ঢাকার ২১ এলাকায় ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং

প্রতীকী ছবি

শ্যামপুর, নন্দলালপুর, কাজলা ও মাতুয়াইলসহ রাজধানীর ২১ প্রান্তিক এলাকায় গতকাল প্রতি ১ ঘণ্টা পরপরই লোডশেডিং হয়েছে।

প্রতি মুহূর্তেই এ অঞ্চলের অন্তত ১টি পাড়া অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। দেখা গেছে, এক এলাকায় বিদ্যুৎ থাকলে অন্য এলাকায় নেই। আবার সেই অন্য এলাকায় এলে আগের এলাকায় লোডশেডিং।

গতকাল রাত ১২টার দিকে ঘুমাতে গিয়ে সকাল ৮টা পর্যন্ত সেসব এলাকার মানুষকে ৪ ঘণ্টার লোডশেডিং সহ্য করতে হয়েছে।

শ্যামপুরের নেটওয়ার্ক অপারেশনস অ্যান্ড কাস্টমার সার্ভিসেস অফিসের প্রকৌশলীরা জানান, এ এলাকায় অনেক কল-কারখানা আছে এবং গতকাল সেগুলোতে ছুটি ছিল। যেহেতু কল-কারখানা বন্ধ ছিল, তাই এই অঞ্চলটিতে বিদ্যুৎ বিতরণে গতকাল অগ্রাধিকার দেওয়া হয়নি।

তবে, শ্যামপুরে কারখানা ও বাড়িঘর রয়েছে, যা ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) আওতাধীন।

শ্যামপুরের আলমবাগের কাপড় ব্যবসায়ী ও দোকান মালিক রাজু আহমেদ জানান, রাতে একটি রিচার্জেবল ফ্যান দিয়ে তার পরিবার সবাই মিলে এক রুমে ঘুমাতে হচ্ছে।

'আমার মেয়ের ২ বছরের একটি সন্তান রয়েছে। সে সারা রাত জেগে থাকে তার সন্তানকে হাতপাখা দিয়ে বাতাস করে', বলেন তিনি।

গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানান, সকাল থেকে তখন পর্যন্ত ৬ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে।

এমন সময় এসে এসব এলাকার বাসিন্দাদের এ ধরনের লোডশেডিং পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে যখন দিনে তাপমাত্রা ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত হয়।

'এতে আমাদের ব্যবসাও ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যুৎ না থাকলে গ্রাহকরা বাজারে কেনাকাটা করতে আসেন না এবং রাত ৮টার মধ্যে আমাদের দোকান বন্ধ করে দিতে হয়', বলেন রাজু।

ঢাকা বিভাগের বিদ্যুতের স্বাভাবিক চাহিদা আনুমানিক ৪ হাজার ৪১৯ মেগাওয়াট। শিডিউল অনুযায়ী চাহিদার চেয়ে ১১ শতাংশ কম বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা ছিল এবং সেই ঘাটতি শহরগুলোর মধ্যে ভাগ করার কথা ছিল। শিডিউল অনুযায়ী এসব এলাকায় দিনে ৪ ঘণ্টা করে লোডশেডিং হওয়ার কথা। তবে, এখন রাতেও দীর্ঘ সময় লোডশেডিং হচ্ছে।

রাতের বেশিরভাগ লোডশেডিংই অনির্ধারিত। বিদ্যুৎ সরবরাহকারীরাও সতর্ক করে বলেছেন যে, প্রয়োজনে মধ্যরাতের পরেও লোডশেডিং হতে পারে।

এই সপ্তাহের সময়সূচিতে বলা হয়েছে, গত সপ্তাহের তুলনায় কমপক্ষে ১ বা ২ ঘণ্টা বেশি লোডশেডিং হবে।

কিছু কিছু এলাকায় লোডশেডিং বেশি হচ্ছে। যেমন: জুরাইনের চেয়ে বেশি লোডশেডিং হচ্ছে শ্যামপুরে।

ডিপিডিসির আওতাধীন এলাকার গতকালের লোডশেডিং সময়সূচি অনুযায়ী, জুরাইন ও পোস্তগোলায় অন্তত ৬ ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের শিডিউল করা ছিল এবং রাত ২টার পর গিয়ে স্থানীয়রা এর থেকে মুক্তি পান।

পুরো লালবাগে গতকাল ৫ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে, যার মধ্যে রাতেও ২ বার লোডশেডিং হয়। শিডিউল অনুযায়ী, রাতে মাত্র ৪ ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা রয়েছে।

ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেডের (ডেসকো) আওতাধীন বেশিরভাগ এলাকায় অন্তত ৫ ঘণ্টা লোডশেডিং হয়েছে।

ডেসকোর শিডিউল অনুযায়ী, সকাল ৯টা থেকে রাত ১২টার মধ্যে লোডশেডিং হওয়ার কথা থাকলেও মধ্যরাত পর্যন্ত অন্তত একবার সেখানে লোডশেডিং হয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।

মিরপুরের কিছু এলাকায় ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হয়েছে।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বিকাশ দেওয়ান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা (গ্রাহকদের বিদ্যুৎ দিতে) ব্যর্থ হয়েছি। আমরা এমন এক দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে আছি যেখানে চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ পাচ্ছি না।'

'গত কয়েক দিন ধরে আমরা বরাদ্দের চেয়ে কম বিদ্যুৎ পাচ্ছি। ঢাকায় ৫০০ থেকে ৫৫০ মেগাওয়াটের ঘাটতি অনেক বেশি। দিনে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং করা ছাড়া আমাদের আর কিছু করার নেই', বলেন তিনি।

ডেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. কাউসার আমির আলী গতকাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গত সপ্তাহ থেকে আমাদের প্রায় ৩০০ মেগাওয়াট ঘাটতি রয়েছে। কিন্তু আজকের (গতকালের) পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত ভালো। কারণ এখন আমাদের ১৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি রয়েছে।'

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মুখপাত্র শামীম হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়লেও চাহিদাও বাড়ছে।'

'যদি আধা ঘণ্টাও বৃষ্টি হয়, তাহলে চাহিদা ও সরবরাহের পার্থক্যের নাটকীয় পরিবর্তন দেখতে পাবেন। আমরা আশা করেছিলাম যে এ মাসে তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। কিন্তু তা হয়নি', যোগ করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Yunus meets Chinese ambassador to review China visit, outline next steps

Both sides expressed a shared commitment to transforming discussions into actionable projects across a range of sectors

4h ago