উচ্চ রক্তচাপ কমাতে কার্যকর ব্যায়াম

আইসোমেট্রিক ব্যায়ামের কিছু উদাহরণ। ছবি: সংগৃহীত

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে অ্যারোবিক বা কার্ডিও ব্যায়াম কার্যকর। তবে নতুন একটি গবেষণায় দেখা গেছে, আরেকটি ব্যায়ামও উচ্চ রক্তচাপ কমাতে বেশ কার্যকর।

ব্রিটিশ জার্নাল অব স্পোর্টস মেডিসিনে গত ২৫ জুলাই প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, স্কোয়াট বা প্ল্যাংকের মতো ব্যায়াম সম্ভবত উচ্চ রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে সবচেয়ে কার্যকর।

এই ব্যায়ামগুলো আইসোমেট্রিক বা স্ট্যাটিক এক্সারসাইজ হিসেবে পরিচিত। এ ধরনের ব্যায়ামে নির্দিষ্ট একটি ভঙ্গিতে শরীরের পেশি স্থির অবস্থায় ধরে রাখতে হয়।

গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক ড. জেমি ও'ড্রিসকল সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, সিস্টোলিক ও ডায়াস্টোলিক উভয় রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রেই আইসোমেট্রিক ব্যায়াম সবচেয়ে কার্যকর।

উল্লেখ্য, রক্তচাপের দুটি সংখ্যার মধ্যে বড় সংখ্যাটি দিয়ে সিস্টোলিক এবং ছোট সংখ্যাটি দিয়ে ডায়াস্টোলিক রক্তচাপ বোঝায়। হৃদকম্পনের সময় হৃৎপিণ্ড সংকুচিত হয় এবং সেই চাপের ফলে রক্ত সারা শরীরের ধমনীতে ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের রক্তনালীর দেয়ালে এ সময় যে চাপ তৈরি হয়, সেটিই হচ্ছে সিস্টোলিক চাপ। আর হৃৎপিণ্ড যখন শিথিল থাকে (দুটি হৃৎস্পন্দনের মধ্যবর্তী সময়ে), তখন ধমনীতে রক্তের যে চাপ থাকে, সেটিই ডায়াস্টোলিক চাপ। 

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের সেরা ব্যায়াম

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বর্তমানে দৌড় বা সাইকেল চালানোর মতো অ্যারোবিক বা কার্ডিও ব্যায়ামের উপর জোর দেওয়া হয়। এ ধরনের ব্যায়াম উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ফলপ্রসূ হলেও এই গবেষণাগুলো তুলনামূলকভাবে পুরোনো। নতুন গবেষণায় বলা হয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আগে যেসব ব্যায়ামের পরামর্শ দেওয়া হতো সেখান থেকে আইসোমেট্রিক ট্রেনিং এবং হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিং বাদ পড়েছিল। হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিংয়ের ক্ষেত্রে অল্প সময়ের জন্য দ্রুত সাইক্লিং বা দৌড়াতে হয় যাতে হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিকের চেয়ে ৮০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। এর পর কিছুক্ষণ ধীর গতিতে ব্যায়াম করে আবার আগের প্রক্রিয়ার পুনরাবৃত্তি করতে হয়।

২৭০টি ট্রায়াল এবং ১৫ হাজার ৮২৭ জন অংশগ্রহণকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখেছেন হাই-ইনটেনসিটি ইন্টারভাল ট্রেনিংগুলোর মধ্যে আইসোমেট্রিক ব্যায়াম, অ্যারোবিক ব্যায়াম, ডায়নামিক রেজিস্ট্যান্স ট্রেনিং উচ্চ রক্তচাপ মোকাবিলায় সবচেয়ে কার্যকর।

সিস্টোলিক চাপ কমানোর জন্য ওয়াল স্কোয়াট (আইসোমেট্রিক ব্যায়াম) সবচেয়ে কার্যকর আর ডায়াস্টোলিক চাপ কমানোর জন্য দৌড়ানো (অ্যারোবিক ব্যায়াম) সবচেয়ে কার্যকর। তবে আইসোমেট্রিক ব্যায়াম উভয় রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রেই সামগ্রিকভাবে ভালো।

ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশনের কার্ডিয়াক নার্স জোয়ান হুইটমোর বলেন, 'এই গবেষণায় রক্তচাপ কমানোর অন্য যে ব্যায়ামগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা উৎসাহব্যাঞ্জক। আমরা জানি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যায়াম কতটা গুরুত্বপূর্ণ এবং যারা ব্যায়াম করে, তারা বেশিদিন সুস্থ থাকে।'

তবে হুইটমোর এই গবেষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না।

তিনি বলেন, 'রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ব্যায়ামের পাশাপাশি অন্যান্য জীবনাচরণ পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ, যার মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা, সুষম খাবার খাওয়া, খাবারে লবণের পরিমাণ কমানো, মদ্যপান না করা এবং ডাক্তারের পরামর্শে নিয়মিত ওষুধ সেবন করা।'

গবেষকরা বলেছেন, কেন আইসোমেট্রিক ব্যায়াম রক্তচাপ কমাতে ভূমিকা রাখে, তা নির্ধারণে আরও গবেষণা প্রয়োজন।

রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে নিজে নিজে কোনো ব্যায়াম শুরু না করে অবশ্যই আগে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

সূত্র: সিএনএন

গ্রন্থনা: আহমেদ হিমেল

Comments

The Daily Star  | English

Confronting Dhaka’s battery-run rickshaw dilemma

One of the more recent manifestations of informal urban expansion is the proliferation of battery-run rickshaws.

6h ago