ভুয়া ভিডিও কল শনাক্তের উপায়

ছবি: সংগৃহীত

অনেকেই বন্ধুদের সঙ্গে নিছক মজার উদ্দেশ্যে ভুয়া ভিডিও কল করে থাকেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিজের মুখের পরিবর্তে অন্য কারও মুখ, বিশেষ করে বিখ্যাত লোকেদের মুখ ব্যবহার করা যায় ভুয়া ভিডিও কলের মাধ্যমে। 

এ ছাড়া ভিডিওর পেছনের পটভূমি কিংবা ভিডিওর গুরুত্বপূর্ণ কোনো বৈশিষ্ট্য কৃত্রিমভাবে পরিবর্তন করা যায় এর মাধ্যমে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, কীভাবে এই ভুয়া বা জাল ভিডিও শনাক্ত করবেন।

ভুয়া ভিডিও কল কি?

একটি ভুয়া ভিডিও কল নানারকম হতে পারে। যেমন ধরুন, ভিডিও কলে কেউ তার পেছনে নকল পটভূমি তৈরি করে মানুষকে দেখালেন তিনি ছুটিতে কোথাও ঘুরতে গেছেন। এ ছাড়া, মনিটরের দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের একটি ভিডিও রেকর্ড করে মিটিং চলাকালীন সেটা চালিয়ে দিতে পারেন। যেখানে তোর কথা বলার প্রয়োজন নেই। অনেকে আবার লাইভ ভিডিও কলে ওয়েবক্যাম ইনপুটে ইউটিউবের ভিডিও জুড়ে দিয়ে থাকেন। 

অন্যদিকে, ডিপফেক প্রযুক্তি ব্যবহার করেও অনেকে ভুয়া ভিডিও কল করে থাকে। এর মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করে, ডিসপ্লেতে থাকা মুখ এবং কণ্ঠ পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব। 

বেশ কিছু সফ্টওয়্যারের সাহায্যে এসব ভুয়া লাইভ ভিডিও তৈরি করা হয়ে থাকে। 

একেক প্ল্যাটফর্মের জন্য ভুয়া ভিডিও কল তৈরির প্রক্রিয়া একেক রকম হতে পারে। অর্থাৎ, স্কাইপ, হোয়াটসঅ্যাপ, জুম, মিট ইত্যাদি প্ল্যাটফর্মগুলোয় ভুয়া ভিডিও কল তৈরির প্রক্রিয়ায় ভিন্নতা রয়েছে।

ডিপফেক প্রযুক্তি

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে তৈরি ডিপফেকগুলো বেশ বিশ্বাসযোগ্য তবে, ভুয়া ভিডিও তৈরি করে থাকে। ডিপফেক প্রযুক্তির ক্রমাগত বিকাশের কারণে একটি বাস্তব ভিডিও এবং একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার তৈরি ভিডিওর মধ্যে পার্থক্য চিহ্নিত করা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠছে৷ 

ভুয়া ভিডিও কল শনাক্ত করবেন যেভাবে

ভুয়া ভিডিওর ক্ষেত্রে এর গুণমান দেখেই আপনি বুঝতে পারবেন যে সেটি নকল। বিশেষ করে ডিপফেকের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত ভিডিওগুলো দেখলে বোঝা যায় সেগুলো নকল। তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে ভুয়া ভিডিও কল শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে, একটি ভুয়া ভিডিও কল শনাক্ত করার কয়েকটি উপায় সম্পর্কে দেখে নেওয়া যাক।

ভিডিওর মান: ভুয়া ভিডিওগুলোর মান সাধারণত খারাপ হয়। এ ছাড়া ওয়াটারমার্ক বা অন্যান্য চিহ্ন পরীক্ষা করার মাধ্যমেও ভিডিওটি ভুয়া কি না বোঝা সম্ভব। 

ভিডিও সাইজিং: ভুয়া ভিডিও কল করার সময় সাধারণত ওয়েবক্যাম উইন্ডো বা যে অ্যাপ ব্যবহার করা হচ্ছে তার সঙ্গে মানানসই করে ভিডিওর আকার পরিবর্তন করা হয়। ভিডিওর আকার পরিবর্তন করা হলে ভিডিওর অনুপাত বিকৃত হয়। এতে করে মুখ অতিরিক্ত লম্বা বা অতিরিক্ত চওড়া দেখা যেতে পারে।

কন্টাক্টস: ব্যক্তিটি কী আপনার পরিচিত কিংবা কন্টাক্ট তালিকা থেকে কল করছে কি না লক্ষ্য করুন। যদি না হয়, সেক্ষেত্রে নামটি কী অদ্ভুত লাগে কি না সেটি যাচাই করুন। এ ছাড়া, কন্টাক্ট নামে কোনো অ্যাপের নাম উঠে আসে কি না সেটিও পরীক্ষা করুন।

লুপ এবং কাট: অনেক ভুয়া ভিডিও একটি নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পর আবার শুরুতে চলে যায় এবং চক্রাকারে চলতে থাকে। অর্থাৎ, ভিডিওটি লুপ করতে থাকে। এ ছাড়া, ভিডিওটি শেষের দিকে হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, কিন্তু ভিডিও কলটি শেষ হয় না। এরকম হলেও সেটি ভুয়া ভিডিও কল হতে পারে। 

এ ছাড়া কেউ যদি একটি ফেস সোয়াপিং অ্যাপ ব্যবহার করে, সেক্ষেত্রে সোয়াপ করা মুখ সঠিকভাবে বসার সম্ভাবনাও খুব কম থাকে। 

পরিশেষে, মেনিক্যামের মতো সফ্টওয়্যারে তৈরি ভুয়া কলগুলি বেশ বিশ্বাসযোগ্য। তবে আপনি যদি খুবই উন্নত মানের হার্ডওয়্যার ব্যবহার না করেন, তাহলে সেগুলো সহজেই শনাক্ত করা যায়।

অন্যদিকে, স্মার্টফোনে ভুয়া ভিডিও কলিং করা সহজ না। এতে বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা আছে। হোয়াটসঅ্যাপ এবং ফেসটাইমের মতো মোবাইল অ্যাপে ভুয়া ভিডিও কলিং এবং এই জাতীয় অন্যান্য স্ক্যাম প্রতিরোধ করার জন্য বিল্ট-ইন সুরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে। 

তবে দিনশেষে, ফোন নম্বর, ভিডিওর গুণমান এবং এ জাতীয় তথ্যগুলো দুবার যাচাই করলেই আপনি এগুলো ধরতে পারবেন।

তথ্যসূত্র: এমইউও 

গ্রন্থনা: আহমেদ বিন কাদের অনি

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

2h ago