ইডেনে ছাত্রলীগের শোষণের বিচার বিভাগীয় তদন্ত ও মানবপাচার আইনে বিচার দাবি

ইডেন মহিলা কলেজ। ছবি: সংগৃহীত

কনিষ্ঠ সহপাঠীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে যৌনতায় লিপ্ত করতে বাধ্য করার যে অভিযোগ উঠেছে ইডেন মহিলা কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে, তার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়েছেন দেশের ২১ নারী আন্দোলন কর্মী।

আজ সোমবার এক বিবৃতিতে তারা এই দাবি জানান।

বিবৃতিতে বলা হয়, 'যে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামকে গুঁড়িয়ে ফেলার অংশ হিসেবে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দেশীয় রাজাকারদের সাহায্যে এদেশের মেয়ে ও নারীদের জোরপূর্বক তুলে নিয়ে ক্যাম্পে রেখে ৯ মাস ধর্ষণ করেছিল, সেই সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের ইডেন কলেজের নেত্রীদের বিরুদ্ধে তাদের জুনিয়র সহপাঠীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে টর্চার করে পার্টির নেতা বা ব্যবসায়ীদের যৌন উপভোগের জন্য পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে।'

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, 'গত কয়েক দশক ধরে শাসক দল ও তার ছাত্র সংগঠনের মধ্যে একটি অলিখিত চুক্তি গড়ে উঠতে দেখেছি আমরা। শাসক দলকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতা-নেত্রী-কর্মীরা শারীরিক ও মতাদর্শিক লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে কাজ করবে। প্রতিদানে তারা সিট বাণিজ্য থেকে শুরু করে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির মাধ্যমে ছাত্র থাকা অবস্থায় নিজ নিজ সম্পদের এমন পাহাড় গড়ে তুলবেন, যা বৈধ উপায়ে কোনো মধ্যবিত্ত চাকরিজীবীর পক্ষে সারা জীবনেও অর্জন করা সম্ভব না।'

নারী আন্দোলন কর্মীরা বলেন, 'ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দলকানা কর্ণধাররা না বোঝার ভান করে থাকবেন, বিনিময়ে তাদের "অধ্যক্ষ", "ভিসি" পদ সুরক্ষিত থাকবে। চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-সিট বাণিজ্যের এই সন্ত্রাস ও অপরাধের রাজত্বে ইডেন কলেজের ছাত্রলীগ নেত্রীরা ভয়াবহ একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছেন; ছাত্রীদের যৌন শোষণের মাধ্যমে তাদের পকেট ও নেতৃত্বের প্রোফাইল ভারি করা।'

তাদের পর্যবেক্ষণ হলো, 'ইডেনে প্রবর্তিত ব্যবস্থার দুটো দিক আছে, দুটোই সমানভাবে ভয়াবহ। ছাত্র রাজনীতি করতে ইচ্ছুক মেয়েদের মধ্যে এই ধারণা বপন করা যে, রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গড়ে তুলতে হলে নেতাদের সঙ্গে রাত কাটাতে হবে। দ্বিতীয়ত, ছাত্রলীগ নেত্রীদের দ্বারা পরিচালিত এই যৌন অপরাধ চক্রে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার নির্দেশ না মানলে টর্চারের সম্মুখীন হওয়া।'

নারী আন্দোলন কর্মীদের ভাষ্য, 'আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দলীয় কোন্দলের কারণে ফাঁস হওয়া এই কাহিনীগুলো আমাদের নারী আন্দোলন কর্মী হিসেবে বিশেষভাবে সংক্ষুব্ধ করেছে। কারণ এই ব্যবস্থার বিস্তার ঘটেছে নারী নেতৃত্বাধীন শাসনামলে। নারী শিক্ষার অগ্রদূত প্রতিষ্ঠান ইডেন কলেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লেখাপড়া করেছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ভিপি পদে জয়ী হয়েছেন।'

তারা বলেন, 'এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সত্য-মিথ্যা উদ্‌ঘাটনের সাহসী কাজ একটি বিচার বিভাগীয় কমিটিই করতে পারবে বলে আমরা মনে করি। আমরা সেটি গঠনের জোর দাবি জানাচ্ছি।'

একইসঙ্গে ইডেন কলেজ ছাত্রলীগ নেত্রীদের বিরুদ্ধে যে ধরনের অভিযোগ উঠেছে তা মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলেও উল্লেখ করা হয় বিবৃতিতে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা এই নারী আন্দোলন কর্মীরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, চাকমা সার্কেলের উপদেষ্টা আদিবাসী অধিবার সুরক্ষাকর্মী রাণী য়েন য়েন, ভারতের জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক নাজনীন শিফা, লেখক ও গবেষক পারসা সানজানা সাজিদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কাজলী শেহরীন ইসলাম, মানবাধিকার কর্মী ও থাইল্যান্ডের মাহিডল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোজিনা বেগম, নৃবিজ্ঞানী ও গবেষক ড. নাসরিন খন্দকার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. সামিনা লুৎফা, গবেষক ও অ্যাক্টিভিস্ট দিলশানা পারুল, নৃবিজ্ঞানী ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ড. নাসরিন সিরাজ, আলোকচিত্রী ও বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক সংহতির সভাপ্রধান তাসলিমা আখতার, শিক্ষক ও পিএইচডি গবেষক শ্যামলী শীল, শিক্ষক ও নোয়াখালী নারী অধিকার'র সভানেত্রী লায়লা পারভীন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের শিক্ষক শিল্পী বড়ুয়া, আলোকচিত্রী জান্নাতুল মাওয়া, লেখক ও গবেষক সায়েমা খাতুন, যুক্তরাজ্যের ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ড. সাদাফ নূর, কানাডার ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক হানা শামস আহমেদ, লেখক ও নৃবিজ্ঞানী রেহনুমা আহমেদ এবং সাংবাদিক ও গবেষক ড. সায়দিয়া গুলরুখ।

Comments

The Daily Star  | English
Election in Bangladesh

Why are we trying to make the election uncertain?

Those who are working to prevent the election should question themselves as to how the people will be empowered without one.

10h ago