ঢাকায় পাহাড়ি খাবার পাবেন কোথায়

ছবি: হেবাংয়ের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের পাশাপাশি ভ্রমণপিপাসুরা সেখানকার খাবারের স্বাদ নিতে ভোলেন না। আবার অনেকের হয়তো পাহাড়ে যাওয়া হয় না, কিন্তু পাহাড়ের খাবারের স্বাদ একবার চেখে দেখার ইচ্ছে আছে। যারা পাহাড়ের খাবার মিস করেন ভ্রমণ থেকে ফিরে কিংবা যারা এর স্বাদ চেখে দেখতে চান, তাদের জন্য ঢাকাতে কিন্তু সেই সুযোগ আছে। 

কংক্রিটের এই ব্যস্ত শহরে কোথায় মিলবে পাহাড়ি খাবার আর আতিথেয়তা, চলুন জেনে নিই।

হেবাং

২০১৬ সালে পাহাড়ের খাবার নিয়ে অনলাইনে যাত্রা শুরু করে হেবাং। ২০১৮ সালে মিরপুরের কাজীপাড়ায় খোলা হয় রেস্টুরেন্ট। হেবাং শব্দের অর্থ 'ভাপে সেদ্ধ করা খাবার', এখানে মূলত চাকমাদের খাবার পরিবেশন করা হয়।

রেস্তোরাঁতে ঢুকতেই প্রথমেই নজরে আসবে বাঁশ আর বেতের সমন্বয়ে সিটিং স্পেস। চাকমা ভাষায় এর নাম 'ইজর'। এটি মূলত ঘরের বাইরের অংশ, যেখানে বসে অতিথিরা খাবার খান ও সময় কাটান।

ঢেকিছাঁটা চাল আর তুলসি মালা চালের ভাত, ব্যাম্বু চিকেন, শুঁটকি হেবাং, পাজন, কাঁকড়া ভুনা হেবাংয়ে নিয়মিত রান্না হয়। তবে শুক্রবার আর শনিবার মেনুতে আরও কয়েকটি বিশেষ খাবারের পদ যোগ করা হয়।

ছবি: হেবাংয়ের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

এখানকার খাবারের নামগুলোতে যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি এগুলো খেতেও ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের। চাকমাদের প্রায় সব খাবারে শুঁটকির আধিক্য থাকে। শুঁটকিকে পেস্ট বানিয়ে সেটাকে পানির সঙ্গে মেশানো হয়। তাছাড়া হেবাংয়ে নানা রকম ভর্তাও পাওয়া যায়।মাছ, মাংস, সবজি, শুঁটকির ভর্তার সঙ্গে মেশানো হয় পাহাড়ি ঝাল মরিচ, খেতে চমৎকার লাগে। পাবেন বিন্নি চালের পায়েস, বড়াপিঠা এবং কলাপিঠা আর তেঁতুল চাও। চাইলে হোম ডেলিভারি নিতে পারবেন।

হেবাংয়ের সবজি আর মাছ সরাসরি বান্দরবান ও রাঙ্গামাটি থেকে আসে। রেস্তোরাঁটি পাহাড়ি খাবারের হলেও এখানে অন্যান্য অতিথির সংখ্যাই বেশি থাকে। বর্তমানে হেবাংয়ের দুটি শাখা রয়েছে। একটি মিরপুরের কাজীপাড়াতে, অপরটি মোহাম্মদপুরে।

জাবা

ঢাকার মানুষের সঙ্গে গারোদের খাবারকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে 'জাবা'। টাঙ্গাইলের মধুপুরে সবচেয়ে বেশি গারো জনগোষ্ঠীর সদস্যের বাস। এ ছাড়া ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সিলেট ও সুনামগঞ্জে গারোদের বসবাস আছে। গারোদের ভাষায় 'জাবা' শব্দের অর্থ তরকারি। জাবা ২০১৯ সালে ফার্মগেটে যাত্রা শুরু করে।

ছবি: জাবার ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৫টির মতো খাবারের পদ রান্না হয় এখানে। মূলত যখন যে মৌসুম চলে, সে অনুযায়ী বাজার আর রান্না করা হয়। কলাপাতায় ছোটমাছ, ফিশ উথেপা, চিকেন গপ্পা, হাঁস ব্যাম্বু শুট কষা, মাশরুম ভেজিটেবল ফ্রাই, চেপা শুঁটকি ভর্তা, টাকি মাছের ভর্তা সঙ্গে রয়েছে বিন্নি চালের ভাত। গারোদের খাবারের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী, এই রান্নাগুলোতে তেল-মসলার ব্যবহার খুব কম।

