নতুন শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে এতো আতঙ্ক ও গুজব কেন
নতুন শিক্ষা কারিকুলামে ফিনল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, জাপানসহ অনেক উন্নত দেশের শিক্ষার মডেল অনুসরণ করা হচ্ছে বলা হলেও আমাদের জাতীয় ঐক্য-সংহতির জন্য হুমকিস্বরূপ বহুধা বিভক্ত শিক্ষার মাধ্যম নিয়ে নীতিনির্ধারকদের কোনো ভাবনা নেই, কোনো পরিকল্পনার বাস্তবায়ন নেই—এটা উদ্বেগের।
পৃথিবীর কোনো উন্নত দেশে সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অননুমোদিত কারিকুলামে শিক্ষা কল্পনাতীত। কিন্তু স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেই এবং এক ধরনের শিক্ষা-নৈরাজ্য চলছে বাংলাদেশে। ঢাকায় বিভিন্ন এলাকার এক গলির দুই মাথায় নামে-বেনামে সাইনবোর্ড সর্বস্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদাহরণ আছে। এগুলোর লাগাম টেনে ধরা জরুরি।
একটি রাষ্ট্রের নাগরিকদের কারা কী শিক্ষা দিচ্ছে, এ নিয়ে সরকারের সুস্পষ্ট নীতিমালা, বিধি-বিধান থাকা উচিত। শিক্ষার সঙ্গে আনন্দের সংযোগ থাকা জরুরি। যে শিক্ষা পদ্ধতিতে নতুন কিছু শেখার আমেজ নেই, আনন্দ নেই, উৎসব নেই, একঘেয়েমিপূর্ণ, সেই শিক্ষা আমাদের হৃদয়কে স্পর্শ করে না এবং দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসূ হয় না।
শিক্ষার প্রধান কাজ মানুষের চিন্তা ও কল্পনাশক্তিকে উসকে দেওয়া, প্রচলিত ভাবনাকে প্রশ্ন করা, উত্তর খোঁজা, নতুন কিছু আবিষ্কার ও উদ্ভাবনে কৌতূহলী মনকে উদ্বুদ্ধ করা। তাই শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্তরিকভাবে মিশে, নেচে, গেয়ে শেখাবেন, ব্যাঙের নাচ দেখিয়ে আনন্দ দেবেন, নাকি ভয়-ভীতি ও বেতের আতঙ্ক দেখিয়ে শেখাবেন—এখনো আমাদের এই অনর্থক বিতর্ক ও গুজবে পড়ে থাকতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে মাস্টার্স করার প্রায় এক দশক পর বিলেতে সেকেন্ড মাস্টার্স করছি শিক্ষার উপর। দেশে বেশ দীর্ঘসময় শিক্ষা ক্ষেত্রে কাজের অভিজ্ঞতার আলোকে শিক্ষা নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনার এই আগ্রহ জেগেছিল।
বিলেতে আমার মধ্যবয়সী এক শিক্ষক ক্লেয়ার ব্রাউন ক্লাসে রীতিমতো একজন স্টেজ পারফর্মার। তার শিশুসারল্য ও উপস্থাপন কৌশল দেখে বেশ মুগ্ধ হই। ওরিয়েন্টাল চোখ এমনটা দেখে ঠিক অভ্যস্ত নয়। টানা তিন ঘণ্টার ক্লাস, মাঝে আধঘণ্টার বিরতি। ক্লাসে তবুও বিরক্তি আসতো না।
শিক্ষক মানেই ব্ল্যাক বা হোয়াইট বোর্ডের সামনে ভাবগাম্ভীর্যে পূর্ণ একজন অনড় মানুষ, এমনটাই আমরা কল্পনা করেছি সারা জীবন। মনে পড়ে নব্বই দশকের শেষ দিকে আমরা যখন প্রাইমারি স্কুলে যেতাম, আমার প্রধান শিক্ষক সকালে নিজের খেতে চাষবাস করে ক্লাসে পড়াতে আসতেন। এটাই গ্রামীণ বাংলাদেশের সাধারণ চিত্র ছিল। তিনি এসেই ক্লাসরুমে প্রায়ই ঘুমিয়ে পড়তেন। টেবিলের উপর মাথা রেখে রীতিমতো নাক ডেকে ঘুমাতেন। আমাদের চিৎকারে বা দুষ্টুমিতে ঘুমে ব্যাঘাত হলে বেত্রাঘাত করতেন। এই চিত্র এখন অনেক বদলেছে।
বাংলাদেশে শিক্ষকদের জীবনমান কাঙ্ক্ষিত না হলেও পরিবর্তন হচ্ছে। মেধাবীদের উচ্চবেতনে এ পেশায় আগ্রহী করে তোলার কোনো বিকল্প নেই।
প্রশ্ন হলো হঠাৎ করে নতুন কারিকুলাম নিয়ে বাংলাদেশে এতো বিরোধিতা হচ্ছে কেন? বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উদ্ভট সব ভিডিও ছড়িয়ে নতুন কারিকুলামের বিরোধিতা করছেন কারা?
