পুরস্কার এনে দিল মাছির শরীর ফুঁড়ে বেরিয়ে আসা ‘জম্বি’ ছত্রাকের ছবি

আক্ষরিক অর্থে একটি ছবি কখনো কখনো জীবন, মৃত্য কিংবা ‘জম্বির’ প্রতিরূপও ধারণ করতে পারে। ২০২২ সালের বিএমসি ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়া এরকম একটি গা ছমছমে ছবির দেখা মিলেছে। ছবিটিতে দেখা যায়, একটি মাছির শরীর ভেদ করে বেরিয়ে আসছে ‘জম্বি’ ছত্রাক।
ছবি: বিএমসি ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনের ওয়েবসাইট থেকে সংগৃহীত

আক্ষরিক অর্থে একটি ছবি কখনো কখনো জীবন, মৃত্য কিংবা 'জম্বির' প্রতিরূপও ধারণ করতে পারে। ২০২২ সালের বিএমসি ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশন ফটোগ্রাফি প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়া এরকম একটি গা ছমছমে ছবির দেখা মিলেছে। ছবিটিতে দেখা যায়, একটি মাছির শরীর ভেদ করে বেরিয়ে আসছে 'জম্বি' ছত্রাক।

বিএমসি ইকোলজি অ্যান্ড ইভোলিউশনের ওয়েবসাইটে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছে। 

পেরুর রেইনফরেস্টে একটি সংক্রামিত মাছির প্রাণহীণ দেহ থেকে পরজীবী ছত্রাকের 'জম্বি' আকৃতির শরীর বেরিয়ে আসার ওই ছবিটি তোলা হয়েছে। 
 
বিজ্ঞান বিষয়ক সংবাদমাধ্যম সায়েন্স নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্পেনের ভ্যালেন্সিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কনজারভেশন ফটোগ্রাফার ও বিবর্তনবাদ বিষয়ক জীববিজ্ঞানী রবার্তো গার্সিয়া-রোয়া অ্যামাজনের একটি সুরক্ষিত আবাসস্থল তাম্বোপাটা ন্যাশনাল রিজার্ভ পরিদর্শনের সময় ছবিটি তোলেন। 

সারা বিশ্ব থেকে প্রতিযোগিতায় জমা পড়া অসংখ্য ছবির মধ্যে একটি ছিল ছত্রাক আক্রান্ত মাছির ওই ছবিটি। ওই প্রতিযোগিতার মূল উদ্দেশ্য ছিল প্রাকৃতিক বিশ্বের সৌন্দর্য এবং প্রকৃতি যেসব চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয় সেগুলো তুলে ধরা। গত ১৮ আগস্ট জার্নালটি বিজয়ীদের নাম প্রকাশ করে।

মাছি থেকে নির্গত এই বৈচিত্র্যময় পরজীবী ছত্রাকটি ওফিওকর্ডিসেপস প্রজাতির অন্তর্গত, যা 'জম্বি ছত্রাক নামে পরিচিত। এটি পোকামাকড়কে সংক্রামিত করে তাদের মন নিয়ন্ত্রণের বিশেষ ক্ষমতার কারণে পরিচিত।

নেদারল্যান্ডসের উট্রেচট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরজীবী ছত্রাক বিশেষজ্ঞ চ্যারিসা ডি বেকার বলেন, 'এই ছত্রাকের বৈচিত্র্য সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু উন্মোচন করা বাকি।'

কীটপতঙ্গে যেভাবে সংক্রমণ ঘটায় 'জম্বি' ছত্রাক

প্রথমত, ছত্রাকের স্পোরগুলো মাছির শরীরে প্রবেশ করায়। সেখান থেকে শুরু হয় মাছিটির দুর্ভাগ্যের পালা। স্পোরগুলো এর শরীরকে সংক্রামিত করার পর তার মন হাইজ্যাক করার আগে মাছির বহিঃকঙ্কালে অনুপ্রবেশ করে। একবার সেটি নিয়ন্ত্রণে চলে আসলে ছত্রাকটি মাছিটির মাধ্যমে চলাফেরার নতুন শক্তি ব্যবহার করে, তার নিজস্ব বৃদ্ধির জন্য আরও উপযুক্ত একটি মাইক্রোক্লাইমেটে স্থানান্তর করতে চায়। যেখানে তার বৃদ্ধির জন্য সঠিক তাপমাত্রা, আলো এবং আর্দ্রতা রয়েছে।

এরপর মাছিটি যতক্ষণ না মরে গিয়ে ছত্রাকের খাওয়ার উপযোগী হচ্ছে, ততক্ষণ তারা একসঙ্গে চলতে থাকে। এরপর ছত্রাকটি তার 'ম্যাকাব্রে' চক্র পূর্ণ করার জন্য অন্য কোনো পোষকের শরীরে স্থান নিতে মৃত মাছির শরীর ফুড়ে বেরিয়ে আসে।'

প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের নাম ঘোণলার সময় গার্সিয়া-রোয়া জানান, 'এটি হাজার বছরের বিবর্তনের মাধ্যমে বিজয়ের একটি রূপ'

ছত্রাক বিশেষজ্ঞ চ্যারিসা ডি বেকার বলেন, 'আমার নিজের ল্যাবসহ বিভিন্ন জায়গায় ছত্রাকের এই মন নিয়ন্ত্রণের আণবিক দিকগুলোর বিষয়ে গবেষণা চলছে।' 

তিনি আরও বলেন, 'এই ছত্রাকগুলোর অনেক ধরনের বায়োঅ্যাকটিভ রাসায়নিক রয়েছে, যা আমরা এখনো চিহ্নিত করতে পারিনি এবং এগুলোতে নতুন ধরনের ওষুধ ও কীটপতঙ্গ নিয়ন্ত্রণের উপায় থাকতে পারে'

 

তথ্যসূত্র: সায়েন্স নিউজ

অনুবাদ করেছেন আহমেদ বিন কাদের অনি

 

Comments