চাকরির পরীক্ষা ঢাকায়, বাস বন্ধে আসতে পারছেন না উত্তরাঞ্চলের প্রার্থীরা

বগুড়ার বাস স্ট্যান্ডগুলো দিয়ে আজ কোনো বাস ছাড়েনি। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে শুধু রাজশাহী বিভাগে পরিবহন ধর্মঘট শুরু হলেও, রংপুরের বাসও যেতে পারছে না বগুড়া জেলা দিয়ে। এতে বিপদে পড়েছেন ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রীরা বিশেষ করে চাকরিপ্রার্থীরা। বেশি দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন বাংলাদেশ ব্যাংকে অফিসার পদে পরীক্ষার্থীরা।

সকাল থেকেই বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে দেখা যায়নি বাসের স্বাভাবিক চলাচল। 

বগুড়ার বিভিন্ন বাস কাউন্টারে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বগুড়া থেকে প্রায় ৩৪টি রুটে আন্তঃজেলা, আন্তঃউপজেলা এবং ঢাকাগামী বাস বন্ধ আছে। এমনকি রংপুর থেকে বগুড়ার উপর দিয়েও যেতে দেওয়া হচ্ছে না কোনো বাস। 

এদিকে আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার পদে চাকরির লিখিত পরীক্ষা। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলো থেকে চাকরিপ্রার্থীদের অনেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য আজকের বাসের টিকেট কেটেছিলেন। তাদের টিকেটও ফেরত দেওয়া হয়েছে।

বাস ধর্মঘটের কারণে ফাঁকা বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের বনানী চৌরাস্তা মোড়। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

লালমনিরহাটের চাকরিপ্রার্থী আঁখিনূর ইসলাম দুই দিন আগে বগুড়ায় এসেছেন। ঢাকা যাওয়ার জন্য তিনি আজ দুপুর ২টায় বগুড়ার ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ড গিয়ে দেখেন সব কাউন্টার বন্ধ। 

পরে তিনি রেলস্টেশনে গিয়ে দেখেন ট্রেনেরও কোনো টিকিট নেই।

আঁখিনূর দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি জানতাম শুধু রাজশাহীতে বাস বন্ধ থাকবে। কিন্তু ঢাকায় যেতে পারব না, ভাবতেই পারিনি।'

'আগামীকাল ঢাকায় বাংলাদেশ ব্যাংকের অফিসার পদে পরীক্ষা। আমার আর মনে হয় পরীক্ষা দেওয়া হবে না,' যোগ করেন তিনি।

বগুড়ার আরেক পরীক্ষার্থী মো. ফজলে রাব্বিরও ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল আজ। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা ধরে বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন কখন বাস কাউন্টার খোলে।

ফজলে রাব্বি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জানতাম না যে বগুড়া থেকে ঢাকায় পরীক্ষা দিতে যেতে পারব না। বাস কেন ঢাকায় যাচ্ছে না, সেটা বুঝতে পারছিনা। এখন পরীক্ষা দেবো কীভাবে?

এদিকে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা ধর্মঘটের আওতাভুক্ত হলেও, ঢাকা বিভাগের নিকটবর্তী হওয়ায়, এ দুই জেলা থেকে জরুরি প্রয়োজনে বিকল্প উপায়ে যাত্রীরা টাঙ্গাইল বা মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকা যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

বাস না পেয়ে বিকল্প উপায়ে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে গন্তব্যে যাওয়ার চেষ্টা করছেন যাত্রীরা। ছবি: মোস্তফা সবুজ/স্টার

আব্দুর রহমানের ঢাকায় একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখেন সব কাউন্টার বন্ধ।

সরেজমিনে বগুড়ার সাতমাথা, ঠনঠনিয়া, চারমাথা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, সব কাউন্টার বন্ধ এবং বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা ব্যাগ নিয়ে অপেক্ষা করছেন। কেউ কেউ বিকল্প যানবাহনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। 