এর কারণ ব্যাখ্যা করা সরল নয়। সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র হিসেবে বলতে পারি, মানুষের মন পরিবর্তনকে সহজে স্বাগত জানায় না। তার শরীর ও মন পুরাতনে অভ্যস্ত। নতুনে সে কৌতূহলী নয়, ভয় পায়। একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর এই অচেনার প্রতি ভয় আরও প্রবল হয়। খেয়াল করে দেখবেন ভারতবর্ষে কালাপানি পার হওয়া শাস্ত্রমতে পাপ ছিল। ফলে আঠারো-উনিশ শতকের আগে ভারতবর্ষের লোকজনের অভিবাসনের ইতিহাস নেই বললেই চলে।
অথচ আরবের লোকজনের সমুদ্রযাত্রার ইতিহাস মধ্যযুগেই শুরু। ফলে তারা তাদের ব্যবসা ও ধর্ম দুটোই প্রচার করেছে আফ্রিকা, ইউরোপ, এশিয়ায়। কলম্বাস ও ভাস্কো দা গামারাও আরবদের বাণিজ্যতরী দেখেই উৎসাহিত হয়েছেন, ঘর থেকে বেরিয়েছেন এবং দিকে দিকে স্প্যানিশ, ফরাসি, ব্রিটিশ সাম্রাজ্য স্থাপিত হয়েছে। সাম্রাজ্য বিস্তার, লুণ্ঠন ও শোষণ প্রক্রিয়ার সঙ্গে ইউরোপীয় রেনেসাঁর আলোও গেছে। ভারতবর্ষে লাখ লাখ নেটিভদের বিপরীতে মাত্র একজন ব্রিটিশ আমলা একা পুরো একটি জেলা শাসন করেছে। ভাবা যায়?
এই যে অজানা ও অচেনার প্রতি ভীতি, এটা আমাদের গ্রাস করে রেখেছিল বহুকাল ধরে। বহু শতাব্দীব্যাপী। তাই পরিবর্তন দেখলে আমরা আঁতকে উঠি। নতুন সংস্কারকে আমরা সহজে স্বাগত জানাই না। ফলে কুসংস্কার, কূপমণ্ডুকতার বেড়াজাল আমরা ছিন্ন করতে পারিনি। এই বিজ্ঞানের চরম উৎকর্ষতার যুগেও কিছু মানুষকে দেখা যায় ঝাঁড়-ফুঁক, তাবিজ-কবজে বিশ্বাস করতে। তারা নতুন শিখন পদ্ধতি দেখলে মনে মনে বিদ্রোহ করবেন এটাই স্বাভাবিক। কারণ এর সঙ্গে তাদের মূল্যবোধ, আদর্শ, রীতি-নীতির অবধারিত একটা নীরব সংঘর্ষ আছে।
এটাকে সাংস্কৃতিক ব্যবধান বা তফাতের আলোচনায়ও ফেলা যায়। সংস্কৃতির উপাদানগুলোকে মোটাদাগে দুই ভাগে ভাগ করলে একদিকে বস্তুগত সংস্কৃতি, অপরদিকে অবস্তুগত সংস্কৃতি। আধুনিক সমাজ ও সংস্কৃতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার অবিচ্ছেদ্য। ফলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বত্র কম্পিউটার প্রযুক্তির ব্যবহার অপরিহার্য।
এক সময় যারা ফতোয়া দিতো, টেলিভিশন 'শয়তানের বাক্স' তাদের মুখ এখন সবচেয়ে বেশি টেলিভিশনে, ইউটিউবে দেখা যায়। এটাই সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন। সংস্কৃতির অবস্তুগত দিক বিমূর্ত। যেমন: বিশ্বাস, মূল্যবোধ, আদর্শ, নৈতিকতা, ভাষা, ধর্ম ইত্যাদি। ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা ও আচরণ এই অবস্তুগত সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত।
১৯২২ সালে মার্কিন সমাজবিজ্ঞানী উইলিয়াম এফ অগবার্ন তার 'সোশ্যাল চেঞ্জ' গ্রন্থে যুগান্তকারী এক তত্ত্বে বলেছিলেন, যখন কোনো নতুন আবিষ্কার (এ ক্ষেত্রে নতুন কারিকুলাম বা শিক্ষাপদ্ধতি বিবেচনায় নেওয়া যায়) সমাজে প্রবেশ করে, তখন তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে মানুষের একটু সময়ের প্রয়োজন হয়। ওই প্রযুক্তিটি কীভাবে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন ঘটাবে তা শুরুতেই সবার বুঝতে একটু বেগ পেতে হয়।
