চাকরি প্রার্থীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ: একই দিনে ১৫ প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা

পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে চাকরিপ্রার্থীরা। ফাইল ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

কোনো ধরনের সমন্বয় ছাড়াই একই দিনে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ইনস্টিটিউট, অধিদপ্তর ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষার সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন লাখ লাখ চাকরিপ্রার্থী।

আগামী ২১ অক্টোবর শুক্রবার ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে এসব পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় ১০ লাখ চাকরিপ্রার্থী এদিন ১৫টি প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষায় অংশ নেবেন।

এগুলোর মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের ইউনিয়ন সমাজকর্মী পদে সবচেয়ে বেশি ৬ লাখ ৬২ হাজার ২৭০ জন আবেদনকারী আছেন। আবেদনকারীদের নিজ জেলায় সকাল ১০টা থেকে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে।

এ ছাড়া একই দিনে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর; বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড; ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআউডব্লিউটিএ); চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ; বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স; হিসাব মহানিয়ন্ত্রকের কার্যালয়; বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড (বিডিসিসিএল); বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা); বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট; কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট ট্রেনিং একাডেমি; প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট; প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেডের বিভিন্ন পদে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।

চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকের একই দিনে ২ থেকে ৫টি পর্যন্ত পরীক্ষার তারিখ পড়েছে। এরমধ্যে একটা হয়তো ঢাকায়, অন্যটা নিজ জেলায়। এক্ষেত্রে একটার বেশি পরীক্ষা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব না।

এ বিষয়ে টঙ্গী সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষার্থী রাসেল শেখ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একই দিনে আমার ৫টা পরীক্ষা হবে। সকাল-বিকেল মিলিয়ে সর্বোচ্চ ২টি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব।'

রাসেল আরও বলেন, 'প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও বেপজা একই দিনে আবার একাধিক পদে পরীক্ষা নিচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান একই দিনে একাধিক পরীক্ষা নিলে আগে থেকে জানাতে পারত। তাহলে সবগুলোতে আবেদন করে টাকা নষ্ট করতাম না।'

এই চাকরিপ্রার্থীর ভাষ্য, 'একদিনে অনেকগুলো পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে আমরা যেমন আবেদন করেও পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ হারাচ্ছি, তেমনি যারা এখনও শিক্ষার্থী; টাকা-পয়সার টানাটানি আছে; তাদের প্রতি এটা আরও অবিচার।'

আরেক চাকরিপ্রার্থী ফারজানা ইসলাম তার ভোগান্তির চিত্র তুলে ধরে বলে, 'শুক্রবার সমাজসেবা অধিদপ্তর ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে দুটো পরীক্ষা হবে। এরমধ্যে একটি আমার নিজ জেলা নরসিংদীতে, অন্যটি ঢাকায় হবে। তাই চাইলেও আমি কোনোভাবেই একটার বেশি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারব না।'

এ ব্যাপারে চাকরীপ্রার্থীদের প্ল্যাটফর্ম 'চাকরিপ্রত্যাশী যুব প্রজন্ম'র সমন্বয়ক সাজিদ সেতুর বক্তব্য, 'একজন প্রার্থী যখন টাকা খরচ করে পরীক্ষার জন্য আবেদন করছেন, তখন তার পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার অধিকার রয়েছে। তাদের কাছে থেকে আবেদন ফি নেওয়া হচ্ছে, আবার সমন্বয়হীনভাবে একই দিনে একাধিক পরীক্ষা নিয়ে তাদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। যেভাবেই হোক না কেন- এটি এক ধরনের প্রতারণা।'

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন দেশের বেশিরভাগ নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ ছিল। এরপর চলতি বছরের শুরু থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পরীক্ষা শুরু হলেও মাঝেমধ্যেই একই দিনে একাধিক প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা হওয়ায় আবেদন করেও অনেক প্রার্থী তাতে অংশ নিতে পারেননি।

