অবরোধ প্রত্যাহার: ৯ দিন পর লালমনিরহাট-বুড়িমারী ট্রেন চলাচল শুরু

৯ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার সকাল থেকে লালমনিরহাট-বুড়িমারী রেলপথে ট্রেন চলাচল আবার শুরু হয়েছে। বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে আন্তঃনগর ট্রেন 'বুড়িমারী এক্সপ্রেস' সরাসরি ঢাকা-বুড়িমারী রুটে চালুর দাবিতে স্থানীয়রা গত ২১ এপ্রিল সোমবার থেকে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত পাটগ্রাম ও হাতীবান্ধায় এই রেলপথ অবরোধ করে রেখেছিল।
৮৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেলপথে মোট ১৩টি স্টেশন রয়েছে এবং প্রতিদিন চার জোড়া ট্রেন চলাচল করে।
লালমনিরহাট রেলস্টেশন মাস্টার নুরন্নবী ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, অবরোধ প্রত্যাহার হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে এই রুটে ট্রেন চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়েছে। তিনি বলেন, এই রুটে প্রতিদিন চার জোড়া ট্রেন চলাচল করে – যার মধ্যে একটি মেইল ট্রেন, একটি কমিউটার ট্রেন, একটি এক্সপ্রেস ট্রেন এবং একটি লোকাল ট্রেন রয়েছে। প্রতিটি ট্রেনে ১২০০ থেকে ১৬০০ যাত্রী যাতায়াত করেন। ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় বুধবার সকাল থেকে স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে।
অবরোধকারীদের নেতৃত্ব দেওয়া পাটগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ ওপেল জানান, আপাতত 'ডেডিকেটেড শাটল' ট্রেনের মাধ্যমে লালমনিরহাট রেলস্টেশনে বুড়িমারী এক্সপ্রেসের সংযোগ দেওয়ার আশ্বাসে তারা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন। রেল কর্তৃপক্ষ বুড়িমারী স্টেশন থেকে সরাসরি ঢাকা-বুড়িমারী রুটে ট্রেনটি চালু করার জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নেবে বলে তাদের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, 'আমাদের দাবি পূরণে রেল কর্তৃপক্ষ গড়িমসি করলে আমরা পুনরায় আন্দোলনের ডাক দেব।'
অবরোধকারীরা জানান, এর আগে ২০২৪ সালের ১২ মার্চ আন্তনগর বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি একবার সরাসরি বুড়িমারী থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়েছিল। কিন্তু পরের দিন ১৩ মার্চ থেকেই এটি আবার লালমনিরহাট থেকে চলাচল শুরু করে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অন্তত পাঁচবার নির্দিষ্ট দিন-তারিখ উল্লেখ করে বুড়িমারী থেকে সরাসরি ঢাকা পর্যন্ত ট্রেনটি চালুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, কিন্তু রহস্যজনক কারণে তা চালু করা হয়নি।
লালমনিরহাট রেলস্টেশনে আসা ৬০ বছর বয়সী ট্রেনযাত্রী আব্দুস সামাদ ডেইলি স্টারকে জানান, তিনি সবসময় ট্রেনে যাতায়াত করেন এবং এই রুটের নিয়মিত যাত্রী। ৯ দিন ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় তাকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল। তিনি বলেন, 'খুব কম খরচে এবং কম সময়ে নিরাপদে এই রুটে ট্রেনে চলাচল করা যায়। এখানে সড়কপথে যোগাযোগ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল।'
ফেরিওয়ালা আজিম উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ট্রেন চলাচল শুরু হওয়ায় তাদের রুজি-রোজগার আবার চালু হয়েছে। এই রুটে ট্রেনযাত্রীদের কাছে পণ্য বিক্রি করে প্রায় ১২০ জন ফেরিওয়ালা তাদের সংসার চালান। ট্রেন বন্ধ থাকায় তারা জীবিকা সঙ্কটে পড়েছিলেন। তিনি বলেন, 'ট্রেন চালু হওয়ায় আমাদের খুব ভালো লাগছে।'
লালমনিরহাট বিভাগীয় রেলওয়ের বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, লালমনিরহাট-বুড়িমারী রুটে একটি 'ডেডিকেটেড শাটল' ট্রেন চালু করা হবে। এই শাটল ট্রেনটি বুড়িমারী থেকে যাত্রী নিয়ে লালমনিরহাটে এসে বুড়িমারী এক্সপ্রেসের সঙ্গে সংযোগ দেবে। তিনি আরও জানান, বুড়িমারী থেকে সরাসরি ঢাকা পর্যন্ত বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনটি চালুর জন্য রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
Comments