বোধের এই ব্যবধানকে অগবার্ন সাংস্কৃতিক মন্থরতা বা পশ্চাৎপদতা বলেছেন। তত্ত্বকথা না বলে একটু সহজ করে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায়ও বলা যায়, 'অচেনাকে ভয় কী আমার ওরে? অচেনাকেই চিনে চিনে উঠবে জীবন ভরে/ জানি জানি আমার চেনা কোনো কালেই ফুরাবে না, চিহ্নহারা পথে আমায় টানবে অচিন ডোরে'।
অচেনা বা অজানা কিছু নিয়ে আমাদের ভয় পাওয়ার কিছু নেই। অচেনাকে চিনে চিনেই আমাদের জীবন ভরে ওঠে। নতুন আবিষ্কার বা পদ্ধতির সীমাবদ্ধতা থাকে। এমনকি অ্যাপল উদ্ভাবিত আইফোন, ইলেকট্রিক গাড়ি, মহাকাশযান সব নিত্য নতুন আবিষ্কারেও সেই সীমাবদ্ধতা থাকে এবং দ্রুত আপডেট হয়। যেকোনো কিছুর সীমাবদ্ধতা উত্তরণে মতামত ও পরামর্শ জরুরি, শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা নয়। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এখনো পুরনো শতাব্দীর মডেল অনুসরণ করছে। পৃথিবী এর মধ্যে অনেক বদলে গেছে। বদলে গেছে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতিও। ক্লাসে শীর্ষ রোল নম্বর, পাবলিক পরীক্ষায় স্টার মার্ক আর জিপিএ ফাইভ না পেলে জীবন শেষ, এমন ভাবনা মানুষের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকে ধ্বংস করে দেয়।
ফলাফল ও গুণগত দিক দিয়ে জেলার শীর্ষে থাকা সুনামগঞ্জের সাউথ-ওয়েস্ট সালেহ আহমদ স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মাহমুদ আলীর সঙ্গে নতুন শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে কথা হচ্ছিল। তিনি একটি উদাহরণ দিয়ে বললেন, 'আমরা পূর্বে শুধু বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের কথা পড়তাম। নতুন পদ্ধতিতে সরাসরি জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া এবং তাদের মুখে যুদ্ধদিনের লড়াই সংগ্রামের বর্ণনা শোনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইয়ে পাঁচ নম্বর সেক্টরের যুদ্ধের বর্ণনা পড়ার চেয়ে ওই সেক্টরে সরাসরি যুদ্ধ করা এক যোদ্ধার মুখে বর্ণনা শুনে উপলব্ধি ও আত্মস্থ করা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বেশি কার্যকর হবে।'
নতুন শিক্ষাব্যবস্থায় জীবনমুখী এবং প্রায়োগিক শিক্ষাপদ্ধতিকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এটা খুব জরুরি। আমাদের দেশে সামর্থ্যবান সব অভিভাবকরাই তাদের সন্তানদের বিদেশে পড়ানোর জন্য পাঠাতে উদগ্রীব। অথচ বিদ্যালয়ে রান্নাবান্না শেখার আয়োজন দেখে তারা হাসি-ঠাট্টা করছেন। অনেক অভিভাবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু বিচ্ছিন্ন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভিডিও ক্লিপ শেয়ার করে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। অভিভাবকদের ভালো করে না জেনে সমালোচনামুখর হওয়ার পাশাপাশি আমাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ শিক্ষকরা নিজেরাই নতুন শিক্ষা পদ্ধতিতে খাপ খাইয়ে নিতে প্রস্তুত না। শিখতে আগ্রহী না। শেখাতে হলে নিজে শেখা জরুরি।
