গ্লুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ?

গ্লুকোজ
ছবি: সংগৃহীত

বাজারে সাদা গুঁড়োর মতো দেখতে এক ধরনের পাউডার যেটা গরমে হাট-বাজার থেকে অফিসের ডেস্ক পর্যন্ত সব জায়গায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। একে গ্লুকোজ পাউডার বলা হয়। পানিতে মিশিয়ে এটি খেলেই শরীর যেন চাঙা হয়ে ওঠে। ক্লান্তি দূর হয়, চোখ খুলে যায়, মাথা হালকা লাগে এমন অনুভব অনেকেরই হয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এই গ্লুকোজ খাওয়া কি আসলেই উপকারী? নাকি তা প্রয়োজন ছাড়াই আমাদের শরীরে ক্ষতি করছে?

চলুন জেনে নেওয়া যাক, গ্লুকোজ পাউডার কতটা উপকারী, এটি কখন খাওয়া উচিত এবং কখন তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। এ বিষয়ে জানিয়েছেন সিলেট ডায়াবেটিস অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডায়াবেটিস এডুকেটর ও পুষ্টিবিদ স্বর্ণালী দাশ বিজয়া।

পুষ্টিবিদ স্বর্ণালী দাশ জানান, গ্লুকোজ হলো এক ধরনের সরল চিনি, যাকে মনোস্যাকারাইড বলা হয়। এটি আমাদের শরীরের কোষগুলোর জন্য প্রধান জ্বালানির উৎস। আমরা যখন ভাত, রুটি, চিনি বা অন্যান্য শর্করাযুক্ত খাবার খাই, তখন হজম হয়ে এগুলো গ্লুকোজে রূপান্তরিত হয় এবং রক্তে মিশে দেহে শক্তি সরবরাহ করে।

গ্লুকোজ পাউডার সাধারণত খাদ্য-গ্রেড ডেক্সট্রোজ মনোহাইড্রেট, যা পানিতে মিশিয়ে খেলে খুব দ্রুত রক্তে শোষিত হয়। ফলে তাৎক্ষণিক শক্তি পাওয়া যায়।

স্বর্ণালী দাশ বিজয়া
স্বর্ণালী দাশ বিজয়া।

গ্লুকোজ খাওয়া কি নিরাপদ?

গ্লুকোজ পাউডার পানিতে গুলে খেলে দেহে দ্রুত মিশে যায়। কিছু ক্ষেত্রে গ্লুকোজ পানি উপকারী এটা সত্য। যেমন গরমে চটজলদি শরীরে এনার্জি পেতে এটি ভালো কাজ করে। সূর্যের প্রতাপ সহ্য করে যাদের বাইরে কাজ করতে হয়, যেমন রিকশাচালক, সেলসের কর্মচারী, ট্রাফিক পুলিশ। তারা গ্লুকোজ পানি সঙ্গে রাখতে পারেন। ক্লান্ত লাগলেই খেয়ে নিন কিছুটা। কয়েক মিনিটের শরীর সুস্থ লাগবে, ক্লান্তিভাব দূর হবে, তাৎক্ষণিক শক্তি জোগাবে।

যদি হাইপোগ্লাইসেমিয়া মানে রক্তে গ্লুকোজ কমে যায়, তখন গ্লুকোজ ড্রিংক খেতে বলা হয়।

গ্লুকোজ পাউডার পানি বা অন্যান্য পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এটি শরীরকে দ্রুত সতেজ করতে সাহায্য করে।

কখন বিপজ্জনক হতে পারে?

সাধারণত একজন সুস্থ মানুষের শরীরে প্রয়োজন অনুযায়ী গ্লুকোজ খাদ্য থেকে স্বাভাবিকভাবেই পাওয়া যায়। গ্লুকোজ পাউডার শুধু তখনই খাওয়া উচিত যখন কোনো নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তা জরুরি হয়ে পড়ে। যেমন অতিরিক্ত ঘাম, দুর্বলতা, খেলাধুলার পর অথবা হাইপোগ্লাইসেমিয়া। অন্যথায় এটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

গ্লুকোজ প্রয়োজন বলে মুঠো মুঠো গ্লুকোজ গুঁড়া খাওয়াও বুদ্ধিমানের কাজ নয়। মনে রাখতে হবে, ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে হুট করে সুগার বাড়িয়ে দিতে পারে গ্লুকোজ মেশানো পানীয়। তাই ব্লাড সুগার বেশি থাকলে এই পানীয় পান করা একবারেই উচিত নয়।

এছাড়া দেখা গেছে যে, শরীরে কোলেস্টেরল বাড়াতে পারে এই পানীয়। তাই হাইপার লিপিডিমিয়ার রোগীরাও এর থেকে দূরে থাকুন। এছাড়া সুস্থ–স্বাভাবিক মানুষ এটি নিয়মিত খেলে পেটে মেদ জমে যায়, মুটিয়ে যায়। তখন শরীর আরও খারাপ লাগতে পারে।

বেশি গ্লুকোজ পানি দাঁত ক্ষয় করতে পারে।

মাত্রাতিরিক্ত সুগার ডিমেনশিয়ার মতো জটিল রোগের জন্য দায়ী, সেটা গবেষণায় দেখা গেছে। এছাড়া ক্যানসার আক্রান্তদেরও গ্লুকোজ পানীয় পানে মানা থাকে। তাই খুব প্রয়োজন না হলে এ ধরনের গ্লুকোজ পানি পরিহার করা ভালো।

বিকল্প কী ও করণীয়

নিয়মিত পানি পান করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। পর্যাপ্ত পানি পান করলে এ গরমে খুব সহজে বিভিন্ন জটিলতা প্রতিরোধ করা সম্ভব। পাশাপাশি ডাবের পানি, ওআরএস মেশানো পানি খেতে পারেন। এই দুই পানীয় গরমে শরীরকে সুস্থ রাখে।

ডাবের পানিতে বিভিন্ন জরুরি খনিজ লবণ থাকে, যা লবণের ঘাটতি প্রতিরোধে সহায়তা করে। ফলের রস বা জুস খাওয়া যেতে পারে। সেটা ঘরে তৈরি করে নেওয়া ভালো।

 

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

2h ago