ঢাকায় ঘর সাজানোর জিনিসের খোঁজ
সারাদিনের ব্যস্ততা আর কাজের শেষে আমরা ফিরে যাই নিজেদের ঘরে। নিজের মতো একান্ত সময় কাটানো বা বিশ্রামের জন্য সকলের প্রিয় ও আরামদায়ক জায়গা নিজের ঘর। প্রত্যেকে চায় নিজের ঘর বা বাড়িকে দৃষ্টিনন্দন করে সাজাতে। তবে ঘর সাজানোর কোন বাঁধাধরা নিয়ম নেই। রুচি, সামর্থ্য ও শৌখিনতা ভেদে একেকজনের অন্দরসজ্জা হয় একেক রকম।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় পেজ 'ডেকোর আপা'র নাজিয়া সুলতানা গত দুই বছর ধরে ঘর সাজানোর নানা আইডিয়া শেয়ার করে আসছেন।
তিনি বলেন, 'ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে মানুষের এখনকার আগ্রহ হালকা রং এবং হালকা আসবাবের দিকে, দেশীয় আবহে। আগের দিনের বেতের আসবাব এখন আবার নতুন করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।'
ঘর সাজানোর জিনিসগুলো কোথায় কমদামে কিনতে পাওয়া যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কম দামে জিনিস কেনার একটা উপায় হলো স্থানীয় কারিগরদের কাছ থেকে ডিজাইন দিয়ে জিনিস বানিয়ে নেওয়া। এ ছাড়াও কমদামের ভেতরে ভ্যান মার্কেট গুলো এখন বেশ জনপ্রিয়। মিরপুর হোপ মার্কেট, মোহাম্মদপুর কৃষি মার্কেট, খিলগাঁও তালতলা, উত্তরার কিছু জায়গায় ভ্যানে করে ঘর সাজানোর হরেক রকম জিনিস পাওয়া যাচ্ছে খুবই সাশ্রয়ী দামে। আর এ ছাড়াও এখন অনেক অনলাইন পেইজও ঘর সাজানোর নানান রকম জিনিস নিয়ে খুব ভাল কাজ করছে।'
ঘর সাজানোর সামগ্রী কোথায় পাবেন তা জেনে নেওয়া যাক-
মাটির জিনিস
দেশীয় আবহে ঘর সাজাতে চাইলে মাটির জিনিসের ব্যবহার থাকা আবশ্যক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল সংলগ্ন দোয়েল চত্বরে অনেকগুলো মাটির তৈজসপত্রের দোকান রয়েছে। এ ছাড়া ঢাকায় বিভিন্ন রাস্তার পাশেই মাটির জিনিসের দোকান চোখে পড়ে। সেখান থেকে কম দামে কিনতে পারেন মাটির বাসনকোসন, ফুলদানি, টেপাপুতুলসহ অনেক কিছু। আড়ংসহ বিভিন্ন সুপার শপেও পেয়ে যাবেন মাটির বিভিন্ন জিনিস। ৫০ টাকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন দামের মধ্যে পাবেন এগুলো।
শতরঞ্জি
রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শতরঞ্জি ব্যবহার করে ঘরে আনতে পারেন দেশীয় আবহ। শতরঞ্জি নিজস্ব নকশা ও বুননের জন্য বিখ্যাত। শীতকালে ঘরে শতরঞ্জির ব্যবহার যেমন ঠান্ডা মেঝে থেকে মুক্তি দিবে তেমনি ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলবে। এ ছাড়া শতরঞ্জির পণ্যের মধ্যে টেবিল ম্যাট, ওয়াল ম্যাটও পাওয়া যায়। ঢাকার শুক্রাবাদে কারুপণ্যের আউটলেটে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন মাপের ও বিভিন্ন ডিজাইনের শতরঞ্জি। এখানে ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে সাইজভেদে বিভিন্ন দামের শতরঞ্জি রয়েছে।
