সঙ্গীর রাজনৈতিক মত ভিন্ন হলে কী করবেন

সঙ্গীর রাজনৈতিক মত ভিন্ন
ছবি: সংগৃহীত

ধরুন, আপনি একজনকে ভালোবাসেন কিন্তু তার সঙ্গে আপনার রাজনৈতিক মতাদর্শ মেলে না। তার প্রতি ভালোবাসা, মায়া, প্রেম, বোঝাপড়া কোনোকিছুরই কমতি নেই। কিন্তু যখন রাজনীতির প্রসঙ্গে কথা বলতে যান তখন কথোপকোথন রীতিমতো ঝগড়ায় পরিণত হয়। তখন মনে হয়, এই মানুষটাকে ভালোবেসে কী ভুল করলেন?

সঙ্গী, স্বামী-স্ত্রী কিংবা প্রেমিক-প্রেমিকার সঙ্গে আমরা বিভিন্ন ধরনের কথা বলি। মনের প্রায় সব কথাই ভাগ করে নিই তাদের সঙ্গে। কিন্তু যদি রাজনৈতিক মতাদর্শে না মেলে তখন আসলে কী হয়, কীই বা করা উচিত?

গ্রীক দার্শনিক এরিস্টটল বলেছিলেন, 'মানুষ স্বভাবতই একটি রাজনৈতিক প্রাণী।' ফলে রাজনীতির বাইরে থাকার সুযোগ আসলে কারো নেই। সঙ্গীর সঙ্গে রাজনৈতিক আলাপ না করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে গেল, এটা ভাবারও সুযোগ নেই আসলে।

রাজনৈতিক মতাদর্শে ভিন্নতা মানে দুজন আলাদা দুটি দলের সমর্থন করা, বিষয়টা এত সরল নয় কিন্তু। পরিবর্তিত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কোভিড টিকা দেওয়া নিয়ে যে বিতর্ক, তাও রাজনৈতিক মতপার্থক্যই। এছাড়া একটি দেশের গর্ভপাতের আইন কেমন হবে, জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে কোন ধরনের পদক্ষেপ কার্যকর, অস্ত্র আইন বদলানো প্রয়োজন কি না, অভিবাসী আইনটি যথাযথ আছে কি না কিংবা মূল্যস্ফীতি নিয়ে দেশ যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে তা সঠিক কি না; এসব নিয়েও যে মতপার্থক্য তাও রাজনৈতিক।

এসব বিষয় নিয়ে চায়ের কাপে ঝড় তুলতে, আলোচনা করতে অনেকেই পছন্দ করেন। কিন্তু সেই ঝড় যখন শোবার ঘরে চলে আসে কিংবা সম্পর্কে চিড় ধরিয়ে দেয় তখন পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার উপায় কী?

মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট ভেরি ওয়েল মাইন্ড বলছে, এক্ষেত্রে সম্পর্কের শুরুতেই একে অন্যের বিষয়ে সবকিছু স্পষ্ট করে বলে নিতে হবে। যেন সম্পর্ক শুরু পর কোনো ধরনের জটিলতা তৈরি না হয়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে, আপনি এবং আপনার সঙ্গী কখনোই সব বিষয়ে শতভাগ একমত হবেন না। তবে প্রত্যেকের বিশ্বাস সম্পর্কে প্রত্যেকের সম্মান বজায় রাখতে জানতে হবে। আর এটা করা সম্ভব হলে, সম্পূর্ণ বিপরীত রাজনৈতিক চিন্তার মানুষও নির্বিঘ্নে একে অন্যের সঙ্গে বাস করতে পারবেন।

যদি সঙ্গীর ভাবনা সময়ের সঙ্গে বদলায়

দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় সেটা হলো, সঙ্গীর ভাবনা সময়ের সঙ্গে বদলে যাওয়া। অনেক সময় দেখা যায় খুব প্রগতিশীল সঙ্গীও ১০-১২ বছর পর গোড়া মৌলবাদীতে পরিণত হন। সেক্ষেত্রে সঙ্গীর কী করা উচিত?

