে, সেগুলো চিহ্নিত করতে পরামর্শ দেন। হতে পারে টেলিভিশনে দেখা কোনো সংবাদ বা বাজারে গিয়ে কোনো নতুন মূল্যবৃদ্ধি সম্পর্কে জানা।

'একটানা উদ্বিগ্ন অবস্থায় থাকলে তা সরাসরি দেহ ও মনে বিকট প্রভাব ফেলে,' যোগ করেন তিনি।

নিজের মানসিক অবস্থা সম্পর্কিত এই মূল্যায়নটি মননশীলতা চর্চার একটি উপায়। এই চর্চার মাধ্যমে আমরা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা করা থেকে দূরে সরতে পারি এবং বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পেতে পারি।

টুগাডের মতে, যদি আমাদের মানসিক চাপ বা উদ্বিগ্নতার মূল কারণটি খুঁজে বের করা হয়, তাহলে সমস্যা সমাধানের দিকে অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যায়।

এছাড়াও নিজের মনোযোগ কিছুটা সরিয়ে আনার মাধ্যমে মানসিক চাপ থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি মেলে। হতে পারে প্রিয় কোনো সিনেমা দেখা বা ঘরের কাজ করা বা শখের কোনো কাজ যেমন গান গাওয়া, ছবি আঁকা ইত্যাদি। মূলত এমন কিছু করা, যাতে বেশি চিন্তাভাবনা করতে না হয়। মনকে কিছুটা বিশ্রাম দেওয়াই এই চাপমুক্তির মূল পদ্ধতি। এই পদ্ধতি ব্যক্তিভেদে একেকজনের ক্ষেত্রে একেকরকম হতে পারে। নিজের মতো করে সেই পদ্ধতিটি বেছে নিতে হবে। যদি খুব বেশি উদ্বেগ অনুভব করেন, তবে তৎক্ষণাৎ এমন কোনো কাজে লেগে পড়তে হবে, যাতে মস্তিষ্ক আর ক্লান্ত বোধ না করেন।

ইংরেজি পরিভাষায় বলা চলে, মাইক্রো-মোমেন্টস অব জয়। বাংলা করলে দাঁড়ায়, আনন্দের অনু-ক্ষণ। শুনতেই বেশ খুশি খুশি আমেজ চলে আসে যেন। মানসিক চাপ থেকে মুক্তি পেতে এই কাজের বিকল্প নেই। সমস্যার বন্ধনে নিজেকে অনেক বেশি বেঁধে না রেখে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আনন্দের মুহূর্ত সৃষ্টি করতে হবে। বয়ে যাওয়া বাতাসের সঙ্গে নিজেকেও বইতে দিতে হবে। টুগাডের মতে, ছোট ছোট বিষয়ের দিকে খেয়াল করতে হবে, যা কিনা বড় সুফল বয়ে আনবে। সূর্যাস্ত দেখা, কোনো এক অলস বিকেলে নদীর ধারে বসে থাকা, চাঁদের আলোয় স্নান– যেকোনো মুহূর্তই হতে পারে এমন আনন্দের অনু-ক্ষণ।

সর্বোপরি নিজের সঙ্গে সদয় হতে হবে। নিজেকে কখনো অতিরিক্ত চাপের মধ্যে রাখা চলবে না। তা জীবনে যত বড় সমস্যাই আসুক না কেন। নিজের মানসিক সুস্থতাকে সর্বাগ্রে রাখতে হবে। টুগাডে এক্ষেত্রে নিজের সঙ্গে নিজের ইতিবাচক স্পর্শের চর্চা করতে বলেন। এক্ষেত্রে অক্সিটোসিন নির্গত হয়, যা কিনা স্নায়বিক স্থিরতায় সাহায্য করে।

লস অ্যাঞ্জেলসের ক্লিনিক্যাল মনোবিজ্ঞানী অ্যাইমি মার্টিনেজ বলেন, 'আমি যখন ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ি, তখন আমি নিজেকে বর্তমানে পুনর্কেন্দ্রীভূত করি এবং আমার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকা বিষয়গুলোতে মন দেবার চেষ্টা করি।'

আয়-ব্যয়ের বিষয়ে এই পদ্ধতিটি কাজে লাগতে পারে আমাদের জমানো টাকার ক্ষেত্রে। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সাধ্যমতো বাজেট তৈরি করা একটি ভালো উপায় হতে পারে। যেসব সেবা বা পণ্য ততটা জরুরি নয়, সেগুলো বাদ দেওয়া যায়। কিছুটা মিনিমালিজমের চর্চা এক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে। মূলত 'আয় বুঝে ব্যয় নীতি' অবলম্বন করতে হবে।

প্রশান্তি, কৃতজ্ঞতা ও আনন্দের ছোট বুদবুদগুলো আমাদের সবসময়ই ঘিরে থাকে। শুধু উদ্বেগ আর অশান্তির দিকে এত বেশি মনোযোগ দিয়ে ফেলি যে এসব বিষয়ের দিকে তাকিয়ে দেখা হয় না। এই ইতিবাচক অনুভূতিগুলোর নিয়মিত চর্চা আমাদের অনেকটাই চাপমুক্ত রাখতে পারে। এতে করে সমস্যা দূর হয়ে যাবে না, মূল্যস্ফীতিও উধাও হবে না– শুধু আমাদের মনটা যথাসাধ্য কম অসুস্থ হবে। আর সবসময় মনে রাখতে হবে, সব সময়ই কেটে যায়– ভালো-মন্দ, যাই হোক না কেন। বাজে সময়টাও একদিন কেটে গিয়ে সুদিনের সুগন্ধ বয়ে আসবে। সেই সুদিনের অপেক্ষায় শান্তমনে অপেক্ষা করা ছাড়া মানুষের হাতে আর কোনো উপায় থাকে না।

গ্রন্থনা করেছেনঅনিন্দিতা চৌধুরী

Comments

The Daily Star  | English
Bangladeshi Migrant Workers Deaths Over The Years

In coffins, from faraway lands

Kazi Salauddin, a 44-year-old man from Cumilla, migrated to Saudi Arabia in October 2022, hoping to secure a bright future for his family. But barely a year later, Salauddin, the father of two daughters and a son, died suddenly.

9h ago