আর ভর্তা, তরকারিগুলো হয় একটু শুকনো শুকনো ঝোল ছাড়া হয়। চাইলে সঙ্গে পঞ্চ বটির ডাল নিয়ে নিতে পারেন এক বাটি।

রয়েছে নানা ধরনের পানীয়ও। বিভিন্ন ফলের রস, বেলের চা, তেঁতুল চা পাবেন। সঙ্গে আছে গারোদের বাহারি পিঠা।

সিএইচটি কালিনারি

ছোট ও আরামদায়ক এই রেস্তোরাঁটি মিরপুরের কাজীপাড়াতে অবস্থিত। ঢুকতেই দেখতে পাওয়া যাবে দেয়ালে পাহাড়িদের অক্ষর, চিত্র আর কারুকাজ। তাদের মেনুতে চাকমা খাবারের পাশাপাশি আছে জাপানি ও ভিয়েতনামের খাবারের ফিউশন।

রন্ধনশিল্পী সুমন চাকমা ২০১৮ সালে পশ্চিম কাজীপাড়ায় সিএইচটি এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরু  করেন। তিনি জানান, যারা পাহাড়ে ঘুরতে গিয়ে পাহাড়ি রান্নার স্বাদ নিয়ে এসেছেন তাদের কথা চিন্তা করেই শুরু করেন রেস্তোরাঁটি।

ছবি: সিএইচটি কালিনারির ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

এখানকার সবচেয়ে ভালো দিক হলো প্রতিদিনের বাজার প্রতিদিনই করা হয়, আর সেভাবেই ঠিক করা হয় মেনু। অতিথি খাবার মুখে দিলেই বুঝবেন খাবার কতটা টাটকা।

সুমন চাকমা খাবারে ফিউশন করতে ভালোবাসেন। ব্যাম্বু শুটের হালকা ফ্রাইয়ের সঙ্গে লেমনগ্রাসের সুঘ্রাণ, কাপ্তাই লেকের বাহারি মাছের হেবাং, ডিমের হেবাং, চিংড়ি দিয়ে কাঁঠাল, পাজন, কাঁকড়া, পাহাড়ি চালের পিঠা আর পায়েসসহ বেশকিছু পাহাড়ি অঞ্চলের খাবার মিলবে এখানে।

বিকেলের নাস্তায় মিলবে মুন্ডি, পিঠা, মোমো, লাকসু, ফ্রেশ পাহাড়ি ফল আর ফলের জুস।

সাবেরেং

অনেক তো হলো রেস্তোরাঁর খাবার, এবার জানব পাহাড়ি খাবারের পেজের নাম, যেখানে ঘরে তৈরি পাহাড়ি খাবার মিলবে। সাবেরেং মূলত হোম কিচেন। মা দেবলক্ষ্মী চাকমা ও মেয়ে পারাহিতা চাকমা হোম কিচেন শুরু করেন ২০১৭ সালে। মাঝখানে দুবছর বন্ধ থাকলেও করোনাকালে ব্যাপক সাড়া পান।

ছবি: সাবেরেংয়ের ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

তাদের জনপ্রিয় আইটেমগুলোর মধ্যে আছে চিংড়ি মরিচ গোদিয়্যে,বদা শুঁটকি ঝুরি, ইছা শুঁটকি মরিচ বাটা, ইছা ছুরি শুঁটকির তরকারি, বদা হেবাং, হাঁস ভুনা, বাচ্চুরিসহ চাকমাদের মজার মজার সব খাবার। তবে সাবেরেং হুরো আর মাংস মরিচ গোদিয়্যে একটু বেশিই জনপ্রিয়।

এসব মজার খাবার খেতে চাইলে একদিন সময় হাতে রেখে অর্ডার করতে হবে। আবার চাইলে ফুডপান্ডাসহ অন্যান্য অ্যাপ থেকেও অর্ডার করে বাসায় আরাম করে খেতে পারেন ।

সাবেরেং নিজস্ব এলাকা রাঙ্গামাটি থেকেই সংগ্রহ করে রান্নার উপকরণ। স্বত্বাধিকারী পারাহিতা চাকমা জানান, তাদের খাবারের গ্রাহক বেশিরভাগই বাঙালি। দেবলক্ষ্মী চাকমা জানান, সামনে সাবেরেং রেস্তোরাঁ চালু করার ইচ্ছা আছে।

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

5h ago