এর আগে গত বছরের অক্টোবর মাসেও একই দিনে ১৫ থেকে ১৬টি করে চাকরির পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। তখন প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, মহামারির কারণে নিয়োগ পরীক্ষা বন্ধ ছিল। বিধি-নিষেধ উঠে যাওয়ায় সব প্রতিষ্ঠান জমে থাকা পরীক্ষাগুলো নেওয়া শুরু করেছে। তাই একইসঙ্গে এতগুলো পরীক্ষার তারিখ পড়েছে।

আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআউডব্লিউটিএ) নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেবেন ৪ হাজার ৭৩৭ জন।

একই দিনে এতগুলো প্রতিষ্ঠানের চাকরির পরীক্ষা না নিয়ে নিজেদের মধ্যে সমন্বয় একাধিক দিনে পরীক্ষাগুলো নেওয়া সম্ভব ছিল কি না জানতে চাইলে বিআউডব্লিউটিএ'র চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পৃথক অর্গানাইজেশনগুলোর তো আর কোনো কো-অর্ডিনেশনের মাধ্যমে পরীক্ষা হয় না। সবার সঙ্গে কো-অর্ডিনেশন করতে গেলে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষাগুলো নিতে হবে। এতে আরও বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে। কোভিডের কারণে অনেক নিয়োগ প্রক্রিয়া পিছিয়ে গেছে, যার কারণে খুব তাড়াতাড়ি অল্প সময়ের মধ্যে সব করতে হচ্ছে।'

চাকরির পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়ের সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আপাতত সমন্বয়ের সুযোগ নেই। এগুলো সব সায়ত্ত্বশাসিত সংস্থা এবং যখন যে পদ শূন্য হচ্ছে তখন তারা পরীক্ষা নিয়ে নিয়োগ দিচ্ছে। একশর বেশি সংস্থা আছে। তাদের মধ্যে কি সমন্বয় করা সম্ভব। তারপরও আমি চেষ্টা করে দেখবো, মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব।'

বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয় করে ভিন্ন ভিন্ন দিনে পরীক্ষাগুলো নেওয়া সম্ভব ছিল কি না জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, '৯৭টি কেন্দ্রে আমাদের পরীক্ষার অনুষ্ঠিত হবে। প্রায় ৩ মাস আগে এর তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। এর পরে কারা কারা পরীক্ষাসূচি নির্ধারণ করেছে সেটা তো আমরা জানি না।'

চাকরিপ্রার্থীরা যাতে আবেদন করেও পরীক্ষা দেওয়া থেকে বঞ্চিত না হয় তার জন্য কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব কি না জানতে চাইলে বেনজীর আলম বলেন, 'কেন্দ্রীয়ভাবে যদি এমন সিস্টেম থাকত যে কোনো একটা পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ হওয়ার পর ওইদিন আর কোনো পরীক্ষা নেওয়া যাবে না, তাহলে এই সমস্যা হতো না। এ ব্যবস্থা নেই, কেউ করেও না। আমার মনে হয় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। পরীক্ষা নেওয়ার আগে জনপ্রসাশন মন্ত্রণালয়কে ডেট জানিয়ে তাদের অনুমোদন নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হলে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।'

একই দিনে একাধিক পরীক্ষার বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও পরিকল্পনা) যুগ্ম সচিব মো. জাফর আলমের ভাষ্য, 'আমাদের সঙ্গে এ ধরনের সমস্যা কম হয়। আমরা বেশিরভাগ সময় ওয়ার্কিং ডে-তে পরীক্ষা নেই। পাবলিক সার্ভিস কমিশন বা এ রকম কোনো সংস্থাকে দিয়ে যদি কেন্দ্রীয়ভাবে এ ধরনের পরীক্ষা নেওয়া হতো তাহলে তারা সমন্বয় করে দিতে পারত। সেটা খুব ভালো একটা উদ্যোগ হতো।'

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

2h ago