চট্টগ্রামে প্রতি ঘণ্টায় লোডশেডিং, চাহিদা-সরবরাহের ঘাটতি ২০০ মেগাওয়াট

গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছেন। নগরীর অনেক এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, নিয়ম করে প্রতি ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।
প্রতীকী ছবি

গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বাসিন্দারা দুর্ভোগে পড়েছেন। নগরীর অনেক এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, নিয়ম করে প্রতি ঘণ্টা পরপর লোডশেডিং দেওয়া হচ্ছে।

এতে দিনে ও রাতে ঘরে অবস্থান করা কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের।

লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করে চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার তুলনায় জাতীয় গ্রিড থেকে কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় এবং শিল্প কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য  লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।    

এদিকে গত কিছুদিন ধরে চট্টগ্রামের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় লোডশেডিংয়ে নগরবাসীর দুর্ভোগ আরও বেড়েছে।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা হারুন-উর-রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ শুক্রবার নগরীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। বৃহস্পতিবার তাপমাত্রা ছিল ৩২ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড।  

তিনি বলেন, 'শুক্রবার চট্টগ্রামে বাতাসের আর্দ্রতা ৬০ শতাংশ। বৃহস্পতিবার আর্দ্রতা ছিল ৬৩ শতাংশ।'

'বাতাসে আর্দ্রতা যত বেশি হবে, শরীরে তাপমাত্রা তত বেশি অনুভূত হবে,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকলে, বাতাস দ্রুত ঘাম শোষণ করে নেয়। তাই শরীরে গরম কম অনুভূত হয়। তবে উচ্চ আর্দ্রতায় বাতাস ঘাম শোষণ করতে পারে না, তাই তাপমাত্রা বেশি অনুভূত হয়।'   

বন্দরনগরীর বে টার্মিনাল এলাকার একটি বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশন। স্টার ফাইল ছবি: রাজীব রায়হান

গত দুদিন আর্দ্রতা বেশি থাকায় নগরবাসী গরমে বেশ কষ্ট পাচ্ছেন। এদিকে ঘন ঘন বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে বাড়িতেও তাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন।

শহরের আসকার দিঘির পাড় এলাকার বাসিন্দা সায়মা আক্তার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত রাতে প্রচণ্ড গরমের কারণে আমার ২ বছর বয়সী মেয়ে এক মুহূর্তের জন্য ঘুমাতে পারেনি। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে ফ্যানও চলছিল না। দিনে ৮-১০ বার বিদ্যুৎ বিভ্রাট হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'লোডশেডিং সকাল ৬টায় শুরু হয়, তারপর সকাল ৭টায় বিদ্যুৎ আসে। তারপর আবার সকাল ৮টায় যায় এবং ৯টায় আসে। সারাদিন প্রতি ঘণ্টায় এভাবে চলতে থাকে।'

সায়মার মতো নগরীর হালিশহর, বহদ্দারহাট, অক্সিজেন, আগ্রাবাদ, চকবাজার, ব্যাটারির গলি, আসকার দীঘির পাড়, আন্দরকিল্লা, শুলকবাহর, পাঁচলাইশ, মুরাদপুর, বিবিরহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে দুর্ভোগে পড়েছেন ওইসব এলাকার বাসিন্দারা।

নগরীর বারো কোয়ার্টার এলাকার বাসিন্দা আশরাফ আহমেদ ডেইলি স্টারকে জানান, দিনে ৪-৫ বার লোডশেডিং হচ্ছে তাদের এলাকায়।

তিনি বলেন, 'তাপমাত্রা খুব বেশি হওয়ায় আমরা ফ্যান ছাড়া ঘরে এক মুহূর্তও থাকতে পারি না। লোডশেডিংয়ের সময় আমাদের দুর্ভোগের কোনো সীমা থাকে না।;

বেসরকারি কলেজের প্রভাষক ও বাকালিয়া এলাকার বাসিন্দা আমির হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন ৮-১০ বার লোডশেডিংয়ের শিকার হচ্ছেন এলাকার মানুষ।'

'আমার ৭ বছরের মেয়ে গত ২ দিনের প্রচণ্ড গরমে রাতে ঘুমাতে পারেনি, অসুস্থ হয়ে পড়েছে,' বলেন তিনি। 

চট্টগ্রামের পিডিবির কর্মকর্তারা জানান, চট্টগ্রামে মোট বিদ্যুতের চাহিদা পিক আওয়ারে ১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট এবং অফপিক আওয়ারে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। কিন্তু চাহিদার বিপরীতে জাতীয় গ্রিড থেকে কম বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে বলে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। 

যোগাযোগ করা হলে পিডিবি চট্টগ্রামের (দক্ষিণ অঞ্চল) প্রধান প্রকৌশলী (ডিস্ট্রিবিউশন) রেজাউল করিম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের চাহিদার তুলনায় গড়ে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের ঘাটতি আছে।'

'আমরা প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাচ্ছি। কিন্তু আমাদের চাহিদা পিক আওয়ারে ১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট এবং অফপিক আওয়ারে ১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট,' বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'তাছাড়া শিল্পকারখানাতে নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদনের  জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে হচ্ছে। তাই আমরা লোডশেডিংয়ে যেতে বাধ্য হয়েছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Mob beating at DU: Six students confess involvement

Six students of Dhaka University, who were arrested in connection with killing of 35-year-old Tofazzal Hossain inside their hall on Wednesday, confessed to their involvement in the crime before a magistrate

1h ago