ঢাকা যাওয়ার জন্য সে সব যাত্রীরা আগে টিকিট কিনেছিলেন, তাদের টিকিট ফেরত দেওয়া হচ্ছে। ঠনঠনিয়া বাসস্ট্যান্ডের শ্যামলী এবং এস আর বাস কাউন্টারের কর্মীরা দ্য ডেইলি স্টারকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

অন্যদিকে উত্তরাঞ্চল থেকে বগুড়ার শাকপালা দিয়ে রাজশাহী যাওয়ার  একমাত্র রাস্তা বগুড়া-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক। 

এই রুটেও যাত্রীরা বাস নেই। উপায় না পেয়ে বিভিন্ন যানবাহনে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন যাত্রীরা। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও পাননি কোনো যানবাহন। 

যাত্রীদের অনেকে পিকআপ ভ্যান, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রাজশাহী, নাটোর ও বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় যাচ্ছেন।

দুপুর ২টার দিকে সেখানে একটি বিআরটিসি বাস দেখা গেলেও, অন্য কোনো বাস দেখা যায়নি। ট্রাকে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে রাজশাহী যাচ্ছেন যাত্রীরা।

শাকপালা বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছিলেন প্রায় ৪০ জন যাত্রী। তারা সবাই চাকরি করেন বগুড়া ক্যান্টনমেন্টে। যাবেন কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, রাজশাহী ও নাটোর।

ছুটি হওয়ায় তারা আজ বাড়ি যাচ্ছেন। কিন্তু ২ ঘণ্টা বসে থেকেও কোনো বাস পাননি। তাদের অনেকে ট্রাকে করে দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে যাচ্ছেন নাটোর পর্যন্ত।

সেনা সদস্য রফিকুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা জানতাম না যে আজ বাসের জন্য এত দুর্ভোগে পড়তে হবে। বাধ্য হয়ে যাচ্ছি বিকল্প যানবাহনে, তাও আবার দ্বিগুণ ভাড়ায়।'

অন্যদিকে আগামী শনিবার রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশ। সমাবেশে অংশ নিতে বগুড়া থেকে আজ রাতেই রাজশাহী  গেছেন ৫-৬ হাজার নেতাকর্মীরা। যাওয়ার পথে তারা নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। 

বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাস মালিক-শ্রমিক সংগঠন শুধু বিএনপির সমাবেশের আগেই কেন ধর্মঘট ডাকে সেটা জনগণ বুঝতে পারে। গত রাতে আমি বগুড়া থেকে ৫-৬ হাজার নেতাকর্মী নিয়ে রাজশাহী এসেছি।'

'রাজশাহী ঢোকার ২০-২৫ মাইল আগে থেকেই আমাদের যানবাহন থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। যানবাহন আটক করে মামলা দিয়েছে পুলিশ। মহিলা নেতাকর্মীরাও ২০ কিলোমিটার পথ হেটে রাজশাহীতে যেতে বাধ্য হয়েছে,' বলেন তিনি।

জানতে চাইলে রাজশাহী বিভাগীয় মোটর মালিক-শ্রমিক যৌথ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের দেওয়া ১০ দফা দাবি পূরণ না হওয়ায় এই ধর্মঘট।'

রংপুর থেকে ঢাকায় বাস যেতে না দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে আমিনুল ইসলাম বলেন, 'এটা বিভাগীয় সিদ্ধান্ত যে রাজশাহীর ওপর দিয়ে কোনো বাস ঢাকা বা অন্য কোনো জেলায় যেতে পারবে না। তাই রংপুর-বগুড়া মহাসড়কেও চলছে না ঢাকাগামী বাস।'

Comments

The Daily Star  | English

Threat of fresh Rohingya influx looms as clashes erupt in Myanmar

Gunfire and explosions were heard late Friday night from villages across the border in Myanmar opposite Whykong union in Teknaf upazila of Cox’s Bazar. Residents, gripped by panic, reported that this was the most intense gunfire they had heard in months.

1h ago