ইসির নির্বাচনী রোডম্যাপে সব চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়নি

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপ একেবারেই 'গতানুগতিক' এবং একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়নি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

তাদের মতে, কমিশন তাদের রোডম্যাপে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহারের সিদ্ধান্তের ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। অথচ, বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল ইভিএমের বিরোধিতা করেছে।

রোডম্যাপে 'অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন'র সংজ্ঞা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। নির্বাচন কমিশন এটিকে 'নির্বাচনে যোগ দিতে ইচ্ছুক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ' হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছে।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন গতকাল শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রোডম্যাপটি দেখে মনে হচ্ছে, এটা নির্বাচন কমিশনের একটি রুটিন কাজের রূপরেখা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের চ্যালেঞ্জের কথা তারা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কীভাবে এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা হবে, সে বিষয়ে কিছু বলেননি।'

তিনি জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে মাঠ পর্যায়ের প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা, আইন-শৃঙ্খলা ও নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলাসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা মূলত সরকারের ওপর নির্ভর করে।

'এ চ্যালেঞ্জগুলো কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, রোডম্যাপে তার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। তারা (নির্বাচন কমিশন) চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করেছে। কিন্তু শুধু সংলাপের মাধ্যমে এর সমাধান করা যাবে না', যোগ করেন তিনি।

একই মত প্রকাশ করেন ফেয়ার ইলেকশন মনিটরিং অ্যালায়েন্সের (ফেমা) সাবেক সভাপতি মুনিরা খান। তার মতে, নির্বাচন কমিশন গতানুগতিক চ্যালেঞ্জের কথা উল্লেখ করেছে। নির্বাচন যত সন্নিকটে আসবে, চ্যালেঞ্জও তত বাড়বে।

গত বুধবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে তারা। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করা হয়। এই জাতীয় নির্বাচনে অনূর্ধ্ব ১৫০টি আসনে ইভিএম ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে কমিশনের।

নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কমিশনের সঙ্গে আলোচনায় ১৭টি রাজনৈতিক দল ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে মত দিয়েছে। যদিও দ্য ডেইলি স্টার নিশ্চিত হয়েছে যে, এই ১৭টি দলের মধ্যে অন্তত ৪টি দল আসলে ইভিএমের বিপক্ষে বলেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় সব বিরোধী দলই ইভিএমের বিপক্ষে থাকলেও কমিশন এটি ব্যবহারকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহারের ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। কিন্তু ইভিএম আছে এমন পোলিং বুথ দখলের বিষয়ে কথা বলেনি। তারা সিসিটিভির কথা বলেছে। কিন্তু প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে, প্রতিটি বুথে এগুলো স্থাপন করা হবে কি না এবং কীভাবে তা পর্যবেক্ষণ করা হবে, তা উল্লেখ করেনি।'

মুনিরা খান বলেন, মনে হচ্ছে ১৫০টি আসনের ভোটার 'অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন থেকে বঞ্চিত' হবেন।

তিনি বলেন, 'কিছু ভোটার ইভিএম ব্যবহারের তথাকথিত সুবিধা পাবেন, বাকিরা পাবেন না। তাহলে কি আর এটাকে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন বলতে পারব?'

সমগ্র বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি নির্বাচন কমিশনকে ইভিএম ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত ব্যয় করা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, 'এখন থেকেই নির্বাচন কমিশনের উচিত ব্যালটে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া। এটা দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো হবে।'

মুনিরা খান আরও বলেন, 'এত মানুষ ও রাজনৈতিক দলের ইভিএমের প্রতি অবিশ্বাস থাকার পরও নির্বাচন কমিশন কেন এ বিষয়টিকে এত গুরুত্ব দিচ্ছে, সেটা বুঝতে পারছি না।'

নির্বাচন কমিশন বলছে, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর আস্থা অর্জন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কমিশনের 'অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন'র সংজ্ঞা গ্রহণযোগ্য নয়।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, 'এটা সত্য যে কমিশন কোনো রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে যোগ দিতে বাধ্য করতে পারে না। কিন্তু তাই বলে তারা এমন কিছুও বলতে পারে না। আমি জানি না কেন তারা এমনটা বলেছে। এর অর্থ অনেকটা এমন যে কে নির্বাচনে আসছে আর কে আসছে না, তা আমার উদ্বেগের বিষয় না। এটাই যদি কমিশনের ভাবনা হয়, তাহলে তারা কীভাবে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করবে?'

মুনিরা খানের মতে, নির্বাচন কমিশনের মনোযোগ শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর দিকে নয়, বরং ভোটারসহ সব অংশীজনদের প্রতি থাকা উচিত।

'নির্বাচন কমিশনের উচিত এমন পরিবেশ তৈরি করা, যেখানে রাজনৈতিক দল ও ভোটাররা স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। কমিশনের উচিত ছিল অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সংজ্ঞা সম্পর্কে বিস্তারিত বলা', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus joins stakeholders’ dialogue on Rohingya crisis in Cox’s Bazar

The three-day conference began with the aim of engaging global stakeholders to find solutions to the prolonged Rohingya crisis

1h ago