স্বাদে অনন্য কুড়িগ্রামের মহিষের দুধের চমচম

কুড়িগ্রামের চমচম
ছবি: এস দিলীপ রায়

চমচম দেশের নানা স্থানেই পাওয়া যায়। তবে কুড়িগ্রামের ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের মানুষজন যে চমচমের সঙ্গে পরিচিত, সেটি কিন্তু বেশ আলাদা। কারণ এই চমচম তৈরি হয় মহিষের টাটকা দুধের ছানা দিয়ে। ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল ছাড়া দেশের আর কোথাও এ মিষ্টি পাওয়া যায় না।

চরাঞ্চলের লোকজন জানান, কুড়িগ্রামে ব্রহ্মপুত্র নদের বুকে প্রায় ৪০০টি চরাঞ্চলের তিন লাখ মানুষ এই চমচমের সঙ্গে পরিচিত। স্থানীয়ভাবে এটিকে 'চরচম' বলে ডাকা হয়। চরাঞ্চলের ১২টি হাটে খোলাভাবে এ মিষ্টি বিক্রি করেন চরাঞ্চলের মিষ্টির কারিগররা। এ চমচম দামে সস্তা হলেও স্বাদে অতুলনীয়। প্রতি কেজি বিক্রি করা হয় ২০০-২২০ টাকা দরে।

কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার চিলমারী ইউনিয়নের জোরগাছ হাটে কথা হয় চমচম বিক্রেতা শাহ আলমের সঙ্গে।

তিনি বলেন, গত ৩০ বছর ধরে তিনি চরাঞ্চলের হাটে খোলাভাবে চমচম মিষ্টি বিক্রি করছেন। আগে তার বাবা কেরামত আলী এ মিষ্টি বিক্রি করতেন। তারা নিজেরাই বাড়িতে চমচম বিক্রি করে হাটে বিক্রি করেন।

'গরুর দুধের চেয়ে মহিষের দুধে ঘনত্ব বেশি। এ কারণে মহিষের দুধে তৈরি ছানার ঘনত্বও বেশি। মহিষের দুধের ছানা দিয়ে তৈরি করা আমাদের চমচম স্বাদে অতুলনীয় হয়ে থাকে। চরাঞ্চলের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বিবেচনা করে আমরা প্রতি কেজি মিষ্টি ২০০-২২০ টাকা দরে বিক্রি করি', বলেন শাহ আলম।

চমচম
ছবি: এস দিলীপ রায়

তিনি জানান, চরাঞ্চলে মহিষের দুধ খুব সহজে পাওয়া যায়। এ ছাড়া মহিষের দুধ গরুর দুধের চেয়ে কম দামে কেনা যায়। চমচম মিষ্টি তৈরি করতে প্রায় ৮৫ শতাংশ ছানা ও ১৫ শতাংশ ময়দা ব্যবহার করা হয়।

একই হাটের চমচম বিক্রেতা সুজন ইসলাম বলেন, 'আমরা বাড়িতে নিজেরাই চমচম তৈরি করি। এতে মিষ্টি তৈরির কারিগর খরচ লাগে না। চরের হাটে খোলা মিষ্টি বিক্রি করি। এ কারণে দোকান ভাড়া দিতে হয় না। আমরা যে মিষ্টি ২০০ টাকায় বিক্রি করি তা বাজার থেকে কিনতে ৪০০ টাকা লাগবে। এ ছাড়া এ স্বাদের মিষ্টি বাজারে পাওয়াও যায় না,' তিনি বলেন।

'ব্রহ্মপুত্র পাড়ে ৪৫-৫০ জন চমচম কারিগর ও ব্যবসায়ী রয়েছেন। আমরা সপ্তাহের প্রতিদিনই কোনো না কোন হাটে চমচম বিক্রি করি। নৌকায় চড়ে মিষ্টি নিয়ে চরের হাটে যাই। প্রতি হাটে ৫০-৬০ কেজি চমচম বিক্রি করতে পারি। এতে আমরা ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা রোজগার করি,' তিনি বলেন।

চমচম
ছবি: এস দিলীপ রায়

চর শাখাহাতি এলাকার কৃষক নজর আলী মন্ডল জানান, চমচম চরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী খাবার। হাটে পণ্য কেনা-বেচা করতে আসলেই তারা চমচম কেনেন। হাট শেষে চমচম নিয়ে বাড়িতে ফেরা ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চলের মানুষের ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। কেউ ২-৩টা, কেউ আবার কেজি হিসেবে কিনে নিয়ে যান বাড়িতে।

জোরগাছ চরের নয়া মিয়া জানান, চরাঞ্চলে পারিবারিক ও সামাজিক কোনো অনুষ্ঠান হলে এই মিষ্টির আয়োজন থাকতেই হবে।

কুড়িগ্রাম শহরের মিষ্টির কারিগর সুরেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, তারা চরাঞ্চলের এ মিষ্টি শহরে বানানোর কথা ভাবলেও মহিষের দুধের ছানা সংগ্রহ করা কঠিন তাদের জন্য। চরাঞ্চলে মহিষের দুধ সহজেই পাওয়া যায়। ফলে ওই অঞ্চলের লোকজনই বানাতে পারেন।

চিলমারী উপজেলা কর্মরত এনজিওকর্মী আহসানুল কবির বুলু বলেন, প্রকল্পের খোঁজ তিনি প্রায়ই চরাঞ্চলে যান। আর সেখানে চমচম খাওয়াই হয়। মহিষের দুধের এ মিষ্টির স্বাদ অতুলনীয়।

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh Bank signals market-based exchange rate regime

The central bank will allow the exchange rate of the dollar to be determined by market forces

1h ago