শিক্ষকদের শেখায় আগ্রহ বাড়লে এবং প্রশিক্ষণ রপ্ত করলে শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে ভালো করে না বুঝে, না শুনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচ্ছিন্ন একটি-দুইটি ভিডিও ক্লিপ দেখে বিরোধিতার এই চিত্র দ্রুত পরিবর্তন হবে। পুরনো কর্মস্থল নোয়াখালী অঞ্চলে শিক্ষক প্রশিক্ষণের সঙ্গে জড়িত একজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি বলছিলেন, 'পূর্বে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা ছিল গতানুগতিক। নতুন কারিকুলামে হাতেকলমে শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, মুখস্থবিদ্যা নির্ভরতাকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, দলগত কাজে উদ্বুদ্ধ করা, পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসার সুযোগ, পড়াশোনায় প্রেজেন্টেশন বাড়ানোয় শিক্ষার্থীদের জড়তা কাটানো এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি, রোল নম্বরের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের মান নির্ধারণ করার বৈষম্য বা পক্ষপাতমূলক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো, ক্লাসের পড়া ক্লাসে শেষ করা, পরিপাটি, পরিচ্ছন্নতা, রান্না-বান্না জীবনমুখী শিক্ষায় প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। বছর শেষে পরীক্ষা তুলে দিয়ে সারা বছর মূল্যায়ন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষা-ভীতি দূর করবে। কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত অনেক শিক্ষক এতে বাড়তি আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে ভেবে ক্ষুব্ধ হয়েছেন। অভিভাবকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন। এর মধ্যে গতানুগতিক রাজনীতিও আছে।'
গুজব বা আতঙ্ক না ছড়িয়ে নতুন কারিকুলামের সীমাবদ্ধতা যাচাই করা জরুরি এবং সে আলোকে কারিকুলামে পরিবর্তন আনতে হবে। প্রযুক্তি-শাসিত পৃথিবী এখন বিচ্ছিন্ন নয়। নিবিড়ভাবে পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্ক যুক্ত। আমাদের লক্ষ্য হোক একুশ শতকের উপযোগী, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার মতো বিশ্বনাগরিক তৈরি করা।
আলমগীর শাহরিয়ার, কবি ও গবেষক
(দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয় নীতিমালার সঙ্গে লেখকের মতামতের মিল নাও থাকতে পারে। প্রকাশিত লেখাটির আইনগত, মতামত বা বিশ্লেষণের দায়ভার সম্পূর্ণরূপে লেখকের, দ্য ডেইলি স্টার কর্তৃপক্ষের নয়। লেখকের নিজস্ব মতামতের কোনো প্রকার দায়ভার দ্য ডেইলি স্টার নেবে না।)
Comments