উত্তর গাজা ছেড়েও রক্ষা পেল না আইদের পরিবার

উত্তর গাজা ছেড়ে যাওয়ার নির্দেশে ফিলিস্তিনিরা দক্ষিণ গাজার দিকে গেলেও, রেহাই মেলেনি ইসরায়েলি হামলা থেকে। দক্ষিণ গাজার একটি ধ্বংসস্তূপে পড়ে আছে মরদেহ। ছবি: রয়টার্স

স্থল হামলা শুরুর আগে গত শুক্রবার উত্তর গাজা থেকে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ২৪ ঘণ্টা সময় বেধে দেয় ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

ইসরায়েলি বাহিনীর পক্ষ থেকে ফোনে কল করে, মেসেজ দিয়ে এবং লিফলেট ছড়িয়ে গাজাবাসীকে সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। উত্তর গাজা থেকে বাসিন্দাদের দক্ষিণে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

শুক্রবার ভোরে উত্তর গাজার বাসিন্দা আইদ আল-আজরামি ও তার ভাতিজা রাজির ফোনে একটি কল আসে। ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তার পরিচয় দিয়ে আইদ ও রাজিকে সতর্ক করে ফোনে বলা হয়, পরিচিত সবাইকে নিয়ে অবিলম্বে দক্ষিণের দিকে যেতে হবে।

রাজি সিএনএনকে জানান, ফোনে পাওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করে তারা দক্ষিণে চলে যান। কিন্তু পরদিন ইসরায়েলি বিমান হামলায় আইদের পরিবারের সবাই নিহত হয়।

সিএনএন ওই ফোনকলের রেকর্ড বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, এতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্দেশিত উত্তর গাজার ইভাকুয়েশন জোন বা উচ্ছেদের নির্দেশকৃত অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের দক্ষিণ দিকে পালাতে বলা হয়েছে। কিন্তু সেখানে কোন পথে যেতে হবে তার কোনো নির্দেশনা নেই।

দক্ষিণ গাজার রাফায় ইসরায়েলি হামলার পর আহত-নিহতদের উদ্ধার করছেন স্থানীয়রা। ছবি: এএফপি

রাজি জানান, যখন তিনি বুঝতে পারেন যে কে কল করেছে, তিনি কথোপকথনটি রেকর্ড করে রাখেন যেন পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে নির্দেশনা শেয়ার করতে পারেন।

ফোনে বলা হয়, 'তোমরা পরিবারের সবাইকে নিয়ে দক্ষিণে যাও। নিজেদের সব মালামাল সঙ্গে করে যাত্রা শুরু করো।'

আইদ জানতে চেয়েছিল, কোন পথ দিয়ে এবং কোন সময়ে যাওয়া নিরাপদ হবে?

ওই কর্মকর্তা বলেন, 'পথ বিবেচনা করা দরকার নেই। যত দ্রুত সম্ভব যাও। সময় নেই।'

আইদ তার সতর্কবার্তা শুনে শুক্রবার সূর্যোদয়ের আগেই ওয়াদি গাজা থেকে প্রায় ৮ মাইল দক্ষিণে এবং উচ্ছেদের নির্দেশকৃত অঞ্চলের বাইরে দেইর আল বালাহ শহরে এক বন্ধুর বাড়িতে যান পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনসহ।

পরদিন বালাহ শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ওই বাড়ি ধ্বংস হয়, যেখানে আইদের পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। 

আইদ নিজে এবং তার পরিবারের ৭ জন শিশুসহ ১২ সদস্য নিহত হন ওই বিমান হামলায়।

তার ভাতিজা রাজি কাছাকাছি আরেকটি ভবনে অবস্থান করছিলেন। বিস্ফোরণের শব্দ শুনে খারাপ কিছুর আশঙ্কা করেন তিনি। ফোনে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখেন চাচার পরিবারের সবাই নিহত।

রাজি বলেন, 'সবাই ভেবেছিল যে শেষ পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে চলে এসেছি। এখানে কিছুই হবে না।'

'বিপদ এড়াতে আপনি হয়ত তাদের নির্দেশ মানবেন। কিন্তু আপনি যেখানেই থাকুন না কেন মৃত্যুঝুঁকি আপনার আছেই,' বলেন তিনি।

ইতোমধ্যে প্রায় ৫ লাখ ফিলিস্তিনি উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণের দিকে আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকে এখনো উত্তর গাজায় আটকে আছেন।

ইয়ারা আলহায়েকের (২২) পরিবার উত্তর গাজা থেকে দক্ষিণে যায়নি, কারণ সেখানে তাদের আশ্রয় নেওয়ার কোনো জায়গা নেই।

ইয়ারা সিএনএনকে বলেন, 'আমরা যেতে পারিনি কারণ সেখানেও কোনো নিরাপদ জায়গা নেই। আমরা যদি বাড়ি ছেড়ে যাই তবে এটি সত্যিই বিপজ্জনক। যদি বাড়িতে থাকি তাও ভয়াবহ বিপদ। কী করব কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।'

গাজা থেকে বের হওয়ার সব পথ অবরুদ্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল ও মিশর। ইতোমধ্যে দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস ও রাফায় ইসরায়েল বিমান হামলা চালিয়েছে। হামলায় অন্তত ৭১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে আজ জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।

বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নেওয়ার সময় ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

সংস্থাটির মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, 'এটা খুবই আতঙ্কের খবর যে বেসামরিক নাগরিকরা দক্ষিণ গাজায় আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করার সময় হামলায় আহত ও নিহত হচ্ছেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের গুরুতর লঙ্ঘনের এসব ঘটনা স্বাধীনভাবে এবং পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করা উচিত।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt to scale back foreign loan reliance

The government plans to scale back its dependence on foreign loans as it seeks to mitigate threats to external debt sustainability.

12h ago