মানুষ সময়ের সঙ্গে বদলাবেই এটা মাথায় রেখেই সম্পর্কে জড়ানোর পরামর্শ ভেরি ওয়েল মাইন্ডের। তবে ‍দুজনকেই দুজনের পরিবর্তনটা মেনে নেওয়া শিখতে হবে। তাহলেই সম্পর্ক বা দাম্পত্য স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। অবশ্য সঙ্গীর পরিবর্তন যদি অন্য কারো ক্ষতির কারণ হয় তাহলে সে সম্পর্ক নিয়ে ভেবে দেখতে হবে।

সাইকোলজি টুডের এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, সাধারণ দম্পতিদের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হতেই পারে। কিন্তু যখন চারপাশের পরিস্থিতিও উত্তপ্ত থাকে সেই সময় এ ধরনের তর্ক খারাপ ধরনের ঝগড়ায় রূপ নেয়। আবার দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে তখন আলোচনাও স্বাভাবিকভাবেই শেষ হয়।

দুই ধরনের মতাদর্শের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক সুন্দর রাখার বা দাম্পত্য গতিশীল রাখার উপায় সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে। সাইকোললজি টুডে ও ল্যাম্বার্ট কাপল থেরাপির ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে নানা পরামর্শও।

সম্পর্ক নাকি রাজনৈতিক মতাদর্শ, কোনটি আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ

এ দুটির মধ্যে কোনটিকে বেশি গুরুত্ব দেবেন সেটিও নির্ভর করছে আপনার ওপর। সাইকোলজি টুডে বলছে, যেসব দম্পতি রাজনীতির চেয়ে সম্পর্ককে বেশি অগ্রাধিকার দেয় তারা এ ধরনের পরিস্থিতি ভালোভাবে সামাল দিতে পারে। এক্ষেত্রে যেটি সবচেয়ে প্রয়োজন তা হলো, আপনার রাজনৈতিক মূল্যবোধ কতটা গভীর এবং তা ভিন্নমতের সঙ্গে শ্রদ্ধার ভিত্তিতে কতটুকু সহাবস্থান করতে পারে সেই বিষয়টি। তাই সম্পর্ক ঠিক রাখতে এটা নির্ধারণ করুন যে আপনার কাছে কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পরিবার, কর্মজীবন, দাম্পত্যে সন্তুষ্টি নাকি রাজনৈতিক বিশ্বাস?

আলোচনা করুন

দুজনের মধ্যে মতাদর্শগত পার্থক্য থাকলে সেটি নিয়ে আলোচনা করুন। একে অন্যকে হুমকি দিয়ে নয়, দুজন দুজনের ভাবনাটা বুঝতে চেষ্টা করুন, সঙ্গীর প্রতি সম্মান দেখান।

নিজেকে জানুন

আপনি যেটা বিশ্বাস করছেন সেটা সম্পর্কে জানুন। নিজের বিশ্বাস সঙ্গীর ওপর চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করবেন না। বরং একে অন্যের বিশ্বাসটা সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করুন। সঙ্গীর প্রতি আস্থা নষ্ট হতে দেবেন না।

নিজের সহ্যশক্তি কতুটুক দেখুন

আপনি কতটুকু সহনশীল সেটা সম্পর্কে ধারণা রাখুন। সঙ্গীর সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে নিন। দুজনে সমঝোতার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিন যে, মতাদর্শগতভাবে আলাদা হয়েও আপনারা নিজেদের কোন পর্যন্ত সহ্য করতে পারবেন।

ঝগড়ার সময় মনে করুন, কেন একে অন্যকে ভালোবেসেছিলেন

যখন রাজনীতি নিয়ে তর্ক তুঙ্গে, কিছুতেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে না; তখন পুরোনো কথা মনে করুন। ভেবে দেখুন এত মানুষের ভিড়ে কেন এই সঙ্গীকেই মনে ধরেছিল। ভাবুন, কোন বিষয়গুলো আপনাদের এক করেছিল। সেগুলো কী রাজনৈতিক ভাবনার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কি না, সেটা ঠিক করুন।

মোট কথা, রাজনৈতিক মতাদর্শ ভিন্ন হওয়ার পরেও আপনি যদি একটি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চান, তাহলে দুজনকেই হতে হবে খোলা মনের। একে অন্যের বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে, ভালোবাসার পাশাপাশি সঙ্গীর প্রতি আস্থাশীল হতে হবে। টুকটাক মতবিরোধকে বেড়ে মহীরুহ হতে দেওয়া যাবে না।

তাহলেই এসব বিরোধের পরও সুন্দর সম্পর্ক, সুন্দর দাম্পত্য পাওয়া সম্ভব। একটি পরিবারের মধ্যে রাজনীতি নিয়ে বৈচিত্র্যপূর্ণ মতামত থাকতেই পারে। সেটাকে স্বাভাবিকভাবেই নিতে হবে। আর জানেনই তো, বৈচিত্র্যেই সৌন্দর্য।

 

Comments

The Daily Star  | English

10-day holiday for Eid-ul-Azha

The decision was made today at a meeting of the advisory council at the Secretariat

32m ago