সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ইতিবাচক প্রভাব

বর্তমানে আমরা প্রায় সবাই কোনো না কোনোভাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু সমাজের ওপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রভাব ভালো, নাকি মন্দ?

অন্য যে কোনো বিষয়ের মতো সামাজিক মাধ্যমেরও ভালো ও মন্দ উভয় দিকই আছে। বেশিরভাগ সময় এর খারাপ দিক নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা হয়।

তাই এবার সামাজিক মাধ্যমের ইতিবাচক দিকগুলো দেখা যাক।

সহজে সম্পর্ক গড়ে তোলা

বিভিন্ন ধরনের সামাজিকমাধ্যম আসার আগে যোগাযোগ এতটা সহজে আমাদের কাছে ধরা দেয়নি কখনোই। দেখা না করে, কোথাও না গিয়ে ঘরে বসে ছোট্ট একটি ডিজিটাল পর্দায় প্রতিদিন এখন গড়ে উঠছে নতুন নতুন বন্ধুত্ব, সম্পর্ক। এক দশক আগেও অন্তর্মুখীদের অন্যদের সঙ্গে যুক্ত থাকা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল।

স্মার্টফোন আসার পর বিষয়টি বদলেছে। নতুনভাবে মানুষ অন্য মানুষের সঙ্গে যুক্ত হতে পারছে। যোগাযোগের পর সম্পর্কটা ধরে রাখাও আগের চেয়ে সহজ হয়েছে। বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার নতুন প্রক্রিয়া এনে দিয়েছে সামাজিক মাধ্যম। ফেসবুকে এমন অনেক বন্ধুই থাকেন, যাদের সঙ্গে কখনো সামনাসামনি আলাপ না হলেও, চ্যাটবক্স-কমেন্ট বক্সের মধ্য দিয়ে জানাশোনা, এমনকি মনের ভাব ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ হচ্ছে। ব্যক্তিভেদে সম্পর্ক বা যোগাযোগ দীর্ঘস্থায়ীও হচ্ছে।

সহমর্মিতার চর্চা

আমাদের প্রাত্যহিক জীবনের একটা বড় অংশ এখন সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইলে উঠে আসছে। কোথায় খেতে যাচ্ছি, মন কেমন আছে, কোনো বড় অর্জন বা ব্যক্তিগত ক্ষতির কথাও অনেককেই ভাগ করে নিতে দেখা যায় তাদের প্রোফাইলে। এই ভাগ করে নেওয়াটা বন্ধু তালিকায় থাকা মানুষদের সঙ্গেই, কোনো ডিজিটাল অ্যাকাউন্টের সঙ্গে নয়। যতই আমরা সবকিছু যান্ত্রিক হয়ে গেছে, এমন ক্ষোভ প্রকাশ করি-এটুকু মনে রাখা দরকার যে এই যান্ত্রিক যোগাযোগের পেছনের কারিগরটা কিন্তু মানুষই। আর তাই ব্যবস্থাটা যান্ত্রিক হলেও এর আদান-প্রদান পুরোপুরি যান্ত্রিক কখনোই হতে পারে না। একে অন্যের আনন্দে আনন্দিত হওয়ার চেষ্টা বা বিপদে এগিয়ে আসার জন্য সামাজিক মাধ্যমকে চাইলেই বেশ ভালোভাবেই কাজে লাগানো যায়। বিভিন্ন প্রয়োজনে অর্থ সংগ্রহের প্রক্রিয়াও সামাজিক মাধ্যমের কারণে ত্বরান্বিত হয়।

দ্রুত যোগাযোগ

সামাজিক মাধ্যমে একটি ছোট বার্তা টাইপ করার মাধ্যমে যে সময় বাঁচে, তা অস্বীকারের উপায় নেই। অনেকসময় আমাদের এমন কাজ থাকে, যেটির বিষয়ে অন্য কাউকে মেসেঞ্জার বা হোয়াটসঅ্যাপে একটি বার্তা পাঠিয়ে দিলেই কাজটা অনেক এগিয়ে যায়। এর জন্য অতিরিক্ত ফোন বিল দেওয়া লাগে না, সেই সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময়টুকুও বেঁচে যায়। এ ছাড়াও সবসময় সব পরিবেশে ফোনে কথা বলা সুবিধাজনক না হলেও ডিজিটাল বার্তা আদান-প্রদান সহজেই সম্ভব। সামাজিক মাধ্যমের নিয়মিত চর্চা আমাদের কম সময়ে বেশি মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সাহায্য করে। চাইলেই একটি নির্দিষ্ট কাজের জন্য গ্রুপচ্যাট তৈরি করা যাচ্ছে, যেন একটি বার্তা মুহূর্তের মধ্যে অনেকের কাছে পৌঁছে যায়।

পৃথিবীটা নাকি ছোট হতে হতে...

তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা দেশে দেশে অবাধে ছড়িয়ে যাওয়ার কারণেই মার্শাল ম্যাকলুহান সমগ্র বিশ্বকে একটি গ্রামের সঙ্গে তুলনা করেছেন। একসময় অন্য দেশ বা অন্য শহর যোগাযোগের দিক দিয়ে যতটা দূরে মনে হতো, আজ সেই দূরত্ব ফোন বা কম্পিউটারের পর্দার মাধ্যমে অনেকটাই কমে গেছে। চাইলেই আমরা ঘরে বসে ব্যবসায়িক আলাপ সেরে নিতে পারছি পৃথিবীর অন্য প্রান্তের কারো সঙ্গে। বড় বড় কাজ এখন সম্পন্ন হচ্ছে সামনাসামনি সাক্ষাৎ ছাড়াই, অফলাইনের জগতের বাইরে। প্রবাসী বন্ধু-পরিজনের সঙ্গে চাইলেই মনের সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া যায়। এটা অনেকাংশেই সম্ভব হয়েছে সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে মানুষের দৈনন্দিন সংযুক্তির ফলে। ব্যবহারকারীরা এতে এতটাই অভ্যস্ত হয়ে গেছেন যে পৃথিবীর মানচিত্রে দেশ-বিদেশের বিন্দু যতটা দূরে থাক না কেন, ফোনের পর্দায় তা একটি বৃত্তমাত্র।

সংবাদের গতি

যোগাযোগের নতুন এসব মাধ্যমের কারণে বিশ্ব এখন আমাদের সামনে অন্য মাত্রায় উন্মোচিত হয়েছে। সংবাদের ক্ষেত্রেও এখন শুধু টেলিভিশন, প্রথাগত বেতার বা সংবাদপত্রের ওপর কেউ নির্ভর করছে না। বরং তাৎক্ষণিক সংবাদ পেতে এখন সবচেয়ে দ্রুততম মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বিশ্বের যে কোনো প্রান্তের সংবাদ অন্য কোনো প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে একটি পোস্টের মাধ্যমে। এভাবে সংবাদ ছড়িয়ে দিতে সরাসরি ভিডিও সম্প্রচার এখন অন্যতম প্রচলিত পদ্ধতি।

এভাবে অন্য মোড়কে উত্থান ঘটছে নাগরিক সাংবাদিকতা বা সিটিজেন জার্নালিজমেরও। তবে এসব ক্ষেত্রে যে কোনো সংবাদের সূত্রের সত্যতা সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে। দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সুযোগ আছে বলে তথ্যে বা সংবাদে ভুল থেকে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। ঠিকঠাক যাচাই না করে তাই কোনো সংবাদ তাৎক্ষণিক বিশ্বাস করা ঠিক নয়। বর্তমানে অবশ্য সামাজিক মাধ্যম কর্তৃপক্ষরা এ বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন। ভুল তথ্য মুছে ফেলা এবং বিশ্বস্ত সূত্র স্থাপন, দুই বিষয়েই তারা কাজ করছেন।

তথ্যসূত্র:

https://www.makeuseof.com/tag/positive-impact-social-networking-sites-society-opinion/?utm_term=Autofeed&utm_campaign=Echobox&utm_medium=Social-Distribution&utm_source=Facebook#Echobox=1665328112

Comments

The Daily Star  | English

Remittance-rich Sylhet ranks poorest in new index

Long seen as the “London of Bangladesh” for its foreign earnings and opulent villas, Sylhet has been dealt a sobering blow. The country’s first Multidimensional Poverty Index (MPI) has revealed that the division is, in fact, the poorest in Bangladesh when measured by access to education, healthc

5h ago