ল্যাম্পশেড
আলো-আঁধারির খেলায় ঘরকে আরও আকর্ষনীয় করে তোলে ল্যাম্পশড। যেকোনো ঘরের কোণায় রাখতে পারেন ল্যাম্পশেড। আজকাল কাঠ, বেত, পুঁতি, হোগলাপাতা, বাঁশ, কাগজ ও কাপড়ের তৈরি ল্যাম্পশেড পাওয়া যায়। দোয়েল চত্বর, কাঁটাবন, পুরান ঢাকার নবাবপুর, পল্টন মোড়, বিজয়নগর, নিউমার্কেট, গুলশান ডিসি মার্কেটে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন রকমের ল্যাম্পশেড। এ ছাড়া কিছুটা অন্যরকম রিকশা পেইন্টের ল্যাম্পশেড পেয়ে যাবেন বনানীর যাত্রাতে। আড়ং, অরণ্য ও মোহাম্মদপুরের সোর্সে পেয়ে যাবেন বিভিন্ন ম্যাটেরিয়েল ও ডিজাইনের ল্যাম্পশেড। ম্যাটেরিয়াল ভেদে ভিন্ন ভিন্ন দামের ল্যাম্পশেড পাবেন এসব জায়গায়।
ওয়াল হ্যাঙ্গিং
ঘরের দেয়ালগুলোকে সাজিয়ে তুলতে দেয়ালে লাগাতে পারেন ওয়াল হ্যাঙ্গিং। কাঠের ওপর খোদাই করা ডিজাইন ছাড়াও বাঁশ ও আয়রনের তৈরি বিভিন্ন রকম ওয়াল হ্যাঙ্গিং পাওয়া যায়। এ ছাড়া ঘরকে আর অভিজাত ও নান্দনিক দেখাতে লাগাতে পারেন নকশিকাঁথা অথবা রিকশা পেইন্টিং। নকশিকাঁথার ওয়াল হ্যাঙ্গিংগুলো কিছুটা দামী হয়। আজকাল ক্যালিগ্রাফির বিভিন্ন ওয়াল হ্যাঙ্গিং পাওয়া যায়। তবে দেয়ালের রং ও পুরো ঘরের সাজের ওপর নির্ভর করে বেছে নিতে হবে পছন্দের ওয়াল হ্যাংগিং। নিউমার্কেট, আড়ং, যাত্রায় পেয়ে যাবেন এগুলো।
ছবির ফ্রেম
জীবনের বিশেষ স্মৃতি ধরে রাখতে আমরা ছবি তুলে রাখি। অন্দরসজ্জায় সেই ছবিগুলোই ব্যবহার করতে পারেন। দেয়ালের রং ও আসবাবের ধরন বুঝে ছবির ফ্রেম বেছে নিতে হবে। বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল ও সাইজের ফ্রেম পাওয়া যায় যেমন- কাঠ, সিরামিক, অ্যান্টিক, কাঁচ, বেত ও স্টিলের। নিউমার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোডে ছবির ফ্রেমের বিভিন্ন দোকান রয়েছে। আড়ংয়েও পাবেন।
আয়না
শুধু নিজের সাজের জন্য নয়, অন্দরসজ্জাতেও ব্যবহার করতে পারেন আয়না। বাসায় ঢোকার সময় যে দেয়ালটি আগে চোখে পড়ে সেখানে অথবা বসার ঘরে লাগাতে পারেন আয়না। এ ছাড়া অনেকগুলো ফটোফ্রেমের মাঝে লাগাতে পারেন আয়না। বিভিন্ন ডিজাইন, আকার ও রঙের আয়না পাওয়া যায়। ঢাকায় নিউমার্কেট ও এলিফ্যান্ট রোডে আয়নার কিছু দোকান রয়েছে।এছাড়া আড়ং-এ পেয়ে যাবেন বিভিন্ন ডিজাইনের আয়না।
তামা-কাঁসার বাসনকোসন
অন্দরসজ্জায় আভিজাত্য আনতে চাইলে ব্যবহার করতে পারেন তামা-কাঁসার বাসনকোসন। বাসনকোসন ছাড়াও কাসার ফুলদানিতে রাখতে পারেন ফুল। পুরান ঢাকার শাঁখারীবাজার, ইসলামপুর, তাঁতীবাজার ও সূত্রাপুর এলাকায় পেয়ে যাবেন তামা ও কাসার জিনিস। এলিফ্যান্ট রোড ও বনানীতেও রয়েছে কাঁসা-পিতলের জিনিসের দোকান।
Comments